somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রাজনের মৃত্যু এবং আমাদের একটি ওয়াচফুল মুভিঃ

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংবাদটি নতুন করে দেয়ার প্রয়োজন নেই।১৩ বছরের কিশোর ছেলেটি মরলো।অপরাধীরা সবাই তেরো উর্ধ্ব।ছেলেটি মরে গিয়ে আমাদের "আহঃ"বিজয় করল।সে না মরে যদি নির্যাতনে পঙ্গুও হত,হলফ করে বলতে পারি,আহ বলার মতো সিকি পরাণ আমাদের নেই।সে মরে গিয়ে জিতে গেলো।দু-একজনের নয়,ষোল কোটি মানুষের হৃদয়কে জয় করলো বাচ্চা ছেলেটি।এবং তাকে জিতিয়েছে হত্যাকারীরাই,তার ভিডিও প্রকাশ করে।আমরা অহরহ এমন সংবাদ শুনলেও ভিডিও না দেখার ফলে এত্তোবড় আহঃ করি না,এবার করলাম।বছর কয়েক পূর্বে আমিন বাজার সংলগ্ন চরে কিছু কিশোর গণপিটুতে জীবন দিলেও এতবড় আহঃ জয় করতে পারেনি।

মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছা মঙ্গলযাত্রা ছিল না,মাকে দেখাও নয়,এমনকি একটু খাবারও নয়,শ্রেফ পানি খেতে চেয়েছিল সে।একটা কুকুরও মৃত্যুর সময় পানি খেয়ে মরে।কতখানি পাষন্ড হলে একজন মানুষকে মৃত্যুর সময় পানি খেতে না দিয়ে বলে "ঘাম খা"।নৃশংসতার সঙ্ঘাকেও হার মানিয়েছে এ নির্যাতন।

রাজনের এ ঘটনার আরো চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, এবার দর্শকও ছিল।ভয়ঙ্কর সুন্দর!!!

আমাদের সামাজিক একটা পুরানো ব্যাধি হলো যেকোন ঘটনায়,পুলিশ তথা আইনপ্রয়োগকারি সংস্থাসমূহ এবং রাষ্ট্রকে দোষী সাব্যস্ত করে মানুষ হিসাবে আমাদের দায়িত্ব সারি।এবার ফেসবুক,ব্লগে দেখলাম অনেকে মনে করছেন রাষ্ট্র এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে এমন অপরাধকে উৎসাহ প্রদান করছে,বলে তাদের দাবি।বেকুব কাকে বলে!

রাষ্ট্র সমাজব্যবস্থাকে মেরামত করে, না সমাজের অন্যতম উপাদান "মানুষ" মেরামত করে? যদি রাষ্ট্রই এসব করত,তাহলে রাষ্ট্রীয় ডকট্রিন খেয়েই পাবলিক বুদ হয়ে থাকত,রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কখনও কোন আন্দোলন হত না।
আপনাকে বলছি,অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ব্রাশ ফায়ার করা বন্ধ করুন।

রাজনের মৃত্যুতে এ সমাজের একজন মানুষ হিসেবে আমি শোকাহত,ব্যথিত এবং আমার তিন বছরের ছেলেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।সে বড় হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে দায়বদ্ধহীন এমন এক নির্মম সমাজ ব্যবস্থার ভিতরে প্রবেশ করছে যেখানে বিশ্বাসের ছিটেফোটাও নেই,বরঞ্চ আছে সামাজিক মূল্যবোধের চরমতম অবক্ষয়। আমি বাবা হিসেবে তার জন্য এমন সমাজ যেমনটি চাইনা,রাজনের বাবাও চান না।যে সমাজ একটি কিশোর ছেলের এমন মৃত্যু প্রত্যক্ষ করতে পারে,সে সমাজ বিনির্মাণে আমাদের কি কোন দায় নেই?
আমরা যেকোন নির্যাতনকে "মধ্যযুগীয় বর্বরতা" বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও মধ্যযুগের ঐ অশিক্ষিত,অর্ধ-শিক্ষিত সমাজপতিদের থেকেও কুৎসিত কর্ম ঘটাতে কি এতটুকু পিছপা হয়েছি?

