somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক বঙ্গবন্ধু

১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র্র বদল ও সংবিধান পরিবর্তন না হতো তাহলে ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ড ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বলে বিবেচনা করা যেত। চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন প্রায়-অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে সামাজ্র্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রকে যারা আড়াল করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে বলা যায় - সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধে যার অবকাঠামো ধ্বংসপপ্রাপ্ত, গ্রামগুলি শ্মশানে পরিণত, রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য সেটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হয় কিভাবে? ৭০’র নির্বাচনে যার অকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা ও ৭২ সালের নির্বাচনে যিনি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচিত, চার বছরের মাথায় কি এমন গণতন্ত্রের বিনাশ ঘটল যে রাতের অন্ধকারে নির্বাচিত সরকার প্রধানকে স্বপরিবারে আত্মীয়স্বজন সহ হত্যা করতে হবে? বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৫ বছর সামরিকতন্ত্রের অধীনে কোন গণতন্ত্র কায়েম হয়েছিল? পৃথিবীর ইতিহাসে নির্মমতার দিক থেকে একমাত্র কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত হত্যাকান্ডের সাথে ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ডের মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে নারী ও শিশুকে হত্যা করা হযেছিল।

বাঙালি জাতি হাজার বছরের কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়েছে। প্রায়ই ছয় সাত হাজার বছর আগে বাঙালি জাতি পত্তনের পর থেকেই তার সমৃদ্ধ ও উর্বর ভৌগলিক সীমারেখার সার্বভৌমত্বের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। মৌসুমী জলবায়ু, বৃষ্ঠিবহুল নাতিশীতোঞ্চ আবহাওয়া, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলার মাটি উর্বর কৃষিক্ষেত্র ও বৈচিত্রময় ষড়ঋতুর দেশ। আর এইসব ভৌগলিক কারণে বাংলায় আগমন ঘটে বিভিন্ন গোত্র ও জাতির। গুপ্ত, সেন, পাল, বর্মণ, কম্বেজাখ্য, খড়গ, তুর্কি, আফগান, মুঘল, পুর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ইংরেজ প্রভৃতি বহিরাগত জাতি গোষ্ঠী দ্বারা বারবার শাসিত হয় বাংলা, যার ফলে বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতি উপেক্ষিত থেকেছে হাজার বছর। বহিরাগত শাসকরা শুধুমাত্র সংস্কৃত, পালি ও ফার্সী ভাষাগুলোকে রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকার করতেন। সুলতানি আমলে ১৩৫২ সালে ইলিয়াস শাহ বাংলার মানুষের সামাজিক ও ভাষাগত পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে "বাঙালি" নাম দিয়ে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠা করেন। ফার্সী ও আরবীর পাশাপাশি রাজ্যটি বাঙালি জাতির মুখের ভাষাকে স্বীকৃতি ও সমর্থন প্রদান করেন। ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল সাম্রাজ্য বাংলার বিদ্রোহী বারো-ভূঁইঞাদের পরাজিত করে বাংলার কিছু অংশ জয় করেন এবং ১৭তম শতাব্দীর গোড়ার দিকে সমগ্র বাংলা জয় করে সুবাহ বাংলা কায়েম করেছিলেন। সুবাহ বাংলার সময় পোশাক উৎপাদন, জাহাজ নির্মাণের মতো শিল্প এবং রেশম ও তুলাবস্ত্র, ইস্পাত, সল্টপিটার এবং কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যগুলির প্রধান রপ্তানীকারক ছিল বাংলা। সম্রাট আকবরের নির্দেশে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী বাংলা সনের পঞ্জিকা তৈরি করেন এবং ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ থেকেই এই নতুন প্রবর্তিত বাংলা সন গণনা শুরু হয়। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরে বাংলা মুর্শিদাবাদের নবাবদের দ্বারা শাসিত একটি আধা-স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজদৌল্লার পরাজয়ের মধ্য দিযে শুধু বাংলার নয় সমগ্র ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়। ইংরেজ শাসনের সময় বাংলা মুলত শম্মানে পরিনত হয়। ছিয়াত্তর ও পঞ্চাশের মন্বন্তরে লাখ লাখ বাঙালি মারা যায়। দুইশত বছরের ইংরেজ দুঃশাসনের সময়ে অসংখ্য আন্দোলন ও বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। বাঙালি জাতিকে উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রূপকার বলা হয়। বাঙালিরা ১৭৬০ সালে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে ইংরেজ-বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে, এতে ভুমি থেকে উৎখাতকৃত কৃষকেরা যোগ দিয়ে গণবিদ্রোহে পরিণত করে। একই সময়ে সৈয়দ আহমেদ শহীদের নেতৃত্বে উত্তর পশ্চিম ভারতে ধর্মভিত্তিক তরিকা-ই-মুহম্মদিয়া আন্দোলন শুরু হলে অনেক বাঙালি অংশগ্রহন করে। ইংরেজরা কৌশলে শিখদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে আন্দোলন ব্যর্থ করে দেয়। এরপর তিতুমীর ১৮৩০ সালে রায়তের অধিকার আদায়ের জন্য বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। প্রায় একই সমেেয় হাজী শরীয়তুল্লাহর নেতৃত্বে দক্ষিণ মধ্য বাংলায় ব্রিটিশবিরোধী ফরায়েজি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। আন্দোলনে হাজী শরীয়তুল্লাহ মৃত্যুবরণ করলে তাঁর ছেলে দুদু মিঞা নেতৃত্ব দেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ছিল ্ইংরেজেেদর বিরুেেদ্ধ সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন। ৩৪তম বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ কোম্পানীগুলির সিপাহীরা চাটগাঁর খাজাঞ্চিখানা দখল ও কারাগার আক্রমণ করে সকল বন্দীদের মুক্ত করে দেয়। কলকাতা ও ঢাকায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। গুর্খা রেজিমেন্ট দ্বারা সিপাহী বিদ্রোহ দমন করা হয়। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম সূত্রপাত করেন বাঙালি বুদ্ধিজীবী চিত্তরঞ্জন দাস, সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরবর্তীতে বিপ্লবাত্মক ভূমিকায় ঋষি অরবিন্দ ঘোষ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, রাসবিহারী বসু, ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, সূর্য্যসেন প্রমুখ বিপ্লবীবর্গ। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর ইংরেজরা দ্বিজাতি ত্বত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাকে দুই ভাগ করে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করে স্বাধীনতা দিয়ে যায়।

