সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি, তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। অনেকের ধারণা, এটি ছিলো বুঝি কোনো সাধারণ কুকুর, চারপেয়ে নিরীহ প্রাণী। আসলে তা নয়। সুনীল যে-কুকুরটাকে দেখতে চেয়েছিলেন, তার নাম পিনাকী ভট্টাচার্য। বাংলাদেশে অনেকের ভেতরেই একটি করে পিনাকী ভট্টাচার্য বাস করে।
পিনাকী ভট্টাচার্য কী করেন? তিনি আপনাদের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা সুনীলের কুকুরটিকে খাবার দান করেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য কোনো ‘সিঙ্গেল হিউম্যান এনটিটি’ নয়। এটি একটি ‘কালেক্টিভ হিউম্যান এনটিটি’। মধুর চাককে যদি আমরা ‘বি হাইভ’ বলি, তাহল পিনাকী ভট্টাচার্যকে বলতে হবে ‘হাইভ অভ স্টুপিড পিপল’ বা বেকুবের চাক। মধুর চাকের সাথে বেকুবের চাকের পার্থক্য হলো— বেকুবের চাকে রাণী নিজেই মধু উৎপাদন করেন। মধুর নাম ভিডিও। রাণীর নাম পিনাকী।
বেকুবের চাক কোন ধরনের সমাজে গড়ে ওঠে? সাধারণত হাইলি পোলারাইজড সোসাইটিগুলোই বেকুবের চাকের আদর্শ ব্রিডিং গ্রাউন্ড। রাজনীতিক ক্ষোভ, অর্থনীতিক বৈষম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী, কগনাটিভ বায়াস, পুওর হিউম্যান-রাইটস রেকর্ড, ইনস্টিঙ্কটিভ আচরণ, দুর্নীতি, অবিচার, প্রভৃতি নানা কারণে সমাজের বাসিন্দারা যখন বিভিন্ন দলে বিভক্ত থাকে, তখন সেখানে গড়ে উঠে এক বা একাধিক বেকুবের চাক।
মানুষের একটি আদিম প্রবৃত্তি হলো, সে তার নিজের মতামত ও বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি বা ভ্যালিডেশন খুঁজতে পছন্দ করে। যাকে সে দেখতে পারে না, তার বদনাম তার কাছে খুব প্রিয়। গোপাল তার অপছন্দের মানুষ, তাই গোপাল-বিরোধী যেকোনো সংবাদ তার ভালো লাগে। কেউ যদি ভবিষ্যদ্বাণী করে, গোপাল আগামীকাল বিপদে পড়বে, তাহলে তার খুশির সীমা থাকে না। এগুলো সবই কগনাটিভ বায়াসের ফল। প্রিমিটিভ স্যাভেজ সোসাইটিগুলোর দিকে তাকালে মানুষের এমন আচরণের কিছু ইভোলিউশোনারি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু আধুনিক সমাজে এসব আচরণ মানুষের সার্ভাইভালের জন্য সহায়ক তো নয়ই, বরং ক্ষতিকর। পিনাকীরা আপনাদের এ আচরণগুলোকেই ক্যাপিটালাইজ করছেন, এবং বৃদ্ধি করছেন পপুলারিটি। পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী সমাজে পপুলারিটির চেয়ে কার্যকর অস্ত্র আর নেই। পপুলারিটিকে অসৎ মতলবে ওয়েপোনাইজ করা গর্হিত কাজ।
বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিমরা বুদ্ধিমান হলেও ফেসবুক মুসলিমরা বেকুব। বেকুব না হলে তারা বুঝতো, নেকড়ে যখন ভেড়ার চর্ম পরিধান করে, তখন সে তা মাংস খাওয়ার লোভ থেকেই করে। নেকড়ে সেজেছে ভেড়ার পালের বন্ধু, এটি শুভ সংকেত নয়। অশুভ সংকেত। পিনাকীরা জানে, এ দেশে ‘ইসলাম’ একটি লাভজনক রসগোল্লা। ইসলামপ্রীতি ও হিন্দুভীতির অভিনয় ভালোভাবে চালাতে পারলে, তারকাখ্যাতি এখানে ‘ওভারনাইট ফেনোমেনা’। তাদের হাবভাব দেখলে মনে হয়, মুসলমানদের জন্য তাদের দরদ নবী মুহাম্মদের চাইতেও বেশি। পুত্রশোকে কেউ মায়ের চেয়ে অধিক কাতর হলে, তাকে সন্দেহের চোখে দেখতে হবে।
