somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংগ্রামের আরেক নাম আওয়ামী লীগ

২৩ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংগ্রামী রাজনৈতিক দল। বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্যই সংগ্রামী রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয়। প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকেই গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার রাজনৈতিক দলটির অসংখ্য নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সংগ্রামী ভূমিকায় ইতিহাসের বাকেঁ বাকেঁ একেঁছে রক্তাক্ত পদচিহ্ন। মহান দেশপ্রেম ও মানুষের কল্যাণে সংগ্রামী দলটির আদর্শবান কর্মীরাই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিশ্বে পরিচিত। ১৯৭১ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এই সংগঠনটির নামাকরণ হয় 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'।
মূলনীতি: বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং সমাজতন্ত্র তথা শোষণমুক্ত সমাজ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মূলনীতি।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ক. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংহত করা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সমুন্নত রাখা। খ. প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করা। গ. রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি এবং কল্যাণ নিশ্চিত করা। ঘ. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা।
পররাষ্ট্রনীতি:সকলের সাথে বন্ধুত্ব। কারও প্রভুত্ব নয়, কারো সাথে বৈরিতা নয়।
সরকার গঠন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট-সরকার গঠন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৯ আসনের মধ্যে ২৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরতান্ত্রিক ও গণহত্যার কারণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের ১০ই এপ্রিল প্রবাসী মুজিবনগর সরকার গঠনে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে ও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০টি আসন লাভ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে এবং ৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জম্ম সময় হতে ৬৬ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যায় :
আওয়ামীলীগের গঠনকাল থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর সময়কাল: ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক নির্বাচিত হন। শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়,এসময় শেখ মুজিব কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে পরের বছর সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হলে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। ১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নাম 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ' রাখা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যাক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু'অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি ৬ দফা আন্দোলনের সূচনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসাবে আওয়ামী লীগ ও নেতৃত্বে শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান ঘটে এবং ১৯৬৯ নাগাদ দলটি পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙালি জাতির প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব খানের সামরিক জান্তার পতন ঘটলেও সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্থানীরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গণহত্যা চালালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীগণ স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামে যে প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন তা বিশ্বের স্বাধীনতাকামী গণমানুষের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের আত্মগোপনে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর নির্দেশ দেন এবং নিজে আত্মগোপনে না গিয়ে রাত ১২ টার পর ওয়ারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। রাত ১:৩০ টায় পাকিস্থানী বাহিনীর হাতে তিনি গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতারে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুদায়িত্ব তাঁর সহকর্মীদের উপর বর্তায়। এপ্রিলের প্রথমার্ধে তাজউদ্দীন আহমদ ভারতে পৌছে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও ভারত সরকারের নিকট সাহার্য্য প্রার্থনা করেন। ১৭ই এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম-উপ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ-প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমদ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, এম মনসুর আলী-অর্থমন্ত্রী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান-ত্রাণ ও পূর্ণবাসন এবং কর্ণেল এজি ওসমানীকে জেনারেল পদমর্যাদায় উন্নীত করে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করে শপথ গ্রহণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও প্রবাসী সরকারের কার্যক্রম শুরু হয়। এই সরকারের অস্থায়ী কার্যালয় হয় কলকাতায় ৮ নং থিয়েটার রোড। মুজিব নগর সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মুক্তিযুদ্ধকে গতিময় করে বাংলাদেশকে হানাদার মুক্ত করা, ভারতের সাহায্যে শরনার্থী পূর্ণবাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। প্রবাসী সরকার সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য পাকিস্তান বাহিনী থেকে আগত অফিসার, জোয়ান,ইপিআর, পুলিশ,যুদ্ধাগ্রহী ছাত্র-যুবক এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের নিয়ে প্রথমে মুক্তিফৌজ পরে মুক্তিবাহিনী নামে যে দুর্ধষ বাহিনী গড়ে তোলে দীর্ঘ নয় মাসে সেই বাহিনীই লাল সবুজের পতাকাকে স্বাধীন বাংলার আকাশে উড়িয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ যেমন আন্দোলন সংগ্রামে সফল তেমনি যুদ্ধোত্তর বিধ্বস্থ সম্পদবিহীন বাংলাদেশকে ঋণাত্মক অবস্থান থেকে অতি অল্প সময়ে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের মত কঠিন কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে অর্জিত স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু সংবিধানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ, লাল সবুজের পতাকা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। জনগণের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরনার্থে শিল্পবাণিজ্যের রাষ্ট্রীয়করণ, কৃষিখাতে সমবায় পদ্ধতি। এতে নয়া উপনিবেশবাদীদের গাত্রদাহের কারণ দাড়াল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। শুরু হয় ষড়যন্ত্র, ১৯৭৪’র দুর্ভিক্ষ ছিল দেশীয় কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র ও মার্কিনিদের অমানবিক খাদ্য কূটনীতি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ (বাকশাল) গঠন করেন। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি ও সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে এই ধরণের জাতীয় ঐক্যের সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত। সম্পূর্ণ সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় বাকশাল কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। বাকশাল সমর্থন করে অনেকে যোগদান করেছিল আবার একদলীয় ব্যবস্থা বলে অনেকে বিরোধীতা করেছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে বাকশাল গঠনের তিন মাসের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের ফলে ব্যবস্থাটি ভালো-মন্দ, একদলীয় বা জাতীয় ঐক্যের মঞ্চ কিনা বাংলাদেশে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মূল্যায়নের সুযোগ হয় নাই।
