বাতাসে পর্দাটা বারবার উড়ে আসছে। দক্ষিনের জানালার কাছে যেতেই চোখে পড়লো আকাশে কালো মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা বারবার বেরিয়ে আসছে। আকাশটা্ও বেশ ঝলমলে। যদিও আকাশে মেঘ আছে।
লাবন্যের আকাশটা যেন এমন মেঘের লুকোচুরিতে চাঁদের আলো আলো খেলা। জীবনের সপ্তডিঙ্গা পাড়ি দিয়ে আজ সে এক মস্তবড় মাস্তুলবাহী জাহাজের কেবিন বাসিন্দা। কিন্তু হৃদয়ে নেই উচ্ছাসের ঢেউ। আছে বিরহ কাতরতা। সোমালিয়ার বিমর্ষ কালো শিশুদের উপচানো আবেগ যেন তার চোখে মুখে। অথচ চাঁদের স্নিগ্ধতা আর লাবন্যের হাসির উষ্নতায় যেন হাসনাহেনার সুগন্ধ মৌ মৌ করতো আড্ডা আসরে।
তার এ কষ্টের তীব্রতা বাসা বাধে যখন তার মনে পড়ে তারুন্যের ঘোড় সওয়ারের মতো সা'দের সাথে মোটর বাইকে করে দাবড়ে বেড়ানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। আজ কোথায় সা'দ কোথায় লাবন্য।
শেষবার যখন সা'দ তাকে এসএম পাঠিয়ে বলেছিল,' লাবন্য একটাবার শুধু আমার জন্য একটু কথা বল। আমি আর পারছি না।' সেদিন লাবন্য একটি মিছে অভিনয় করেই এসএমএস দিয়ে বলেছিল, তোমার জীবনে হয়তো আমি খুব ক্ষুদ্র কিন্তু আমার জীবনে তুমি বট বৃক্ষ। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে আজ তোমাকে অনেক দূরে ঠেলেই আমাকে সামনে যেতে হচ্ছে। আমার জায়গাটি খুব ছোট এবং সেখানে অন্য কারো বাসা বাধার আর কোন সুযোগ এমুহুর্তে আমি দিতে পারছি না।'
সা'দের হৃদয় হাহাকার করা আবেগ লাবন্যকে শুধু চুপ করিয়ে রেখেছিল। পাষন্ডতা তাকে এতোটাই ভর করেছিল যে, সে শেষ পর্যন্ত সা'দকে বলেদিল এখন থেকে তার মোবাইলটিও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। অতএব যোগাযোগ বন্ধ।
লাবন্য ভালো করেই জানে, সা'দ কখনোই তার বাসায় এসে দরজায় কড়া নেড়ে তার ভালোবাসার অধিকার আদায়ে অনশন করবেনা। নীরব অশ্রুজলে হয়তো অভিশাপের ডায়রী রচনা করবে।
ছেলেটিকে প্রথম দেখাতেই বেশ ঈর্ষা করেছিল লাবন্য। এমন সুন্দর সুদর্শন ছেলে হয়তো অহরহ আছে। কিন্তু কাজ আর ব্যক্তিত্বের মাঝে যেন আদর্শ পুরুষের প্রতিকৃতি খুজে পাওয়া যায় তার মাঝে। তাই একদিন নয় দিনের পর দিন সা'দকে তার গতিরোধ করে থামিয়ে দিতো লাবন্য। আর সা'দ কখনোই বিশ্বাস করতো না এ মেয়েটি অনেক আবেদন ফেলে তার মত ছিমছাম একটি ছেলের জন্য সময় দিতে পারে।
একি তাকে অবাক করে দিয়ে একদিন বিকেলে সা'দকে বলেই বসলো লাবন্য, 'আমি তোমার ছেলের মা হতে চাই। তুমি কি আমার হাত টুকু ধরবে।
রোদের আকাশে বজ্রপাতের মতোই সা'দ তার দিকে অপলক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। নিজের হাতে চিমটি কেটে বিমুঢ়তা কাটিয়ে সে বললো আমি তোমার আবেগকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তুমি ভেবে নাও।
হঠাৎ বাতাসের বেগটা বেড়ে গেল। বাড়ান্দায় কি যেন শব্দ করে মাটিতে পড়লো। জানালায় দাড়িয়ে এতোক্ষন সে খেয়ালই করেনি। আকাশের চাঁদ হারিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে। দমকা হা্ওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেল। অদৃশ্যকে সামনে রেখে চোখ দুটি মুছে জানালা লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো লাবন্য।