somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"Undefined"

০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুরো ঘরের মাঝখানে একটা ৬০ পাওয়ারের বাল্ব জলছে।বাল্বের ওপর একটা ঢাকনা আছে যাতে করে আলোটা শুধু মাঝেই থাকে।আলোটার ঠিক নিচে একটা মেয়ে বসে আছে।ঘন কালো চুল গুলো মুখের সামনে থাকায় চেহারা দেখা যাচ্ছে না এখন।অবশ্য আমি জানি চুলগুলো সরালে একটা অনিন্দ্য সুন্দর মুখ বেরিয়ে আসবে। টোল পড়া গাল,জোড়া ভ্রু,টকটকে লাল ঠোটের নিচের তিল...মেয়েটার শরীরের কোথায় কি আছে সব মুখস্থ আমার।মেয়েটার সাথে আমার একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে।অনেক গভীর একটা সম্পর্ক।সুদীর্ঘ ৭ বছরের। হ্যা,এই মেয়েটা আমার সহধর্মীণী।

আমি বসে আছি ওর সোজাসোজি।অপেক্ষা করছি ওর জেগে ওঠার।হাতে রাখা সুপাড়ি কাটার নিয়ে নাড়াচাড়া করছি।ওর বেধে রাখা হাত দুটোর দিকে তাকালাম।রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে আগেই।একটা একটা করে নখ তুলেছি ওর।নখ তোলার সময় ওর কান ফাটানো চিৎকার আমার মনের মধ্যে কোন আলোড়নই তোলে নি।ঘড়ি ধরে ঠিক ১.৩০ মিনিট পর হেক্সাসল আর তুলো দিয়ে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি।আবার দশ মিনিট পর আরেকটা নখ তুলেছি।এভাবে হাতের সব নখই তুলে ফেলেছি সময় নিয়ে।কোনরকমের তাড়াহুড়া নেই আমার।

এই মেয়েটাকে আমি ভালোবাসতাম।হ্যা,অনেক ভালোবাসতাম।ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম।পরিবারের কেউ অমত করে নি।কত সুখের একটা সংসার ছিলো আমাদের।বছর খানেক পর ওর কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান আসলো।সেদিনের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।আজ আমি আমার সেই ভালোবাসার মানুষটাকে মারবো।তিল তিল করে মারবো।

আস্তে আস্তে টলে উঠলো ও।আমি ওর পুরোপুরি সজাগ হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম।চুলগুলো সরিয়ে দিলাম মুখের সামনে থেকে।চেহারাটা কেমন বিদঘুটে দেখাচ্ছে।কালসিটে দাগ বসে গেছে।ওর এই অবস্থা আমিই করেছি।

সজাগ হয়েই চমকে উঠলো ও।আমাকে দেখেই চমকেছে ও।ঝট করে একবার হাতের দিকে তাকালো সে।আমি ওর চোখের ভাষা পড়তে পারছি।ও অবাক হয়েছে আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ দেখে।মুচকি হাসলাম।

-আমাকে মাফ করে দাও শাওন।না বুঝে...

কথাটা শেষ করতে দিলাম না ওকে।কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলাম। মিথ্যা আমি সহ্য করতে পারি না।

-জয়া,তাকাও আমার দিকে।আমার চোখ বরাবর তাকাও।

জয়া আমার চোখ বরাবর তাকালো।থরথর করে কাপছে ও।

-বারবার মিথ্যে বলছো কেনো?আমি জানি সত্যিটা কি।কেনো করেছো কাজটা?
-আমি...আমি....আমি...
-হুম বলো জয়া।সত্যিটা বলো। আমি সত্যিটা তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
-আমি..আমি...ভুল করে ফেলেছি।আমাকে ক্ষমা করো শাওন।

মেয়েদের এই একটাই সমস্যা।ওরা দোষের কিছু করলে এভাবে ন্যাকা কাদুনির অভিনয় করে।যাতে মন গলে যায়।খুবই পুরোনো একটা ট্রিকস।ভেরি ব্যাড।

-ভুল তো তুমি করেছই।আমি তোমার মুখ থেকে কারণটা জানতে চাচ্ছি।জলদি বলো।
-টাকার লোভে।
-ভালোবাসার থেকে তোমার কাছে টাকাটা অনেক বড় তাই না জয়া?

জয়া কোন উত্তর দিলো না।আমিই বলতে শুরু করলাম।

-সোহেল তোমাকে কত টাকা দিয়েছিলো আমাকে মারার জন্য?মাত্র ৩ কোটি।সেই সাথে আরেকটা জিনিস দিয়েছিলো।বিয়ে করার আশ্বাস।পরে কি সে তোমাকে বিয়ে করেছিলো?করে নি।যেই মেয়ে ৭ বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে টাকার লোভে তাকে কে বিয়ে করবে?থাক সেসব কথা।তুমি নিশ্চই জানতে চাচ্ছো আমি এসব জানলাম কিভাবে?