পিনাকী ভট্টাচার্য নিজেকে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’ রাজনীতিক কর্মী হিশেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে একটি বই থেকে কিছু অনুচ্ছেদ কোট করছি:
“মব-জাস্টিস ও মব-জাজমেন্ট— দুটিকেই আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। মবের হাতে, অর্থাৎ গণমানুষের হাতে সবকিছু বিচারের ভার তুলে দেয়াটা বিপজ্জনক। কারণ গণমানুষের হার্ড-ইনস্টিঙ্কট রয়েছে। ঝোঁকের বশে পাল বেঁধে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা তাদের আছে। যারা বিহ্যাভিয়োরাল ইকোনোমিক্স বা মব-সাইকোলোজি পড়েছেন, তারা ‘ইনফরমেশন ক্যাসকেড’ নামে একটি বিষয়ের সাথে পরিচিত থাকবেন। ইনফরমেশন ক্যাসকেডে কী ঘটে? ধরা যাক কোনো এলাকায় আপনি বেড়াতে গিয়েছেন। সেখানে আপনার ক্ষুধা পেয়েছে, এবং খাবার খাওয়ার জন্য রেস্তোরাঁর সন্ধান করছেন। হঠাৎ দুটি রেস্তোরাঁর দেখা পেলেন। একটির নাম ‘A’, আরেকটির নাম ‘B’। দুটি রেস্তোরাঁই খালি। সেগুলোতে কোনো কাস্টমার নেই। আপনি বুঝতে পারছেন না কোন রেস্তোরাঁটির খাবারের মান ভালো। এ অবস্থায় র্যান্ডোমলি, অর্থাৎ দৈব চৈয়নের ভিত্তিতে রেস্তোরাঁ ‘A’-তে ঢুকে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আরও একটি লোক সেখানে খাবারের সন্ধানে এলো। সে দেখলো যে— রেস্তোরাঁ ‘B’ খালি পড়ে আছে, কিন্তু রেস্তোরাঁ ‘A’-তে একজন লোক বসে খাবার খাচ্ছে। সে ভাববে, রেস্তোরাঁ ‘B’-এর চেয়ে ‘A’-এর খাবারের মান নিশ্চয়ই ভালো। এ জন্য ‘A’-তে কাস্টমার আছে, ‘B’-তে নেই। লোকটি করবে কী, আপনার দেখাদেখি ‘A’-তে ঢুকে পড়বে। এভাবে আরও যারা আসবে, তাদেরও একটি বড় অংশ ‘A’-কে বেছে নেবে। এই যে একজনের দেখাদেখি আরেকজনের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা, এটি গণমানুষের মধ্যে খুব দেখা যায়। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অন্যের সিদ্ধান্তকে অনুকরণ করে থাকে। নিজের বুদ্ধি-বিবেককে তারা সহজে খাটাতে চায় না। আগামীকাল যদি টেলিভিশনে কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তি বলে ফেলেন— অমুক লেখক চোর, তার সব লেখা নকল, তাহলে গণমানুষদের একটি অংশ চোখ বুজে এ মিছিলে যোগ দিয়ে দেবে। তারা জানতে চাইবে না— ‘জনপ্রিয় স্যার, অমুক লেখকের কোন কোন লেখার কোন কোন বাক্য নকল? তিনি কোন মনীষীর কোন বইয়ের কোন পৃষ্ঠা থেকে নকল করেছেন? নকল কাকে বলে? আমাদেরকে দেখান, আমরা নিজে পড়ে, নিজে তুলনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’ ফেসবুকে আমরা যে-ভাইরাল কন্টেন্টগুলো দেখি, সেগুলোও ইনফরমেশন ক্যাসকেডের ফসল। কেউ একজন কোনো জিনিস নিয়ে মাতামাতি করলো, আর অমনি তার অনুসরণকারীরাও এটি নিয়ে তুলকালাম শুরু করে দিলো। সবাই দলবেঁধে প্রথম জনের মতামতের পুনরাবৃত্তি করতে থাকে।
