somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুঁথি- ৫

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সানভী জানে মৌমিতার ব্যপারটা জানিনা আমি। সানভী আরও জানেনা যে সে যে আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি শুধুই জিদের বশেই এবং মৌমিতার সাথে টেক্কা দিতেই একদিনের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেছিলো আমাকে আমি সে কথাটাও বহু আগেই জেনেছি। আসলে আমি সবই জানি, মানে জেনেছি। সানভী জানেনা জিদ কাকে বলে এবং জিদের পরিনাম কি হয়। স্বার্থপর হতে হতে আর শুধুই নিজেরটুকুই ভাবতে ভাবতে সানভী আজ অন্ধ হয়ে গেছে। অন্যেরাও যে কিছু ভাবতে পারে বা অন্যের চোখও যে খোলা থাকতে পারে সেটা ভাববার বুদ্ধি তার বুঝি নষ্ট হতে চলেছে। বিশেষ করে আমার ব্যপারে সে বড় ভুল জানে। আমাকে সে বড়ই বোকা আর জেদী ভাবে।

আসলেই আমি আমার জীবনে বহু বহু বার বোকার মত কাজই করেছি। সেই অনেকগুলো বোকামীর মাঝেই শ্রেষ্ঠ বোকামীটাই আমার সানভীকে বিয়ে করা। আসলে আমি বড় বেশি ওভার কনফিডেন্ট হয়ে পড়েছিলাম বোধ হয়। ধরেই নিয়েছিলাম ভালোবাসা, মমত্ব ও সাথে থাকা দিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতাই জয় করা যায়। কিন্তু সেটা ভুল ছিলো। সানভী হয়ত আমাকে ভালোবাসেনি কিন্তু আমি সানভীকে ঠিকই ভালোবেসেছিলাম। সেই ভালোবাসাটা অবশ্য দিনে দিনে ওর দূর্ব্যবহারের সাথে সাথে বিনষ্ট এবং নিঃশ্বেষ হতে বসেছে। মানুষ বলে ভালোবাসা নাকি মরে না। কিন্তু আমার ধারনা ভালোবাসার মৃত্যু হয়। আর আমাদের ভালোবাসাটা মানে আমার ভালোবাসাটাও এক তরফা হলেও এখন সেটা মৃত্যু পথযাত্রী বা আজ সেটা মূমূর্ষ।

বিচের কাছেই সুদৃশ্য এক মোটেলে উঠেছি আমরা। সানভীর এই জিনিসটা বোধ হয় স্বভাবজাঁত। সব কিছুতেই সুরুচির ছোয়া। এই যে আসবার আগে এক গাঁদা হোটেল মোটেলের ছবি ঘেটে ঘুটে খুঁজে খুঁজে বের করা মনোরোম এই মোটেল। চারিদিকে কি এক প্রশান্তির পারিপাট্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যেন এই মোটেলের ইট কাঁঠ পাথর ভেদ করে ঢুকে পড়েছে। এই মোটেলের ডিজাইনারকেও সানভীর রুচির সাথে সাথে প্রশংসা করা উচিৎ। চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় এত সুন্দর এই পৃথিবীতে এক টুকরো মর্ত্যের স্বর্গ যেন। এখানে থাকলে মনে হবে কোথাও কোনো দুঃখ নেই, নেই বেদনা, ক্রোধ, ক্ষোভ, হতাশা বা কষ্ট।

রোজ আমরা বের হই। পায়ে হেঁটে লোকজন দেখি, স্ট্রিট ফুড খাই। কখনও কখনও বিচে বসে থাকি। সানভী আজকাল তেমন কথা বলে না। চুপচাপ পাশে বসে থাকে। কি যেন ভাবে সারাটাক্ষন। আমার ভীষন মায়া হয়। ফের ভালোবাসতে ইচ্ছে করে ওকে। কিন্তু আমি জানি এই ইচ্ছা বৃথা। এই ইচ্ছার ফল কখনও ভালো হবে না। এই এক মাসের সানভী কখনই সারাজীবনের সানভী নয়। আমি খুব ভালো করেই জানি এ ওর এক চাল। হ্যাঁ কঠিন চাল। যেই চালের জালে ধরা পড়েছে ওর চারপাশের আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে নিজ পরিবারের মা বোন বাবাও। আসলে সানভীর কোনো সংসারের প্রয়োজন নেই। হয়ত সমাজেরও প্রয়োজন নেই ওর। ওর মত মানুষের জন্মই হয়েছে একাকী বাস করবার জন্য।

