somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরূপ লাউয়াছড়া বনে

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অন্যতম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান । বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনাঞ্চলের (রেইন ফরেস্ট) মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাউয়াছড়া উদ্যানটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ১৯২৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার এখানে বৃক্ষায়ন শুরু করে। ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পেয়ে আজকের এই বনাঞ্চলে পরিণত হয়। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিলো এলাকাটি, সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। ১৯৯৬ সালে বনাঞ্চলের ১২৫০ হেক্টর এলাকাকে বাংলাদেশ সরকার 'জাতীয় উদ্যান' হিসাবে ঘোষণা করে।

এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হওয়াতে অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। বনের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাহাড়ী ছড়া বয়ে চলেছে। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী এ উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানী দেখা যায়। এ বনে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, বানর, শিয়াল, মেছোবাঘ, বন্য কুকুর, ভাল্লুক, মায়া হরিণ (বার্কিং ডিয়ার), অজগরসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। যদিও আমাদের ভাগ্যে বানর ছাড়া আর কিছূই দেখার সৌভাগ্য হয়নি। উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে সবুজ ঘুঘু, বনমোরগ, তুর্কি বাজ, সাদা ভ্রু সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো ফর্কটেইল. ধূসর সাত শৈলী, পেঁচা, ফিঙ্গে, লেজকাটা টিয়া, কালোবাজ, হীরামন, কালোমাথা বুলবুল, ধুমকল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ সুইচোরা, তোতা, ছোট ফিঙ্গে, সবুজ কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে।

১৯৯৭ সালের ১৪ জুন রাতে উদ্যানসংলগ্ন মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটার পর ভীষণ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় উদ্যানটি। বন বিভাগ সূত্রানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি অক্সিডেন্টাল খুঁড়তে খুঁড়তে কূপের ৮৫০ ফুট গভীরে পৌঁছালে হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয় এবং কূপে আগুন ধরে যায়। আগুনের তাপে ফুলবাড়ী চা-বাগানের একাংশ, মাগুরছড়া পানপুঞ্জি, ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়ক, ঢাকা-সিলেট রেলপথসহ আশপাশের এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ দুর্ঘটনায় লাউয়াছড়ার ৮৭.৫০ একর জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বনাঞ্চলে গহ্বর সৃষ্টি, ভূমিধস ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেগুনজাতীয় গাছ, বাঁশ, অন্যান্য প্রজাতির বৃক্ষ, লতা ও গুল্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্যানে থাকা পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, সাপ, গিরগিটি, তক্ষক, মায়ামৃগ, বন্যশূকর, উল্লুক ও অসংখ্য ছোট-বড় দুর্লভ প্রজাতির পাখি আগুনের তাপে মারা যায়। দুর্ঘটনার দীর্ঘ ১৪ বছর পরও উদ্যানটি তার হারানো প্রাণী ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য ফিরে পায়নি।

লাউয়াছড়া সম্পর্কে একটা মজার তথ্য পেলাম ব্লগার রাইসুল জুহালা ভাইয়ের কাছ থেকে। ১৯৫৬ সালে অস্কারপ্রাপ্ত ছবি অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ এর শ্যুটিং হয়েছিল এই বনে। ছবির ভারত অংশের সামান্য কিছু দৃশ্য এই বনে তোলা হয়েছিল। জানা মতে বাংলাদেশে হলিউডের কোন ছবির শুটিং হওয়ার এটাই প্রথম এবং একমাত্র ঘটনা।

এ প্রসঙ্গে ৯ অক্টোবর ২০১১ দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি লিংকসহ তুলে ধরা হলো-

জুলভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে করা 'অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ' ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। এটি পরিচালনা করেছেন মাইকেল অ্যান্ডারসন। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেভিড নিভেন, মারিও মেরিনো ও শার্লি ম্যাক্লেইন। আটটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে পাঁচটি অস্কার জেতে ছবিটি। সেসবের মধ্যে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কারও ছিল। ১৩টি দেশের ১১৪টি লোকেশনে চিত্রায়িত হয় ছবিটি। এসব দেশের মধ্যে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত, বাংলাদেশ. স্পেন, থাইল্যান্ড ও জাপান। আর বাংলাদেশের অংশের শুটিং হয়েছিল সিলেটের লাউয়াছড়া জঙ্গলে। ওই জঙ্গল ঘেঁষে যে রেলপথ চলে গেছে, ঠিক সেখানেই হয়েছে ছবিটির কিছু দৃশ্যের শুটিং। ছবিটির একটি দৃশ্য ছিল এ রকম_ট্রেন ছুটছে। হঠাৎ চালক খেয়াল করলেন, লাইনের সামনে একপাল হাতি আপনমনে চড়ে বেড়াচ্ছে। ট্রেন থেমে যায়। কামরা থেকে নেমে আসেন নায়ক ডেভিড নিভেন, ব্যাপারটা কী দেখতে। সামনের গ্রামেই তখন হচ্ছিল সতীদাহ। নায়ক ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে বাঁচান। মেয়েটি হলো শার্লি ম্যাক্লেইন। ছবির এই অংশটুকুই চিত্রায়িত হয়েছিল লাউয়াছড়ার রেললাইন এলাকায়।
সূত্র

লাউয়াছড়া প্রবেশমুখে












চাপালিশ গাছ


আফ্রিকান টিকওক গাছ


বনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি ছড়া














খাসিয়া পাড়া যাবার পথে


খাসিয়া পাড়া


খাসিয়া বাড়ি




খাসিয়া বালক (কোনভাবেই সে তার ছবি তুলতে দিবেনা। অনেক কৌশল করে বন্ধু সাকিব বালকের ছবি তুলতে সক্ষম হয়)


পান গাছ। খাসিয়াদের পান খুব বিখ্যাত


পানের বরাজ


(ছবিগুলো আমার এবং বন্ধু সাকিব এর ক্যামেরায় তোলা। তথ্যগুলো বিভিন্ন পত্রিকা ও ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)

***আমার যত ভ্রমণ ও ছবি ব্লগ ***
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৭
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×