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়কাল : ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট থেকে ৩রা নভেম্বরের স্বাধীনতার ইতিহাসের নায়কদের নির্মম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে শুধূমাত্র আওয়ামী লীগকে নয় বাংলাদেশকে নেতুত্বশূন্য করা হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা জানত শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলা যাবেনা কিংবা আওয়ামী লীগের আগ্রযাত্রাকে রোধ করা যাবেনা তাই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় চার নেতা হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ববিহীন জাতিতে পরিণত করে আঘাত হেনেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, বঙ্গবন্ধুর অর্জিত জাতীয়তাবাদে; ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র হয় পরিত্যাজ্য ও গণতন্ত্র হলো সামরিকতন্ত্র। ঘৃণ্য হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিতে হলো ইন্ডেমনিটি, অবৈধভাবে সংবিধান পরিবর্তন। বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের স্থপতিরূপে অস্বীকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র, তাঁর নির্মিত বাংলাদেশের আদর্শকে কলুষিত করার প্রচেষ্টা। নিষিদ্ধ করা হলো বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী গণমাধ্যমে। সংঘবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে অপপ্রচার চালানো হলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আওয়ামী লীগের তৎসময়ের নেতৃবৃন্দ কার্যকর কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। পঁচাত্তর পরবর্তী বহুদলীয় গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে দীর্ঘ পনের বৎসর জনগণকে সামরিক শাসনের অধীনে কাটাতে হয়েছে। পঁচাত্তর পূর্ববর্তী রাজনীতিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহ ভালো মন্দ যাই হোক রাজনীতিবিদরাই গ্রহণ করতেন কিন্তু অত্যন্ত পরিহাস ও পরিতাপের বিষয় পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসে বাইরের শক্তি, সামরিক, ব্যবসায়ী কিংবা অজ্ঞাত কোন স্থান থেকে। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থ এবং অস্ত্রই হয়ে উঠে প্রধান নিয়ামক। পঁচাত্তর পূর্ববর্তী বঙ্গবন্ধুর সাহচার্যে যাদের নেতৃত্ব ক্যারিশমাটিক হয়ে উঠেছিল বা বঙ্গবন্ধুর বিরোধীতায় যারা অতিবিপ্লবী সেজে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিল পঁচাত্তর পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে কোথাও তাদের রাজনীতির বলিষ্ঠ ছাপ দেখতে পাওয়া গেল না। দুঃসময়ের সেইক্ষণে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮০ সনে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলের হাল ধরেন। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আরেক সামরিক শাসক হু.মু. ্এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করে। এই আন্দোলন চলাকালে ১০ই নভেম্বর পুলিশের গুলিতে যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন নিহত হলে আন্দোলন গণঅভুত্থানে রুপ নেয় এবং ৯০’র ৬ই ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন হয়। পরবর্তী নির্বাচনে জিয়ার গঠিত দল বিএনপি নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। বিএনপি আমলের শেষদিকে আওয়ামী লীগ জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে গণআন্দোলন গড়ে তুলে নতুন প্রজম্মের বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা আবারও অবতীর্ণ হয় আদর্শের লড়াইয়ে। ৯৬’র ১৫ই ফেব্রুয়ারী বিতর্কিত নির্বাচন করেও বিএনপির পতন হয়। পরবর্তী নির্বাচনে দীর্ঘ একুশ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
১৯৯৬ সাল পরবর্তী ২০১৭ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সময়কাল : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় আরোহনের ১৯৯৬-২০০১ সাল ছিল সাফল্যের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বাংলাদেশ খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করে। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ লাভ, ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের অভিষেক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে নতুন মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করে। শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেশনজট দূরীকরণ ছিল জাতির অগ্রগতির পরিচায়ক। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অর্জিত হয় সাফল্য। শিল্প-কারখানা স্থাপন ও বেসরকারি উদ্যোগকে সুযোগ দিয়ে লাখ লাখ বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি উদ্যোগে প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। মোবাইল ফোন, শুল্কহার কমিয়ে কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিকে সকলের জন্য অবারিত করে দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, জেলহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং আইন সংস্কার কমিশন গঠন প্রভৃতির মাধ্যমে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পদপে গ্রহণ করা হয়। দেশকে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে পুনরুজ্জীবিত করতে গ্রহণ করা হয় নানামুখী পদক্ষেপ। কিন্তুু দেশ পরিচালনায় সাফল্যের পরও ২০০১ সনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজয় বরণ করতে হয়। এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, নিপিীড়ন নির্যাতন করা হয়। দেশব্যাপী জঙ্গী হামলা ও তৎপরতার প্রসার ঘটে। ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। দেশব্যাপী হত্যা নির্যাতন, মানুষের নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পানি গ্যাস বিদ্যুত সংকট ও জালভোটার বাদ দিয়ে নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ণের জন্য আওয়ামী আন্দোলন গড়ে তোলে। ঢাকার রাজপথ গণমানুষের সমর্থনে আওয়ামী লীগের আন্দোলনে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। ক্ষমদা হস্তান্তরে চারদলীয় জোটের ষড়যন্ত্রের কারণে তাদের পতন হয়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেই মাইনাস ফমূর্লা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রে শেখ হাসিনাকে বিদেশ েেথকে দেশে ফিরতে বাধা দিলে দৃঢ়তার সহিত মোকাবেলা করে দেশে ফিরেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। দিন বদলের সনদ নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচার করার লক্ষ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যক্রম শুরু করে। বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাইল ফলক রচিত করে। আদালত কতৃক তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করা হয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালে নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য আওয়ামী লীগ ধৈর্য্যরে সহিত মোকাবেলা করে। বঙ্গবন্ধু ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেয়াদশেষে ২০১৪ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিএনপি জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মূল এজেন্ডা জঙ্গী সন্ত্রাস দমন যা বিশ্বে মডেল বলে বিবেচিত এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচারের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জঙ্গী মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামই হোক আজকের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীর অঙ্গীকার। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৩৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×