সেলেব্রিটি মন্টু যদি বলে— রবীন্দ্রনাথ ইসলাম-বিদ্বেষী লেখক, তাহলে তার বুদ্ধিবিমুখ অনুসারী পালও বলতে শুরু করবে— ‘রবীন্দ্রনাথ ইসলাম-বিদ্বেষী লেখক; তাঁকে জুতো মারতে হবে।’ কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কোন কোন লেখার কোন কোন বাক্য ইসলাম-বিদ্বেষী, ইসলাম বিদ্বেষ কাকে বলে, কোনো লেখা ইসলাম-বিদ্বেষী কি না এটি কীভাবে নির্ধারিত হয়, একজন লেখকের ইসলাম-বিদ্বেষী বা ইসলাম-বিরোধী হওয়ার অধিকার আছে কি না, নাস্তিক-বিদ্বেষ জায়েজ হলে ইসলাম-বিদ্বেষ কেন জায়েজ নয়, এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গণমানুষ করবে না। তারা চাইবে কেবল অন্যের টানা উপসংহার নকল করতে। কোনো বিষয়ে অন্যের দেখাদেখি সিদ্ধান্ত নেয়ার এই যে সংস্কৃতি, এটিকে গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করি। অমুকে অমুককে ভোট দিচ্ছে, তাই আমিও অমুককে ভোট দেবো, অমুকে অমুককে ঘৃণা করছে, তাই আমিও অমুককে ঘৃণা করবো, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যে-জাতি নিমজ্জিত থাকে, গণতন্ত্র তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক কাঠামো সৃষ্টির জন্য তাদের কোনো বুদ্ধনির্ভর প্রস্তুতি নেই।
হ্যাঁ, মানুষ যখন জঙ্গলে ছিলো, তখন হার্ড-ইনস্টিঙ্কট বেশ উপকারী ছিলো। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে অনেক বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতো। সমাজে সবার পক্ষে সব বিষয়ে ইনফর্মড ডিসিশন নেওয়া সম্ভব নয়। কোনো ফল বিষাক্ত কি না, কোনো প্রাণী বিপজ্জনক কি না, এ বিষয়গুলো একজন অনভিজ্ঞ শিশুর পক্ষে জানা কঠিন। বাবা-মা’র দেখাদেখিই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একজন বয়স্ক মানুষ বাঘ দেখে দৌড় দিলে, একজন শিশুরও উচিত বাঘ দেখে দৌড় দেয়া। হার্ড-ইনস্টিঙ্কটের এটি একটি বড় ইভোলিউশোনারি কারণ। আমাদের মন বা বুদ্ধি এভাবেই বিবর্তিত হয়েছে। যে-মানুষ বাঘ দেখে পালিয়ে যায় না, তার পক্ষে প্রকৃতিতে টিকে থাকা কঠিন। তবে আদিম মানুষদের হার্ড-ইনস্টিঙ্কট আধুনিক মানুষদের মতো হুজুগে ও ভিত্তিহীন ছিলো না। বাই ইনডাকশন, অর্থাৎ পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তারা বুঝতে পারতো, কোন কোন বিষয়ে অন্যের সিদ্ধান্ত নকল করতে হবে। বিপদের সাথে লড়াই করে করে তারা বুঝতো, এই এই ব্যাপারে বিজ্ঞজনের মতামত অগ্রাহ্য করা বিপজ্জনক। আধুনিক সমাজে এমনটি ঘটছে না, কারণ এ সমাজ জঙ্গলের সমাজ থেকে একেবারেই আলাদা। মানুষের হার্ড-ইনস্টিঙ্কট এখন বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, ও সোশ্যাল মিডিয়াতে।
