বাংলাদেশের ইতিহাসে "জয় বাংলা" শ্লোগান শুধুমাত্র একটি বাক্য নয়; এটি একটি জাতির আবেগ, চেতনা এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই শ্লোগান ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির প্রেরণা। এটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার ডাক। তাই "জয় বাংলা" শ্লোগান বাতিল করার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়; এটি জাতির ইতিহাস এবং চেতনায় আঘাত হানার সমতুল্য।
প্রথমত, "জয় বাংলা" শ্লোগান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মপরিচয়ের অংশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি বাঙালি জাতির ঐক্য ও সাহসের প্রতীক ছিল। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সময় এই শ্লোগানটি লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। শ্লোগানটি বাতিল করা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমূল্যায়ন করা।
দ্বিতীয়ত, শ্লোগানটি ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অমূল্য উপাদান। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের জাতীয় চেতনার প্রতীকগুলিকে সংরক্ষণ করে এবং গৌরবের সাথে ধরে রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সের "লিবার্টি, ইকুয়ালিটি, ফ্রাটারনিটি" শ্লোগান তাদের বিপ্লবের চেতনা বহন করে। তাহলে কেন বাংলাদেশ তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শ্লোগানটি পরিত্যাগ করবে? এটি জাতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।
তৃতীয়ত, "জয় বাংলা" শ্লোগান বাতিল করার সিদ্ধান্ত দেশের জনগণের অনুভূতিতে আঘাত হানে। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের শামিল। যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের চেতনার প্রতীককে মুছে ফেলা কি সঠিক? এ জাতীয় সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ জাতির ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
অতএব, শ্লোগানটি বাতিল করার পরিবর্তে এটি আরও প্রসারিত করা এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন। "জয় বাংলা" কেবল একটি শ্লোগান নয়; এটি আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রাম, এবং আমাদের গৌরব। এই শ্লোগান বাতিল করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত এবং এটি জাতির হৃদয়ে সেই সম্মানের জায়গায় ফিরিয়ে আনা উচিত।
"জয় বাংলা" থাকবে, কারণ এটি জাতির চিরন্তন প্রেরণার ও সংগবদ্ধ করার উৎস।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১১