স্বাধীন রাষ্ট্রের অধীনে স্বাধীন বাংলায় আবার নতুনরুপে শুরু হয় বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। পাকিস্তানিরা শাসনের নামে পূর্ব বাংলায় কলোনিয়ান শাসনের প্রচেষ্টা শুরু করে। প্রথমেই পাকিস্তানিরা আঘাত হানে ভাষা ও সংস্কৃতির উপর, শুরু হয় আন্দোলন। বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় সংঘটিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে আরও শাণিত করে দেয়। ভাষা আন্দোলন শুরুর সময় থেকেই শেখ মুজিবর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছিলেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়,এসময় শেখ মুজিব কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নাম 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ' রাখা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যাক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু'অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ। ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি ৬ দফা আন্দোলনের সূচনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসাবে আওয়ামী লীগ ও নেতৃত্বে শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান ঘটে এবং ১৯৬৯ নাগাদ দলটি পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙালি জাতির প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের পতন ঘটলেও সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তনিরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গণহত্যা চালালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই উপমহাদেশে একমাত্র বাঙালিই জাতিরাস্ট্র বাংলাদেশ গঠন করে।

বহুমাত্রিক বিষয় সমন্বযের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে, যার মূল ভিত্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের বাঙালির লালিত চেতনা আবেগ আকাংখাকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একেঁছেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য্, বঞ্চনা, শোষণ, নিপীড়ন, সংগ্র্রাম ও স্বাধীন আকাঙ্খাকে ধারণ করে বাঙালির চেতনার মানসে প্রোথিত করেছেন। বাঙালির হাজার বছরের বঞ্চনা ও নিপীড়নকে ধাারণ করেছেন বিশাল হৃদয়ে। বাংলার সব জাতি ধর্ম ও কৃষক-শ্রমিক ছাত্র-যুবা, নারীর আকাঙ্খাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা বিশে^। সেদিন রেসেেকােের্র্সর ময়দানে দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন সারা বাংলার কন্ঠস্বর। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকেেন্ঠর জয় বাংলা ধ্বনি গণমানুষের চেতনায় প্রতিধ্বনিত হয়ে সংগ্রাম মুখর হয়ে উঠে বাংলা ছাড়িয়ে বিশ^ জনপদ। ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কৃষক তাঁর লাঙল দিয়ে, নারী তার আব্রু দিয়ে, বুুদ্ধিজীবী কলমে লাল রক্ত দিয়ে, মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র দিয়ে, শিল্পীরা তার শিল্প দিয়ে, জর্র্জ হ্যারিসন তার গীটার দিয়ে, রবিশংকর তার সেতার দিয়ে এক অভূতপূর্ব জনযুদ্ধে শত্রুরা পরাজিত হতেই থাকে। দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে অর্জিত স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু সংবিধানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ, লাল সবুজের পতাকা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা। যুদ্ধোত্তর বিধ্বস্থ সম্পদবিহীন বাংলাদেশকে ঋণাত্মক অবস্থান থেকে অতি অল্প সময়ে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের মত কঠিন কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন। জনগণের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরনার্থে শিল্পবাণিজ্যের রাষ্ট্রীয়করণ, কৃষিখাতে সমবায় পদ্ধতি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ (বাকশাল) গঠন করেন। সম্পূর্ণ সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় বাকশাল কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে বাকশাল গঠনের তিন মাসের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগ্র্রাম ও জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বলয়ের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। তৎকালীন সময়ে ভারত, সোভিয়েট ইউনিয়ন বাংলাদেশের পক্ষে থাকলেও প্রচন্ড বিরোধীতা করেছে আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলের শক্তিধর দেশ চীন, যুুক্তরাষ্ট সহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতাপশালী দেশের বিরোধিতা ও প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানকে সহযোগিতা সত্ত্বেও মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্র্জন অসম্ভব ও বিয়স্মকর। ্আর এই অসম্ভব ও বিস্ময়কর অসাধ্য সাধন হয়েছে শুধুমাত্র বাঙালির হাাজার বছরের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর কারণে, তাই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু ছিল পরাাজিত শক্তির কাাছে আরাধ্য ও কাঙ্খিত। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরাজিত শক্তির সম্মিলিত ষড়যন্ত্র্র ছিল ১৫ আাগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই মার্কিন সংশ্লিষ্ঠতার খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে। কলকাতার যুগান্তর পত্রিকা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে সিআইএ জড়িত দাবি করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং পাকিস্তানের ভুট্টো বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলজ লিখিত বাংলাদেশ : দ্য আনফিনিশড রেভুলিউশন ব্ইয়ে কিসিঞ্জারের সাবেক স্টাফ অ্যাসিস্ট্যান্ট রজার মরিস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে কিসিঞ্জার তার ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করতেন। কিসিঞ্জারের বিদেশি শত্রুর তালিকার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিরা হচ্ছেন আলেন্দে, থিউ ও মুজিব। এ তিনজন তার বিভিন্ন পরিকল্পনা ভন্ডুল করে দেন। মুুজিব ক্ষমতায় আসেন সবকিছু অগ্রাহ্য করে। আমেরিকা ও তার অনুগ্রহভাজন পাকিস্তানকে সত্যিকারভাবে পরাজিত করে এবং মুজিবের বিজয় ছিল আমেরিকার শাসকবর্গের পক্ষে অত্যন্ত বিব্রতকর।'

