মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উপমহাদেশের উত্তর - পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি মাত্র মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের চিন্তায় বিভোর ছিলেন। ১৯৪০ সালে সেই লক্ষ্যে "লাহোর প্রস্তাব " উত্থাপন করেন তিনি। এই লাহোর প্রস্তাব হলো পাকিস্তান গঠনের প্রধান উদ্যোগ যার কারণে মুসলিম লীগ এই প্রস্তাব কে পাকিস্তান প্রস্তাব বলে চালিয়ে দেয়। অন্যদিকে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক চাচ্ছিলেন যেহেতু ভারত উপমহাদেশের উত্তর - পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল দুটো অঞ্চল ই মুসলিম অধু্যষিত অঞ্চল কিন্তু দুটো অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান, ভৌগোলিক অসামঞ্জস্যতা, ভাষাগত পার্থক্য, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ভিন্নতার কারনে দুটো অঞ্চল দুটো রাষ্ট্র হোক৷ কিন্তু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ একটি রাষ্ট্র গঠনে মরিয়া ছিলেন এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের বক্তব্য কে মুদ্রন জনিত ভুল বলে চালিয়ে দেন। অন্যদিকে জিন্নাহ, নেহরুর রিপোর্টের উপর নির্ভর করে "দ্বিজাতিতত্ত্ব " প্রনয়ন করে৷ যার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হয়, একটি মুসলিম রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম জনগনের বঞ্চনা, দুঃখ দেখে তাদের জনকল্যাণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকায় ১৯০৬ সালের ভারতীয় মুসলিম লীগ। এই দলটি প্রতিষ্ঠা লাভের পর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস হতে সকল মুসলিম সদস্য মুসলিম লীগে অংশগ্রহণ করে শুধু মাত্র মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ব্যাতিত। আজাদ সাহেব পরবর্তী তে কংগ্রেসের প্রথম মুসলিম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুসলিম লীগ পরবর্তী তে অবাঙ্গালী মুসলমানদের পকেটস্থ হয় এবং বাংলা তথা ঢাকার মুসলমানরা পুনরায় উপেক্ষার পত্রে পরিনত হয়। এমতাবস্থায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বাঙ্গালী গরীব ও মজলুম জনগনের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠা করেন " কৃষক - প্রজা দল " যদিও এই দলটি বাঙ্গলার বাইরে তেমন সারা ফেলে নি।
ভারত ভাগের আগের বছর ১৯৪৬ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ১১৯ টি আসনের মধ্যে ১১৪ টা আসন পায় মুসলিম লীগ এবং বাকি ৫ টি আসন পায় কৃষক প্রজা দল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিম চাচ্ছিলেন বাংলা অবিভক্ত থাকুক অন্যদিকে খাজা নাজিমুদ্দিন এবং আকরাম খাঁ চাচ্ছিলেন বাংলা ভেঙ্গে যাক। সোহরাওয়ার্দী - হাশিমের বিশ্বাস ছিল অবিভক্ত বাংলার অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলার জনগনের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধিত করবে কিন্তু মুসলিম লীগের হাইকমান্ড সমর্থন করেন নাজিমুদ্দিন - আকরাম খাঁ কে। ১৯৪৭ সালে ২৭ শে এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী এবং সুভাষ চন্দ্র বসুর বড়ভাই শরৎচন্দ্র বসু অবিভক্ত বাংলার প্রস্তাব উত্থাপন করে যা ইতিহাসে "সোহরাওয়ার্দী -বসু প্রস্তাব " নামে খ্যাত। সোহরাওয়ার্দী - বসুর সাথে ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিম, কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্র মোহন ঘোষ, কিরণ শঙ্কর রায়, ছাত্র যুব নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং আরো অনেকে। অন্য দিকে হিন্দু মহাসভার নেতা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বাংলা বিভক্তির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ও বাংলা বিভক্তি অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় এবং বিভক্ত হয়ে যায়।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