জয়া কোন কথা বলছে না।আমি ওর কথার অপেক্ষায় না থেকে বলতে লাগলাম।

-সোহেলকে আমি ভার্সিটি লাইফ থেকেই চিনি।আমি যেমন তোমাকে পছন্দ করতাম সেও করতো।বাট তুমি আমার সাথেই রিলেশনে জড়ালে।সোহেল সেই হারের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলো।
তুমি ওর ফাদে পা দিলে কিভাবে জানো?একদিন ও আমাদের বাসায় এসেছিলো।আমি বাসায় ছিলাম না।তুমি হয়তো ভাবছো আমি জানলাম কিভাবে?বাড়ির মেইন গেটে একটা সিসি ক্যামেরা আছে। দাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কতক্ষণ ছিলো সোহেল।সোহেল প্রায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট ছিলো। এই সময়ের মাঝেই সে তোমাকে অচেতন করে ব্ল্যাকমেইল করে।আমাকে জানিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তোমাকে ও কাজটা করতে বাধ্য করে।ঠিক বলছি কি জয়া?

জয়া এখনো চুপ করেই আছে।

-তুমি আমাকে মারতে গিয়েও মারতে পারলে না।সায়েম দেখে ফেলেছিলো।তোমাকে বাধা দেয়ায় ওকে মেরে ফেললে তুমি।আমাকে আগেই ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলে তুমি।যার কারণে সায়েমের চিৎকার শুনতে পাই নি আমি।সায়েমকে মেরে ওর লাশ লুকাতে যেয়েই দেরি করে ফেললে তুমি।আমাকে আর মারতে পারলে না।লোভ তোমাকে এতোটাই আকড়ে ধরেছিলো যে তুমি নিজের ছেলেকে মারতেও দ্বিধাবোধ করো নি।
জয়া,তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?

ওর দিকে তাকালাম।কাদছে ও।আমার কোন মায়া জন্মাচ্ছে না ওর প্রতি।প্রবল ঘৃণা হচ্ছে।

-সায়েমকে খুজে না পাওয়ার অভিনয়টা বেশ ভালোই করেছিলে তুমি।হন্নে হয়ে খুজেছিলাম।তুমিও ছিলে আমার সাথে।খোজার অভিনয় করতে।
কি মনে হতে সোহেলের সাথে পরের দিনই দেখা করি।আলাদা রুমে কথা বলার ফাকে চড়াও হই ওর ওপর।মারের চোটে সব কথাই স্বীকার করে ও।ওকে কি করেছি জানো?মেরে টুকরো টুকরো করে বাড়ির কুত্তাটাকে দিয়ে খাইয়েছি ওর লাশ।কুকরটা বেশ আনন্দেই খেয়েছিলো তাজা মাংসগুলো।

আমি জানি জয়া এখন আর কোন কথা বলবে না।কিছু বলার নেইও ওর।টুলের ওপর রাখা হাতুড়িটা দিয়ে সজোড়ে বাড়ি মারলাম ওর মাথায়।গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো ও।একের পর এক হাতুড়ির বাড়ি দিতে লাগলাম।একসময় নিস্তেজ হয়ে এলো ওর শরীর।

মুখের মধ্যে রক্তের ছিটা লেগেছে বেশ।জিহবা দিয়ে ঠোটের চারপাশ বুলালাম।লবণাক্ত একটা স্বাদ আছে।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

ধরমর করে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম।এই নিয়ে ৭ দিন স্বপ্নটা দেখলাম। বাম দিকে তিনবার থুথু ছিটিয়ে বাথরুমে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য।ফজরের নামাযের আজান দিয়ে দিয়েছে এরই মধ্যে।ওযু করে নামায পড়ে নিলাম।

নাস্তা খাওয়ার সময় মা তাড়াতাড়ি রেডি হতে বললো।বাসায় ইদানিং আমার বিয়ে নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছে।

রেডি হয়ে মেয়ের বাসায় গেলাম।নাস্তা দিয়ে গেছে এরই মধ্যে।কিছুক্ষণ পর মেয়েকে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলো মেয়ের মা।

চমকে উঠলাম কিছুক্ষণের জন্য।যেই মেয়েকে দেখতে এসেছি তাকে দেখে নয়। মেয়ের সাথে আসা অনিন্দ্য সুন্দরী আরেকটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে।

যাকে দেখতে এসেছি তার ছোট বোন নয়তো????হলেও হতে পারে।

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×