somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যু - কিঙ্কর আহ্সান

১৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মৃত্যুর খবর শুনলে শুরুতে কখনই বিশ্বাস হয়না আমার।
বরং আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি মরে যাওয়া মানুষটি হুট করে কোন একদিন এসে হাজির হবে। হাজির হয়ে চমকে দেবে তার পরিবারের সবাইকে।
শোকে আচ্ছন্ন পরিবারটির প্রতিটি সদস্যের বুকে সেদিন আনন্দের বান ডাকবে। সেই সাথে থাকবে হারিয়ে যাওয়া মানুষটির হারিয়ে যাবার অপরাধের জন্যে এক চিমটি অভিমান।
কিন্তু আমার বিশ্বাস মেনে দুনিয়া চলেনা।
এই ডিসেম্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে খুব দ্রুত চলে গেলেন সেজ মামা। মৃতদেহ ছিলো খুলনায়।
মারা যাওয়ার দিনটিতে আমার চেয়ে বয়সে ছোট সেজ মামার ছেলেটিকে তার বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে পৈাছানোর আগ পর্য়ন্ত পুরোটা পথ অভিনয় করে যেতে হয়েছে ভাইটার সাথে। মৃত্যুর খবর শুনে ভেঙে পড়বে এই ভয়ে তাকে বলা হয়েছে,‘ বাবাটা একটু বেশি অসুস্থ আজ তার। জরুরী একটা অপারেশন হবে তাই সবাই মিলে ঢাকা ছাড়ছি।’
এ ধরনের অভিনয় খুব কষ্টের। মিথ্যে বলাটা ঝামেলার। তাছাড়া অভিনয়ে পটু নই বলে অল্পকিছু সময় পার হতেই ধরা পড়ে যাই আমি।
জীবন নিষ্ঠুর। তাই বলে এতটা তা জানা ছিলোনা !
বাবা মারা যাওয়ার দু মাসের মাথায় স্ট্রোক করায় মা’টাকেও হারাল মামাত ভাইটা। মাস দুয়েকের ভেতর শোকের এতটা ধাক্কা,কান্না করাটা সহজ কাজ নয়।
যথারীতি এবারও ‘মামি মারা যায়নি। অপারেশন দরকার। অসুস্থ বেশি তাই ঢাকা ছাড়া হচ্ছে।’ এমনটা বলে অভিনয় করতে হয়েছে আমাকে। ধরাও পড়েছি দ্রুত।
মৃত্যুর খবর শুনে এবারও আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি এই ভেবে আনন্দে আছি যে তারা শীঘ্রই ফিরে চমকে দেবেন তাদের ছোট্ট ছেলেটিকে।
স্রষ্টা, ‘তাই হোক। তাই হোক। আমার বিশ্বাস ঠিক হোক।
ঠিক ঠিক ঠিক হোক।
কাউকে যেন আমার মতন অভিনয়ও না করতে হয় আর। এমন অভিনয়ের ভেতর দিয়ে যাওয়াটা খুব কষ্টের। বড্ড যন্ত্রনার।
আমার মামাত ভাইটার মতন কষ্ট যেন না পায় আর কেউই। কেউই না।
অনুরোধটা রাখবেন স্রষ্টা। রাখবেন কিন্তুু। প্লিজ।’
প্রার্থনা করি, পৃথিবীর মা-বাবা গুলো অন্তত যেন বেঁচে থাকে কয়েকশত কোটি বছর। কয়েক হাজার কোটি বছর। কয়েক লক্ষ কোটি...।


বাড়ির সামনে লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যান। ঠিক পাশেই কাঠের কফিন ভর্তি চা পাতি। গোসল করানো হয়েছে লাশ । কাফনের কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে শরীর। তারপর কফিনে রেখে ওপরে নিচে দেওয়া হয়েছে চায়ের পাতি। কয়েক দিনের জন্যে নিশ্চিন্ত থাকা যায় এতে। পঁচবেনা আর লাশ।
বাড়ির ভেতর সুর করে কাঁদছে আপনজনেরা। পাল্লা দিয়ে কয়েকজন করছে কুরআন তিলাওয়াত। কে যেন আগরবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে গেলো দুটো। বোকার মতন আর একজন গোলাপ জলের ছিটে দিলো গায়। মরা বাড়িতে চুলা জ্বলবে না আজ। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো পেটে েিধ নিয়ে ঘুরতে লাগলো এদিক সেদিক। তারাও বোঝে শোকের সময় খাবারের জন্য মাকে বিরক্ত করতে নেই। বিরক্ত করতে হয়না। একটু পরেই জানাযা। বাড়ির সামনেই মাদুর পেতে করা হয়েছে নামাজের আয়োজন। গতকাল রাতেই খুড়ে রাখা হয়েছে কবর। কবরে বিছানো হয়েছে নতুন মাদুর আর কলাগাছের পাতা। আমার কাল ধর্ম পরীা। এমন সময়ে মারা গেলো কেন লোকটা ? পড়াশোনার মাঝে এসব বড্ড তেতো লাগে। ধর্ম পরীার জন্যে কষে মুখস্ত করেছি জানাযার দোয়া। ভালোই হয়েছে। নামাজের সময় আরামসে ঝেরে দেবো।
ঘরের জানালা লাগোয়া হাøাহেনার কয়েকটা ডাল পাতাসমেত চলে এসেছে ভেতরে। তীব্র ঘ্রান। মাথা ধরে যায়। ঘোর লাগে। এই এমন সময় বড্ড মরে যেতে ইচ্ছে করে। মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে মৃত্যুচিন্তা। ভয় হয়। শীত লাগে। মনে হয় এই আমি নিতান্তই অসহায় একজন মানুষ। কত্ত পাপ ! মৃত্যুর কথা ভুলে গেলে চলবেনা। আমারও চলে যেতে হবে। সবাইকে চলে যেতে হয়।
‌ক্ষমা করো প্রভু। প্রভু ‌ক্ষমা করো...।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×