ক্রমশ-৩
আলোচনা:
৪) অনুবাদে অতিরিক্ত শব্দ সংযোজন ও টিকার বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিক ও বিভ্রান্তি কর।
সূরা বাকারার ৩০ নং আয়াত এভাবে অনুবাদ করা হয়েছে:
‘‘(৩০) (সে সময়কে স্মরণ কর) যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, ‘নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে নিজের খলিফা১ নিয়োগকারী’, তারা (সবিস্ময়ে) বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে সেখানে অরাজকতা সৃষ্টি২ ও রক্তপাত করতে থাকবে? যেক্ষেত্রে আমরা আপনার সপ্রসংশ মহিমা বর্ণনা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।’’’
আলোচনা:
1) পূর্বেই বলা হয়েছে এ অনুবাদে বিভক্তি ব্যবহারে ভুল করা হয়েছে। ‘প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন...’ এর স্থলে ‘প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন...’ হওয়া ব্যাকরণ সিদ্ধ ছিল।
2) জ্যোতি চিহ্ন ব্যবহারের ভুলের কথা এ আয়াত সম্পর্কে পূর্বেই বলা হয়েছে। ‘‘তিনি বললেন ‘নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না’’’ এর স্থলে ‘‘তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জানি, যা তোমরা জান না’’’ হলে বক্তব্য সঠিক হবে।
3) খলিফা শব্দের আগে ‘নিজের’ শব্দটি অতিরিক্ত যোগ করা হয়েছে। অথের্র পার্থক্য না হলেও বাহল্যতা দেখা দিয়েছে।
4) এখানে খলিফা শব্দের উপর ১নং টিকা চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। এ বাক্যে মহান আল্লাহপাক তার অভিপ্রায়ের কথা বলছেন। তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণের কথা বলছেন। তাই টিকায় আল্লাহর অভিপ্রায়ের গুরুত্ব, কীভাবে আল্লাহর অভিপ্রায় বাস্তবায়িত হয় সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া যেত। এ ভঙ্গিমায় আল্লাহর কথা বলার গুরুত্ব সম্পর্কে বলা যেত। খলিফা কাকে বলে বা আল্লাহর মনোনীত খলিফার মর্যাদা কেমন, কাজ কী, আল্লাহর প্রস্তাবে ফেরেশতাদের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হতে পারতো। তা না হয়ে হয়েছে মানুষ সৃষ্টি নিয়ে ‘তুরাব’, ‘ত্বীন’, ‘সালসাল’, ‘শুক্র’, এবং ‘ঘনীভূত রক্ত’ নিয়ে আলোচনা। এ শব্দগুলির কোনটি আল্লাহপাক এখানে ব্যবহার করেন নি। এখানে এ গুলির অবতারণা খুবই অপ্রাসঙ্গিক বা গৌণ। তাছাড়া টিকার বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক। আমরা সম্পূর্ণ টিকাটি এখানে তুলে ধরলাম। ‘‘১ মহান আল্লাহ মানব সৃষ্টির ক্রমপর্যায় এরূপে সম্পাদন করেছেন যে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পর তিনি মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত আযরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানের মিশ্রিত এক মুষ্টি মাটি আনালেন এবং তা পানিতে গুলে খামিরের জন্য এক পক্ষকাল রেখে দিলেন। যখন তাতে আঠালোভাব সৃষ্টি হল তখন তা দিয়ে পুত্তলি গঠন করলেন এবং সেটি শুষ্ক করার জন্য আবার এক পক্ষকাল রেখে দিলেন। এমতাবস্থায় তা থেকে শুষ্ক কাদায় আঘাত করার আওয়াজের মত খনখনে আওয়াজ বের হল। তখন এর মধ্যে ‘রূহ’ ফুঁকে দিয়ে ফেরেশতাদের সিজদা করার আদেশ দিলেন। অতঃপর কিছুদিন জান্নাতে রাখার পর পৃথিবীতে নিয়ে আসলেন এবং মাটি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন বস্ত্ত তাঁর