প্রতিবাদীদের দিকে তাকান। সেখানে কী হচ্ছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ পালবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করছে। অন্ধ ভাল্লুকের মতো আচরণ করছে। প্রতিবাদী মানুষদের আমি সম্মান করি। তাদের কাছে সভ্যতার ঋণ রয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদকে পেশা হিশেবে নিলে বিপদ। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে পেশাদার প্রতিবাদজীবী রয়েছেন। নানা বিষয়ে বুঝে না বুঝে তারা প্রতিবাদ করেন। যেন প্রতিবাদ করার জন্যই তারা জন্মেছেন। প্রতিবাদের বিষয় নির্বাচনেও তারা অসৎ। কর্মের চেয়ে কর্তা তাদের কাছে অধিক মুখ্য। সবাই প্রতিবাদ করছে, তাই আমাকেও করতে হবে— এমন প্রবণতা সমাজের জন্য আত্মঘাতী। আমি চাই মানুষ নিজ বুদ্ধি খাটিয়ে প্রতিবাদ করুক। অন্যের দেখাদেখি বা অন্যকে অনুসরণ করে যে-প্রতিবাদ হয়, তা সবসময় ভালো ফল বয়ে আনে না। বোধ-বিবেচনা হারিয়ে সারাক্ষণ অন্যের কণ্ঠের চিৎকার নকল করাকে প্রতিবাদ বলে না। বরং এটি ‘হার্ড বিহ্যাভিয়ার’ বা ‘পাল বেঁধে চলার সংস্কৃতি’-কে উৎসাহিত করে। ফ্যাসিবাদের মূল কারণ কিন্তু মানুষের এই ‘হার্ড বিহ্যাভিয়ার’। ভুলে গেলে চলবে না, ফ্যাসিজম ধারণাটির উদ্ভব ঘটেছিলো ‘লাঠির বান্ডিল’ থেকে। অনেকগুলো লাঠি মিলে একটি মুগুর তৈরি হয়। এ মুগুর যখন ভিন্নমতের মানুষদের মাথায় বাড়ি মারতে থাকে, তখন এটিকে ফ্যাসিবাদ বলে। শব্দটি এসেছিলো ইতালীয় ভাষার 'fascio' থেকে, যার অর্থ বান্ডিল। সমাজে বাস করা প্রতিটি মানুষই লাঠি। এরা যদি কোনো রাজনীতিক বা ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষে একত্রিত হয়, এবং ভিন্নমতের মানুষদের উপর চড়াও হয়, তখন বুঝতে হবে সমাজে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। পশুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এ জন্য কোনো কাজ করার আগে ভেবে দেখা উচিত— আপনি ফ্যাসিবাদের লাঠি রূপে ব্যবহৃত হচ্ছেন কি না।
ফ্যাসিবাদবিরোধী মানুষও ফ্যাসিবাদী হতে পারেন। ফেসবুকে আমাকে প্রায়ই নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হয়। এসব পরীক্ষায় দেখেছি, এ দেশে যারা ফ্যাসিবাদ শব্দটি বেশি উচ্চারণ করেন, বা এর বিরুদ্ধে নিয়মিত শ্লোগান দেন, তারা নিজেরাও ফ্যাসিবাদী। এমন অনেককে পেয়েছি, যারা ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করছেন— কিন্তু নিজেরা ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলন নন। অপছন্দের লেখা লেখেন, এমন লেখকদেরকে তারা শত্রু জ্ঞান করেন। প্রতিপক্ষের প্রতি মনে তীব্র বিদ্বেষ লালন করেন। পছন্দের বিশ্বাস, প্রতিষ্ঠান, হুজুর, নেতা, ও সেলেব্রিটির পক্ষে তারা যে-ভঙ্গিতে পাল বেঁধে কথা বলেন, এবং অপছন্দের লোকজনের বিরুদ্ধে যেভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে কুৎসা রটান, তাতে তারা মানুষ নাকি ভেড়া— এটি বোঝা কঠিন। আপনি খেয়াল করবেন, ইংরেজিতে ‘sheeple’ নামে একটি শব্দ আছে, যেটি তৈরি হয়েছে ‘sheep’ ও ‘people’-কে একত্রিত করে। পিপল বা জনগণ তখনই শিপল হয়ে ওঠে, যখন তার ভেতর শিপ বা ভেড়ার গুণাবলী সংক্রমিত হয়। ভেড়া পাল বেঁধে চলতে পছন্দ করে। কারণ তার বুদ্ধি কম। গায়ের জোরও বেশি নয়। একা থাকলে সে নিরাপদ বোধ করে না। কিন্তু মানুষ বুদ্ধিমান। তার গায়ে জোর আছে, ব্যাংকে টাকা আছে। ফলে মানুষ যদি ভেড়ার মতো ইনস্টিংকটিভ আচরণ করে, তাহলে সমাজে রাজনীতিক ও অর্থনীতিক ঝুঁকি তৈরি হবে। দেখা যাবে, নেকড়েরাই ভেড়া সেজে শিকার নিয়ে ঢুকে পড়েছে অরণ্যে।”
