somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন মৃণাল সেন

১৪ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম পুরুষের নাম মৃণাল সেন । আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ চলচ্চিত্রকার পাল্টে দিয়েছেন বাংলা সিনেমার ধারা। মৃণাল সেন ১৯২৩ সালে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের সময় তারা সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সরাসরি কখনও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হননি। চল্লিশের দশকে তিনি সমাজবাদী সংস্থা আইপিটিএ'র [ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন] সঙ্গে যুক্ত হন। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি সমভাবাপন্ন মানুষদের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি একজন সাংবাদিক, একজন ওষুধ বিপণনকারী এবং চলচ্চিত্রের শব্দ কলাকুশলী হিসেবে কাজ করেন।

১৯৫৫ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত প্রথম ছবি 'রাতভোর' মুক্তি পায়। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি। দ্বিতীয় ছবি 'নীল আকাশের নিচে' তাকে স্থানীয় পরিচিতি এনে দেয়। তৃতীয় ছবি 'বাইশে শ্রাবণ' দিয়ে তার জয়যাত্রা শুরু। এ ছবিটিই তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় 'ভুবন সোম'। এ ছবিটি কলকাতার বাংলা ছবিতে একটি মাইলফলক। বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন ধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মৃণাল সেন। এ ছবিতে অভিনয় করেন শক্তিমান অভিনেতা উৎপল দত্ত। মৃণাল সেন তার বিখ্যাত কলকাতা ট্রিলজি অর্থাৎ 'ইন্টারভিউ' [১৯৭১], 'ক্যালকাটা ৭১' [১৯৭২] এবং 'পদাতিক' [১৯৭৩] ছবি তিনটির মাধ্যমে তৎকালীন কলকাতার রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থির অবস্থাকে তুলে ধরেছিলেন। মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধকে মৃণাল সেন তুলে ধরেন তার বহুল প্রশংসিত দুটি ছবি 'একদিন প্রতিদিন' [১৯৭৯] এবং 'খারিজ'-এর [১৯৮২] মাধ্যমে। ১৯৮০ সালে তার 'আকালের সন্ধানে' মুক্তি পায় আর রাতারাতি হইচই ফেলে দেয়। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল ছবিটির মূল আলোচ্য বিষয়। মৃণাল সেনের পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ছবি 'মহাপৃথিবী' [১৯৯২] এবং 'অন্তরীণ' [১৯৯৪]। তার নির্মিত এখন পর্যন্ত শেষ চলচ্চিত্র 'আমার ভুবন' মুক্তি পায় ৯ বছর আগে ২০০২ সালে।

মৃণাল সেন পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো বিশ্বের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি পুরস্কারও জিতেছেন। ১৯৮১ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে 'আকালের সন্ধানে' চলচ্চিত্রটি বিশেষ জুরি পুরস্কার রৌপ্যভল্লুক জয় করে। ১৯৮৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে 'খারিজ' বিশেষ জুরি পুরস্কার পায়। ভারত এবং ভারতের বাইরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। তিনি একবার ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দি ফিল্মেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৮১ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‌'পদ্মভূষণ' লাভ করেন। ২০০৫ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার 'দাদাসাহেব ফালকে' পান। ১৯৯৮-২০০৩ সালে তিনি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন। মৃণাল সেনকে ফরাসি সরকার তাদের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান 'কমান্ডার অব দি আর্টস অ্যান্ড লেটারস'-এ ভূষিত করেন।

ভারতীয় চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের আত্মজীবনী বেরিয়েছে ২০০৪ সালের শেষভাগে। দিল্লির স্টেলার পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ৩১০ পৃষ্ঠার এ বইটির নাম 'অলওয়েজ বিয়িং বর্ন'।

আজ ১৪ মে এ মহান চলচ্চিত্রকারের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মৃণাল সেন।

(তথ্যসূত্র: ওয়েবসাইট এবং দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা)

(১২ মে ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×