খাদ্য করে দিলেন, যা পাকস্থলীতে গিয়ে বহু পরিবর্তনের পর শুক্রে পরিণত হল। পরে সেই শত্রু নারীর গর্ভে স্থানান্তরিত হয়ে ঘনীভূত রক্তে পরিণত হল। অতঃপর তা মাংসপিন্ডে রূপান্তর হল এবং এর থেকে মানুষ সৃষ্টি হল। একারণে আল্লাহ নিজ বক্তব্যে মানুষের স্বরূপকে কোথাও ‘তুরাব’ (শুষ্ক মাটি), কোথাও ‘ত্বীন’ (কাদামাটি), কোথাও ‘সালসাল’ (শুষ্ক কাদা), কোথাও ‘শুক্র’, কোথাও ‘ঘনীভূত রক্ত’ ইত্যাদি শব্দে প্রকাশ করেছেন। আর এ সবই স্ব স্ব স্থানে সঠিক।’’
(1) এ আয়াতে আল্লাহ পাক মানব সৃষ্টির ক্রমপর্যায় নিয়ে আলোচনা করেন নি। এ আলোচনা এবং টিকায় উল্লিখিত শব্দসমূহের তুলনামূলক আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক।
(2) আলোচনার ভাবধারায় বুঝা যাচ্ছে মহান আল্লাহ আদম (আ.)কে একাকী পৃথিবীতে নিয়ে আসলেন। আর তাঁর জন্যে মাটি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন বস্ত্ত খাদ্য করে দিলেন, যা পাকস্থলীতে গিয়ে বহু পরিবর্তনের পর শুক্রে পরিণত হল। আর ঐ শুক্র স্থাপনের জন্য নারী বা নারী গর্ভ কোথায় পেলেন তার বর্ণনা নেই।
(3) ‘...... পরে সেই শত্রু নারীর গর্ভে স্থানান্তরিত হয়ে.........’ বাক্যাংশে ‘শুক্র’ এর বানান ভুল করে ‘শত্রু’ লেখা হয়েছে।
(4) ‘.......... পরে সেই শত্রু নারীর গর্ভে স্থানান্তরিত হয়ে ঘনীভূত রক্তে পরিণত হল। অতঃপর তা মাংসপিন্ডে রূপান্তর হল এবং এর থেকে মানুষ সৃষ্টি হল।.....’ এখানে মনে হচ্ছে ঐ নারী মানুষ ছিলেন না। হযরত আদম (আ.)ও মানুষ ছিলেন না। এ ধরণের বক্তব্য আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। যারা অনুবাদ করেছেন বা তার প্রকাশনা করেছেন বা কোন কোন মুমীন ভাই আবেগে বা নিজ যোগ্যতায় এর অর্থ বা বক্তব্য হয়ত বুঝে নিবেন। কিন্তু অমুসলমান, নতুন মুসলমান বা শত্রু মুসলমান পাঠকের কাছে এ ধরণের বক্তব্য কী অর্থ বহন করবে? ইসলামের শত্রুরা তো একটা মওকা পেয়েই বসবে। সুতরাং এ ধরণের অপ্রাসঙ্গিক/অসম্পূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করা সমীচিন হয়নি।
(5) টিকার বক্তব্য সম্পাদকের হলে সম্পাদক মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর মহোদয় নিজেই ভুল করেছেন। আর টিকার বক্তব্য অনুবাদকের হলে সম্পাদক মহোদয় সম্পাদনা যথার্থ করতে ব্যর্থ হয়েছেন নিঃসন্দেহে।
আসছে ক্রমশ-৪
প্রকাশিত অনুবাদের শিরনাম: আল কুরআনুল কারীম
সংক্ষিপ্ত তাফসীর সহ বাংলা অনুবাদ
দু খন্ডে সমাপ্ত। প্রথম খন্ডে সূরা ফাতিহা থেকে সূরা কাহ্ফ পর্যন্ত। দ্বিতীয় খন্ডে সূরা মারইয়াম থেকে নাস পর্যন্ত।
মূল: মাওলানা ফরমান আলী সাহেব কর্তৃক উর্দু অনুবাদ
বাংলা অনুবাদ: মাওলানা শেখ ছাবের রেজা
সম্পাদনা ও পুনর্লিখন: মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: ঈমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে
নুরুস সাকালায়েন জনকল্যাণ সংস্থা
৫/১, গোলাম মোস্তফা লেইন, বেগম বাজার, ঢাকা
প্রকাশকাল: জমাদিউস সানী ১৪৩২
জুন ২০১১, আষাঢ় ১৪১৮
প্রাপ্তি স্থান: প্রযত্নে হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ রাশেদ হোসেন যায়দী
হোসেনী দালান, ঢাকা, বাংলাদেশ
মোবাইল নং ০০৮৮০২৭৩০০০২৬
মুদ্রণ: মাল্টি লিংক প্রিন্টার্স
৬৮, ফকিরাপুল, ইসলাম ভবন (২য় তলা)
ঢাকা-১০০০, ফোন: ৯৩৪৮০৪৭
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৩৪