আপনি মুসলমান কিনা সেটা যাচাই করার জন্য আমার ব্যাক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু লক্ষন পর্যালোচনা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনি মুসলমান কিনা।
কখন বুঝবেন আপনি একজন মুসলমান?
১) যখন শারলি হেব্দো মোহাম্মদের ছবি আকার ফলে আপনার রক্ত গরম হয়ে যায়, কার্টুনিস্টদের খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করে, কিন্তু উইকিপিডিয়ায় মোহাম্মদের ছবি থাকার পরেও আপনি স্বচ্ছন্দে উইকিপিডিয়া ব্যবহার করেই যান।
২) যখন ইহুদী মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুকে ইহুদী নাসারাদের বিরুদ্ধে গ্রুপ/ইভেন্ট খোলেন, বজ্রহুঙ্কারে পোস্ট দেন, ইহুদী নাসারাদের ঘৃণা করার পরেও ইহুদী নাসারাদের সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, সুই থেকে মোবাইল ফোন পর্যন্ত। ( বিঃদ্রঃ একজন মুমিন দাবী করেছেন, মার্ক জুকারবার্গ নাকি ফেসবুকের কোড কুরআন থেকে চুরি করেছে, তাই ফেসবুক ইউস করা জায়েজ, বলেন সুভানাল্লা!)
৩) যখন তর্কে জেতার জন্য হাদিসের শরনাপন্ন হন, আবার বাঁশ খেয়ে সকল হাদিসকে অস্বীকার করে কুরানেই ব্যাক করেন।
৪) যখন মায়ানমারের মুসলিমদের প্রতি আপনার দরদ উথলায়া ওঠে, ফেসবুকে কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেন কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে লাখ লাখ মুসলমান মরতে থাকলেও আপনি দেখেও না দেখার ভান করেন অথবা এখানেও ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র খোঁজেন।
৫) যখন ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ কটাক্ষ করলে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করেন, ইসলামের জন্য জীবন দিয়ে দিবেন... হ্যান করুঙ্গা ত্যান করুঙ্গা... কিন্তু ফজরের নামাজে মসজিদ খালি থাকে।
৬) যখন আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন না ঠিকই কিন্তু জুম্মার নামাজ ক্বাযা হয়না।
৭) যখন হিন্দুদের পাঁঠাবলিকে পশু নির্যাতন দাবী করে পশুবলি বন্ধের দাবী জানালেও কিন্তু লাখ লাখ পশু কুরবানী বন্ধের কথা বললেই ম্যাতকার করে ওঠেন '' ইসলামোফোবিয়া''।
৮) যখন নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন কিন্তু তাদের ব্লগে মুমিন মুসলমানদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি থাকে।
৯) যখন বিভিন্ন পর্ণস্টার, চটি পেইজে আপনার লাইক দেওয়া থাকে কিন্তু ফেসবুকের সমস্ত বিষয়কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার চেষ্টা করেন এবং কমেন্টে হাদিস কুরআনের রেফারেন্স দেন। তবে অর্ধনগ্ন মেয়েদের ফেসবুক লাইভে আপনার উপস্থিতি লক্ষনীয়।
১০) যখন বলেন আইসিস ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে, সুরা মায়েদার ৩২ নাম্বার আয়াতের রেফারেন্স দেন '' যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে হত্যা করল, যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করল '' ।যদিও এখানে আপনি কন্টেক্সট খুঁজতে যান না। বনী ইসরাইলকে উদ্দেশ্য করে বলা আয়াতটি দিয়ে সকল মানবহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেন কিন্তু সৌদি আরব যখন ইসলামী কায়দায় কোন ইনভেস্টিগেশন না করেই চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে মানুষের গলা কেটে ফেলে, তখন আপনি মুখে তালা লাগিয়ে বসে থাকেন। যখন চারজন সাক্ষীর অভাবে ধর্ষিতা নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়, আপনি তখন ওই নারীর পোষাকের ত্রুটি খুজে বের করেন।
১১) যখন আপনি নিজে অনেকগুলি প্রেম করলেও (ফোনসেক্স সহ) যখন কোন ইসলামিক দেশে প্রেমের দায়ে কাউকে গ্রেফতার করা হয় আপনি হাততালি দিয়ে ওঠেন এবং মনে মনে বলেন '' যাক, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে''।
১২) যখন আপনি মদ না খেলেও (মদ যে হারাম এটা কুরআনে কোথাও লেখা নেই) নিয়মিত সিগারেট পান করেন। কিন্তু কুরানের দৃষ্টিতে ধূমপান হারাম হওয়া সত্ত্বেও খুব একটা মাথা ঘামান না অথবা কুরআনে সিগারেটের কথা লেখা নেই এইসব বলে পার পেয়ে যাবার চেষ্টা করেন। যদিও কুরআনের দৃষ্টিতে ধূমপান ১০০% হারাম। (সুত্রঃ সুরা আল বাকারাহ, আয়াত-১৯৫, সুরা আল মায়িদাহ, আয়াত- ৯০)।
১৩) যখন সারাদিন সকল হারাম কাজ ( টিভি দেখা, গান শোনা, মিথ্যা বলা, মদ খাওয়া, সিগারেট খাওয়া, খেলাধুলা করা, বেপর্দা নারীদের সাথে মেলামেশা ইত্যাদি) করা্র পরেও মাংসের দোকানে দিয়ে হালাল মাংস খোজেন অথবা রেস্টুরেন্টে খাবার আগে জিজ্ঞেস করে নেন, ''মাংসটা হালাল তো?''
১৪) যখন আপনার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে, রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ ঘুমায়, আর আপনি চিপস খেতে খেতে ইউটিউবে জাকির নায়েকের ইসলামী ভিডিও দেখে ইসলামী মুল্যবোধে জাগ্রত হওয়ার শপথ নেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে যেই লাউ সেই কদু।
১৫) যখন চাকরিজীবনে ঘুষের টাকায় গাড়ী বাড়ী করে সন্তানদের বিদেশ পাঠিয়ে শেষ বয়সে হজে গিয়ে সকল পাপ ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
১৬) যখন আপনি হিন্দুদের ধার্মিক রীতিনীতি নিয়ে হাসিঠাট্টা করলেও যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লাখ লাখ পশু জবাই করেন, আহামক্কের মত আয় বিবর্জিত মরুভুমির আয়ের উৎস হিসেবে হজে গিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন, একটি খাম্বাকে শয়তান মনে করে পাথর ছুড়ে মারতে থাকেন, সাফা মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন অথবা ঘানির বলদের মত কাবাকে ঘিরে চক্কর দিতে থাকেন।
১৭) যখন আপনি সকল বিচারের ভার পরকালে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন কিন্তু ঠিকই কুরআন,হাদিস, শরিয়া আইন অনুযায়ী নিজেই বিচার শুরু করেন এবং শাস্তি দেন।
১৮) যখন আপনি একজন সহিহ মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু পৃথিবীর নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পরে ঠিকই ছবি তোলেন, ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন, ইনকাম হারাম হয়, বেগানা নারীদের সাথে ওঠাবসা করতে হয়, সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠাতে মন চায়না, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ান। যখন আপনার জন্য কুরআন হাদিস ফলো করা অসম্ভব হয়ে পরে, তখন নিজেই ইসলামকে মডিফাই করার চেষ্টা করেন।
যদি আপনি এই লক্ষণগুলির একটিরও অন্তর্গত হন, আপনি একজন মুসলমান। যদি কোন লক্ষন বাদ গিয়ে থাকে, নিজ গুনে এখানে সংযুক্ত করে নিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:২৩