somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোহসেন মাখমালবাফ: ‘ফিল্মমেকার উইদাউট বর্ডার’

২৯ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সংঘাতময় জীবনে নিতান্ত রুটির খোঁজে বেসামাল অবস্থায় থাকায় নিতে পারেননি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। শৈশবে ছুটা চাকর থেকে শুরু করে ফিল্মমেকার হওয়ার পথে কর্মক্ষেত্র বদলেছেন ১৩ বার । গুপ্ত রাজনীতি করে জেল খেটেছেন কৈশোর থেকে তারুণ্যে। তারপর বদলে ফেলেছেন পুরো জীবনদর্শন। তিনি ইরানের কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহসেন মাখমালবাফ।

মোহসেনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৯ মে, তেহরানে। বিয়ের মাত্র ছয়দিনের মাথায় মোহসেনের বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দারিদ্র কৈশোরেই তাকে দিয়েছিলো বিপ্লবের ডাক। চেয়েছিলেন ঘুণে ধরা সমাজটাকে বদলে দেবেন। কিংবদন্তী আর্জেন্টাইন বিপ্লবী চে গুয়েভারার আদর্শকে পুঁজি করে যোগ দিয়েছিলেন সশস্ত্র রাজনীতিতে। তারই অংশ হিসেবে মাত্র ১৭ বছর বয়সে অস্ত্র লুট করতে পুলিশকে ছুরি মেরে বসেন। ফলাফল হিসেবে ৫ বছরের জন্য নিক্ষেপিত হন কারাগারে। এ ঘটনাটাই পরে তাকে উজ্জীবিত করেছিলো ‘এ মোমেন্ট অব ইননোসেন্স’ (১৯৯৬) চলচ্চিত্রটি নির্মাণে।

কারাগারের জীবনই তার আদর্শকে আমূলে পাল্টে দেয়। স্বশিক্ষিত মোহসেন কারাগারে বসেই প্রচুর বই পড়ে ফেলেন। আর তখনই তিনি রাজনৈতিক বিপ্লবের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে পারেন। চে গুয়েভারার প্রতি শ্রদ্ধা সমান রেখেই মহাত্মা গান্ধীকে বানালেন নিজ জীবনের নতুন আদর্শ। তাই কারাবাস শেষে বেছে নেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথ। লেখালেখি দিয়ে তার বিপ্লবের শুরু। তারপর ফিল্ম বানানো।

মাখমালবাফ নির্মিত টাইম অফ লাভ (১৯৯০), দি নাইটস অফ জায়ান্দে-রুড (১৯৯১) সহ একাধিক ছবি বিভিন্ন মেয়াদে ইরান সরকার নিষিদ্ধ করেন। সেন্সরবোর্ডের রোষানল থেকে নিজের ফিল্মকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি ছেড়েছেন। ফিল্ম বানাতে চষে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর বহু দেশের অলিগলি আর রাজপথ। কিন্তু কোন শক্তিই তার বিপ্লবকে দমন করতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই লড়াকু মেজাজের মোহসেনকে পরাভূত করা যায়নি কিছুতেই।

মোহসেন মাখমালবাফের মতে হলিউড আর বলিউড হলো জানালার মত। অলস সময়ে যে জানালায় উঁকি দিয়ে মানুষ হয়তো অনত্র আনন্দ খুঁজছে আর তা দিয়ে কতিপয় ব্যক্তি অন্যত্র ব্যবসা করছে। মাখমালবাফ চলচ্চিত্র নির্মাণকে সবসময় আয়না মনে করেছেন জানালা নয়।

মোহসেন চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য পেয়েছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের সাইদিয়ান ডিয়ার (২০০৭), ইউনেস্কোর ফ্রেডেরিকো ফেলেনি গোল্ড মেডেল (২০০১) সহ অনেক পুরস্কার। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় সর্বকালের সেরা ১০০টি ফিল্মের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে মোহসেন মাখমালবাফ নির্মিত ‘কান্দাহার’। এছাড়া তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো : বয়কট (১৯৮৫), দি স্ট্রিট ভেনডর (১৯৮৬), দি সাইক্লিস্ট (১৯৮৭), দি পেডলার (১৯৮৭), দি ম্যারিজ অব দ্য ব্লেসড (১৯৮৮), টাইম অফ লাভ (১৯৯০), দি নাইটস অফ জায়ান্দে-রুড (১৯৯১), ওয়ানস আপন এ টাইম সিনেমা (১৯৯২), দ্য অ্যাক্টর (১৯৯৩), সালাম সিনেমা (১৯৯৫), গাবেহ (১৯৯৬), সাইলেন্স (১৯৯৭) সেক্স এন্ড ফিলোসফি (২০০৫), স্ক্রিম অব দ্য এন্টস (২০০৬)।

‘ফিল্মমেকার উইদাউট বর্ডার’ এর স্বপ্নদ্রষ্টা মোহসেন মাখমালবাফ নিজের তৈরি ফিল্ম স্কুলে তরুণ নির্মাতাদের দিচ্ছেন ফিল্মের দীক্ষা। তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের প্রত্যেকেই নির্মাতা হিসেবে বিশ্ব চলচ্চিত্রাঙ্গনে নিজেদের নাম সমৃদ্ধ করেছেন। আর দুই মেয়ে সামিরা মাখমালবাফ আর হানা মাখমালবাফা তো নাম লিখিয়ে ফেলেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তালিকায়।#

(তথ্যসূত্র: আইএমডিবি, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য ওয়েবসাইট, ফিল্মমেকারের ভাষা এবং দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা)
(২৬ মে ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫৯
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×