(পৃষ্ঠা: ২৮৯, বই: 'ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠো রে’, অধ্যায়: পালবদ্ধ পশু)
পিনাকীরা ফেসবুকে ‘ক্যাসকেড ইফেক্ট’ সৃষ্টি করছেন। তারা জানেন, কী কথা কীভাবে বললে ক্যাসকেড ইফেক্টের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করবে ফ্যাসিবাদ। ভিন্নমতের মানুষদের ক্যারেক্টার এসাসিনেশনে তারা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন। কন্সপাইরেসি থিওরিস্ট হিশেবে দখল করছেন শীর্ষ মুকুট। রাজনীতিক ভাষ্যকার রূপে তাদের কোনো ক্রেডিবিলিটি নেই, এটি তারা বোঝেন। লজিশিয়ান হিশেবেও তারা মূর্খ। চেরি-পিকিং ও সোফিস্ট্রিতে অর্জন করেছেন বেকুবদের সমীহ। একজন নারী এক্টিভিস্টকে পিনাকী ভট্টাচার্য যে-ভাষা ও ভঙ্গিতে আক্রমণ করেছেন, তা কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোনো পত্রিকাই এরকম স্ল্যান্ডারাস বাক্য ছাপতে রাজি হবে না। নারী তো বটেই, যেকোনো পুরুষের জন্যও এ ধরনের আক্রমণ ট্রমাটাইজিং। পরিবারহীন, ভালোবাসাহীন, হতাশ, মিসোজিনিস্ট, ভ্যাগাবন্ড, লোনলি, ও অত্যন্ত অসৎ কোনো মানুষের পক্ষেই কেবল এভাবে ভিন্নমতের কাউকে আক্রমণ করা সম্ভব। কোনো মানবাধিকারকর্মী এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। মানবাধিকার কারও কারও জন্য ‘ক্যাচ-অল কার্পেট’। পিনাকীদের জন্য এটি সুরক্ষা-ঢাল। এ ঢাল দিয়ে তারা নিজেদের পাশবিক গুণাবলী আড়াল করতে চায়। সুযোগের অভাবে পিনাকীরা ভার্বাল ভায়োলেন্সে সীমাবদ্ধ থাকছে। কিন্তু সুযোগ পেলেই এরা ভিন্নমতের উপর লিগাল ও লিথাল ভায়োলেন্স চালাবে।
নিটশা বলতেন— হুয়েভার ফাইটস মনস্টার্স শুড সি টু ইট দ্যাট ইন দা প্রসেস হি ডাজ নট বিকাম আ মনস্টার। পিনাকী ভট্টাচার্য এর আদর্শ উদাহরণ। হি ইজ দা গ্রেটার ইভিল দ্যান দ্য ইভিল হি প্রিটেন্ডস টু ফাইট। এ ধরনের সুনীলের কুকুর ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। ফাসিজম চাষের জন্য পিনাকী ভট্টাচার্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট ইউরিয়া সার আর হয় না। কোনো রাজনীতিক দলের উচিত নয় এ ধরনের সুনীলের কুকুরের সাথে এলায়ান্স রাখা। এরা গণশত্রু, ভিন্ডিক্টিভ সেইন্ট, ইন ডিসগাইজ অভ আ ফ্রেন্ডলি জেশ্চার।
উপরের আলোচনায় ‘পিনাকী’ শব্দটি দ্বারা কেবল একজন বিশেষ ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয় নি, বরং এ ঘরানার অনেক ব্যক্তির ‘কালেক্টিভ আইডেন্টিটি’-র দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। পিনাকী ভট্টাচার্যের মতো সুনীলের কুকুর ফেসবুকে আরও অনেকেই আছেন।
সুনীলের কুকুর থেকে সাবধান।
.
—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




