somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইয়ের পোকা

১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বইয়ের পোকা
- কিঙ্কর আহ্সান

‘ভাইয়া, জীবনে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ নামের একটাই উপন্যাস পড়েছি। আর পাঞ্জেরী নোটের কারনে ‘হাজার বছর ধরে’ টাও পড়তে হয়নি পুরোটা ।’ এই কথা মেয়েটা আমাকে গর্ব করে বলে। টের পাই তার মাঝে যন্ত্রনা থেকে মুক্তির আনন্দ। পাঠ্যপুস্তকে ছিলো বলেই দুটো উপন্যাসের সাথে পরিচয় মেয়েটার। অবাক লাগে। আউট বই পড়ার কারনে কম মার খাইনি বাবার কাছে। বাড়ির পাশেই ছিলো ফাঁকা জমি। চারপাশটা দেয়াল দিয়ে ঘেরা। সে দেয়ালের ওপর বসে প্রতি বিকেলে কয়েক বন্ধু মিলে পড়তাম চাচা চৈাধুরী, বিল্লু, পিঙ্কি আর অগ্নিপুত্রের কমিকস্রে বই। পাঠ্যপুস্তকের ভেতর লুকিয়ে গল্পের বই পড়ি জানতে পেরে বাবা একদিন রেগে পুড়িয়ে দিয়েছিলো বুকসেলফে থাকা সবগুলো বই। ছোট্ট বয়সে সে কি কষ্ট ! কি কান্না ! অভিমানে বাবার সাথে কথা বলিনি অনেকদিন। ত্রিশ টাকায় সদস্য হবার পরে দু’টাকা করে দিলে ‘তিন গোয়েন্দার বই’ পড়তে দিত এক দোকানে। আমি আর বন্ধু সন্দীপ মিলে টাকা জমাতাম। ভাগাভাগি করে পড়তাম বই। মাসুদ রানার বই পড়তে নিষেধ করে দিয়েছিলো বড়রা। রাত এগারটায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর যখন শুধু ডিমলাইট জ্বলত তখন লুকোনো জায়গা থেকে মাসুদ রানার বই বের করে অই অল্প আলোতেই পড়তাম আমি। চোখে চশমা ঝুলছে এই বইয়ের কারনেই। যে বইগুলো আমি পড়লে বখে যেতে পারি সেগুলো বাবা এনে লুকিয়ে রাখত। তার ধারনা ছিলো এগুলো পড়লে নষ্ট হব। নষ্ট হয়েছে কিনা জানিনা তবে আলমারির কাপড়ের ভীড় থেকে নারী, পাক সার জমিন সাদ বাদ এসব বইগুলো খুজে ঠিকই পড়া হয়েছে আমার।
পড়াশোনা ভালো করে করলে মা বই কিনে দিত। নারায়নের টেনিদা, শিবরামের হাসির গল্প, অর্জুন, কাকাবাবু এসবের সাথে পরিচয় পড়াশোনায় ভালো করার কারনেই। এই বইগুলো পাওয়ার লোভেই প্রচন্ড অনিচ্ছা,যন্ত্রনা নিয়েও দিনের পর দিন ‘এ প্লাস বি হোল স্কোয়ার’ এর সূত্র মুখস্ত করেছি। লোটাকম্বল, সেই সময়, কালপুরুষ বইগুলো ডেস্ক এর নিচে রেখে পড়তে গিয়ে ক্লাসে ধরা পড়ে স্যারদের গালি খেয়েছি অনেকবার। বই নেশার মতন। নীলক্ষেতে যে কোন কাজে গেলেই বই দেখতে হয় আমার। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় গেলেও টের পাওয়া যায়না। আমি, তমাল, বরুন তিন বন্ধু বহুদিন নীলক্ষেতের গলিতে গলিতে ঘুরেছি নিজের পছন্দের একটা বই কম দামে কেনার জন্যে। বইয়ের জন্যে এমন পাগলামি শুধু মানসিক শান্তির জন্যে। আনন্দের জন্যে। জ্ঞান অর্জন হবে এমনটা ভেবে কখনও বই পড়তে বসেছি বলে মনে পড়েনা। শুধু গল্প, উপন্যাসই নয় যে কোন বই পাঠই আনন্দদায়ক। বই পড়লে শৈশব ফিরে পাওয়া যায়। এই এত্তটা বড় হলেও বই পেলে খুশি হয়ে যাই। বুকের ভেতর বই রেখে, বালিশের নিচে বই রেখে ঘুম দেই। বইয়ের পাতায়,অক্ষরে, মলাটে নির্দ্ধিধায় নিজেকে রেখে বোহেমিয়ান হবার নিছক বিলাসি কল্পনায় মেতে উঠতে পারি। বই প্রেয়সীর মতন। আমাকে পোড়ায়, শান্তি দেয়, নিশ্চিন্ত করে। নতুন বইয়ের ঘ্রান মাতাল করার জন্যে যথেষ্ট। মন উচাটন করার জন্যে যথেষ্ট। ভেবে আফসোস হয় সময়ে, অসময়ে বারেবার শিশু হওয়ার, শৈশব ফিরে পাওয়ার মন্ত্রটা এই প্রজন্মের অনেক, অনেকেরই জানা নেই। প্রার্থনা করি বই ফিরে আসুক। হাটে, ঘাটে, মাঠে, প্রেমে- অপ্রেমে, যুদ্ধে, শান্তিতে বই থাকুক পাশে। বাতাসে প্রান ভরে নি:শ্বাস নেবার জন্যে বই আমার হোক। হোক আমাদের...।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×