আমাদের এক মাস ফুরোতে আর মাত্র ৪ দিন বাকী। ৪ দিন পর আমরা ফিরে যাবো যার যার পথে। জানিনা সানভীর কি উদ্দেশ্য ছিলো এই একটা মাস সময় চাইবার। তবুও এই একটা মাসের স্মৃতি নিয়েই আমাদের হয়ত কেটে যাবে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত। এই একটা মাসে সানভী একটাবারের জন্যও কোনো দূর্ব্যবহার করেনি। তবে হ্যাঁ ওর নিজের মত থাকাতেও আমি কোনো বাঁধা দেইনি। রোজ রাতে ওর ড্রাগ এডিকশনের এফেক্ট বা ঘুম ভেঙ্গে উঠবার পরের কয়েক ঘন্টা আমি ওকে কোনো রকম বিরক্ত করিনি। গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে সে নর্মাল আচরণ করেছে। আমরা টই টই ঘুরেছি বহুখানেই। পথের ধারে বসে থেকেছি। দেখেছি সুখী, দুঃখী বা নানা চেহাারার পথচারী । আমরা একটাবারও বলিনি, যা হয়েছে হয়েছে চলো আর একটা বার ট্রাই করি বা সানভীও বলেনি আর একটাবার সুযোগ দেবার কথা।
এই একটা মাস খুব সুখী সুন্দর আর নিরুপদ্রপেই কেটে গেলো।


সানভী তার কথা রেখেছে। সেই একটা মাস এরপর আমরা আর কখনও কারো সামনে দাঁড়াইনি কোনো রকম দাবী বা অনুরোধ নিয়েই।
দেশে ফিরে এয়ারর্পোর্ট থেকেই বিদায় নিয়েছি আমরা। সানভী খুব গম্ভীর ছিলো। আমি বুঝতে পারছিলাম ওর কষ্ট হচ্ছে। তবে এই কষ্টটা আমার জন্য ভালোবাসা থেকে হয়ত নয় বা বিদায় বেলার কষ্টও নয়। এ হয়ত ওর নিজের কাছে নিজের পরাজয়ের কষ্ট। সে যাই হোক আমার আর সেসব নিয়ে ভাবার সময় এবং প্রয়োজন কোনোটাই নেই।


তবে মৌমিতার সাথে আমার আজও মাঝে মাঝে কথা হয়। মৌমিতার সাথে এই পরিচয়ের ব্যপারটাও বেশ নাটকীয় ছিলো। বিয়ের পর পর সানভীর আলমারী গুছাতে গিয়ে সানভীর আলমারীতে পেয়েছিলাম একটি গল্পের বই। সানভী আবার গল্প উপন্যাসও পড়ে! এটা ভেবে বেশ অবাক হয়েছিলাম আমি। পাতা উল্টাতেই দেখেছিলাম সেখানে লেখা " সানভী, বলেছিলি তোর গল্প যেন কখনও কোথাও না লিখি তাই আমার নিজের গল্পই লিখে দিলাম তোকে.." মৌমিতা। সেই নাম আর বইটার ব্যাককভারে লেখিকার ছবি এই নিয়ে একটু গোয়েন্দাগিরি করে খুব সহজেই বের করে ফেলেছিলাম আমি এই মৌমিতাকে। নক করতে সাড়াও দিয়েছিলো মৌমিতা। সানভীর মতই আরেক অদ্ভুত চরিত্রের মেয়ে এই মৌমিতা। তবে তাকে আমারও বেশ ভালো লেগেছিলো। সে নিজে যদিও কখনই বলেনি সানভীর জন্য ওর বুকে জমে থাকা এ সাগর ভালোবাসার কথা তবুও আমি খুব ভালো করেই বুঝেছিলাম এই মেয়েটার ভালোবাসা উপেক্ষা করবার সাধ্য সানভীর কেনো ছিলোনা । ওকে প্রশ্ন করেছিলাম-
- সানভীর জন্য এই এক বুক ভালোবাসা নিয়ে ওকে বিয়ে করলে না কেনো মৌমিতা?
মৌমিতা হেসেছিলো। স্বভাবজাঁত হাসি। বলেছিলো-
- সব কেনোর আসলে উত্তর নেই। শুধু জানি এই স্বর্গীয় ভালোবাসায় যেন এক বিন্দু ঘৃনা কখনও না প্রবেশ করতে পারে সেটাই প্রাধন্য দিয়েছিলাম আমি।

মৌমিতা বুদ্ধিমতী। পেয়েও হারানোর কষ্ট থেকে না পেয়েই আজীবন ভালোবাসায় বেঁচে থাকাটাই যে ভালোবাসার বেঁচে থাকা তা সে বুঝেছে।
তবে আমার ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছে তাই এই গল্পে বাঁচিয়ে রাখলাম সেই মৃত ভালোবাসার গল্পটাকে।

শেষ একটা প্রশ্ন রেখে যাই-
এই গল্পের লেখিকা কে? যুঁথি নাকি মৌমিতা?

আরে চিন্তায় পড়লাম তো।
কে এই উত্তর বলে দেবে!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×