যুদ্ধ দুই প্রকার -১. অস্ত্র নির্ভর যুদ্ধ ২.স্নায়ু যুদ্ধ। অস্ত্র নির্ভর যুদ্ধে অস্ত্রের বেচা-কেনা ও ব্যবহার বৃদ্ধি পায় কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধে শুধু অস্ত্র বেচাকেনা ও উৎপাদন বাড়ে না তার সাথে সাথে পন্য সামগ্রি উৎপাদন কমে যায়, দেখা যায় খাদ্য সংকট শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। রাশা- ইউক্রেনে যে যুদ্ধ চলছে তা একই সাথে অস্ত্র যুদ্ধ এবং স্নায়ুযুদ্ধ। দুদেশ এবং দুদেশের এলাই সদস্যরা যুদ্ধের অস্ত্র ব্যবহার কে শিথিলে আনতে পারলেও স্নায়ুযুদ্ধের ভয়াবহ কূটকৌশল থেকে রাশা- ইউক্রেন সহ অন্যান্য দেশের মানুষ কে বাঁচাতে পারছে না।
দেশে দেশে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক দুর্ভিক্ষ স্বরূপ অবস্থা। বিশ্ব ব্যাংকের অনুমান মতে এ বছর জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশ এবং কেন্দ্রীয় এশিয়ার ইকোনমিক গ্রোথ সর্বোচ্চ . ৩% হতে পারে৷ পাকিস্তানে অর্থনৈতিক গ্রোথ তো নেই তার উপর মূল্যস্ফীতি বাড়তির দিকে।
বাংলাদেশ ও এই যুদ্ধ কেন্দ্রীয় দুর্ভিক্ষের শিকার। স্নায়ুযুদ্ধের কারনে যেহেতু পন্য সামগ্রি উৎপাদন কে সরাসরি প্রভাবিত করে, রাশা-ইউক্রেনের এই স্নায়ুযুদ্ধও দেশে দেশে পন্য সামগ্রি উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ শিল্পখাতের যে পরিমান কাঁচামাল রাশা বা ইউক্রেন থেকে আনাতো সেটা এখন আর আনাতে পারছে না বরং চাহিদার তুলনায় কম পরিমান কাঁচামাল দ্বিগুণ দামে আনাতে হচ্ছে। শুধু কাঁচামাল কেন সেকেন্ডারি কাঁচামাল, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ যা রাশা- ইউক্রেন থেকে আনা হতো তার সবাই এখন অন্য দেশ থেকে দ্বিগুন তিনগুন দামে আনতে হচ্ছে এতে পন্য সামগ্রি উৎপাদন খরচ যেমন বেড়েছে তার সাথে সাথে বাজারে এসব পন্য সামগ্রির দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশের বাজারে যে কোন দ্রব্য, পন্য সামগ্রির দাম আগের থেকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের দৈনন্দিন যাপনের জন্য দ্রব্যসামগ্রী আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে এসেছে। এরজন্য অভ্যন্তরীণ বিক্রেতা ও উৎপাদনকারী যতটা দায়ী তার থেকে আরো বেশি দায়ি রাশা- ইউক্রেনের এই যুদ্ধ।
অনেকে বলছে মুরগী,দেশি সাবান, মাছের দাম বাড়ছে কেন, এগুলো তো দেশেরই পন্য? উত্তরটা হলো এগুলো দেশি হলেও এগুলো চলে বিদেশি কাঁচামালে। মুরগির খাবার ভুট্টার ৪০-৫০% আসে ইউক্রেন থেকে, সাবানের কাঁচামালের ২৫-৩০% আসে বিদেশ থেকে যার বেশিরভাগই আসে রাশা- ইউক্রেন হতে, মাছের খাবার, ফসলের বীজের কাচামালের যে অংশটুকু আগে ইউক্রেন থেকে আনা হতো তা এখন বেশি দূরের দেশের থেকে বেশি দামে দেশে আনাতে হচ্ছে।
স্নায়ুযুদ্ধের প্রথম ও প্রধান ইমপ্যাক্ট হলো বিভিন্ন দেশের জনসাধারণ হয়রানির শিকার হবে। দেশে দেশে পন্য দ্রব্যের উৎপাদন হার কমে যাবে অস্ত্র উৎপাদন বেড়ে যাবে। মানুষের মৌলিক ও সম্পূরক অধিকার বিনষ্ট হবে এবং রাষ্ট্র অস্ত্র কেনা ও উৎপাদনের দিকে বেশি ঝুকবে।
বাংলাদেশ কোনদিক দিয়েই স্বয়ংসম্পূর্ণ না সবকিছুর জন্য বাংলাদেশ কে অন্য দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। তাইতো আজ বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে যুদ্ধ চললেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের জনগন কিন্তু এই যুদ্ধের ইমপ্যাক্ট থেকে মুক্ত নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