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ আনেক বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার ষড়যন্ত্রকারী ও দোসররা এখনো প্রতিনিয়ত তাঁর আদর্শকে বিকৃত ও কলুষিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছ্। ইতিহাস বিকৃতি ও মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে সামাজ্র্যবাদী অপশক্তির দোসরদের কর্মকান্ড বঙ্গবন্ধুর আদর্শকেই শুধু বিতর্কিত করেনি, জাতিকেও বিভক্ত করে দিয়েছে। দীর্র্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধুকে গণমাধ্যমে নিষিদ্ধ করে রাাখা হয়। তাঁর অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করা হয়। অপপ্রচার চাালানো হয় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রজম্ম থেকে প্রজম্মে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে গণমানুষের চেতনা থেকে মুেেছ ফেলা যায়নি, চির অম্লান হয়ে বাংলায় মিশে আাছে সর্বত্র। ৭৫ সালের ২৮ আগস্ট লন্ডনের দ্য লিসনার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘শেখ মুজিব বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনগণের হৃদয়ে উচ্চতম আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটা যখন ঘটবে, তখন নিঃসন্দেহে তঁাঁর বুুলেট বিক্ষত বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এবং তাঁর কবরস্থান পূণ্যতীর্থে পরিণত হবে।’ নিপীড়িত জাতির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু। খোদ পাকিস্তান সংকটে উচ্চারিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নাম। সিন্ধ, বেলুচ ও সীমান্ত প্রদেশের নির্যাতিত জাতি ছয় দফার আদলে দাবিনামা পেশ করেছে। বেলুচ নেতা আখতার মেঙ্গল ছয় দফা দাবি পেশকালে বলেন, ‘এই ছয় দফা কোনভাবেই বাঙালি জাতীয়বাদী নেতা শেখ মুজিবর রহমানের ছয় দফার সঙ্গে ভিন্ন ভাবা ঠিক হবে না।’ বঙ্গবন্ধু এভাবেই বিশে^র নিপীড়িত সংখ্যালঘু জাতির অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মহুতি দিেেয়ছেন অনেক বীর বাঙালি কিন্তু বঙ্গবন্ধু শুধু রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করেননি, বাঙালিেেক শিখিয়ে গেছেন দেশ ও জাতির সংকটে কিভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ত্ইাতো তিনি ৭ই মার্চ বলেছিলেন, ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি. তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।’ ্আর এক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধু অনন্য ও অদম্য। মৃত্যু ভয়হীন বাঙালিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুকে ্আলিঙ্গন করে বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যে মানুষ মরতে রাজি, তাকে কেউ মারতে পারে না। আপনি একজন মানুষকে হত্যা করতে পারেন। সেটা তো তার দেহ। কিন্তু তার আত্মাকে কি আপনি হত্যা করতে পারেন? না, তা কেউ পারে না। এটাই আমার বিশ্বাস।’ তাঁর এই বিশ্বাসই বলে দেয় মৃত্যুর অনেক পূর্বেই বঙ্গবন্ধু মৃত্যুকে জয় করেছিলেন। তাই ঘাতকের বুলেট তাঁর মৃত্যুকে করেছে মহিমান্বিত। অবিনশ্বর আত্মায় তিনিই মৃৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১:২৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×