পাতিচোরের গণপিটুতে মৃত্যু বা ছিনতাইকারির মৃত্যুর ঘটনা তো হরহামেশা ঘটছে,সুযোগ পেলে শরিক হয়ে বীর বনে যাচ্ছি। হ্যা,রাষ্ট্র তাকে চোর হতে বাধ্য না করলেও তার চোর বা ছিনতাইকারি হওয়ার পিছনে রাষ্ট্র তার মহান দায়িত্বে অবহেলার দায় অস্বীকার করতে পারে না।এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্র তার সীমাবদ্ধতাকে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে স্বীকারও করে নিয়েছে।এবং এটা আমাদের সেই রাষ্ট্র,যার অবিচ্ছেদ্য অংশ আমি বা আমরা।

একটা সুন্দর রাষ্ট্র গঠনে সমাজের ভুমিকা এবং সহানুভূতিশীল সমাজ গঠনে রাষ্ট্রের ভুমিকা অস্বীকার করার সুযোগ না থাকলেও,সেটা মেজর নয়।সমাজের মানুষ এবং রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব এখনও স্বীকার না করলে ভবিষ্যতে হয়ত টিকেটের ব্যবস্থা করে রাজনদের হত্যা করা হবে।তখন,আমাদের হাতে তালি এবং ফেসবুক স্টাট্যাস দেয়া ছাড়া আর কিছুই হয়ত করার থাকবে না।আমাদেরকে এখনই বুঝতে হবে,আমরা অন্তত একটা বেয়াদব প্রজন্মের অগ্রভাগে নেই তো?

জননিরাপত্তা আইনের রক্ষক রাষ্ট্র হলেও একে বাস্তবরূপ দেয়ার দায়িত্ব নাগরিকদের।পুলিশ হয়ত অপরাধীকে ধরল,রাষ্ট্র বিচার করল কিন্তু নাগরিরা শিক্ষা গ্রহণ না করলে রাজনদের মৃত্যু অবধারিত।রাষ্ট্র জনগণের নিরাপত্তার জন্য তার ক্যান্সার সম জনপাপীদের এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের আওতায় নিয়ে আসলে সেখানে ততক্ষণ পর্যন্ত দোষ খোজা অনুচিত যতক্ষণ এর মধ্যে রাষ্ট্রের স্ব-স্বার্থ না থাকে।

আরেকটা রাজন হত্যার বিচার চাওয়ার আগে আসুন "হুজুগে" বাঙালীত্ব ঘোচাই।
রাজনরা যে বৈষম্যের স্বীকার তা তো আপনার-আমার দ্বারা নিত্য ঘটছে,হত্যার মত বড় কিছু নয় বলে আমাদের বিলুপ্তপ্রায় বিবেক এখনও জাগেনি।যারা রাজনকে হত্যা করেছে,তারা কি জানত এতটুকুন বাচ্চাটির এতে মৃত্যু হতে পারে?

আসুন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পুলিশ ভীতি দূর করি এবং মস্তিস্কের স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করি।রাজনদের জন্য নিরাপদ একটা সমাজ নির্মাণ করি।রাজনরা না বাচাঁলে এদেশ,সমাজ এমনকি তার বাবারাও বাচঁবে না

রাজন হত্যার বিচার চাইব না,বিচার চাইব সমাজের নৈতিক স্থলনের।যে সমাজ একটা কিশোরের মৃত্যু দেখেছে।সমাজের কেউ কেউ ব্যধিতে আক্রান্ত হতেই পারে তাই বলে পুরো সমাজ কিছু না করে তাকিয়ে দেখবে?

রাষ্ট্র হয়ত দোষীদের বিচার করবে,এটা রাষ্ট্রের কর্তব্য। সমাজের কর্তব্য ভবিষৎ রাজনদের জীবনকে নির্বিঘ্ন করা,আমরা সেটা পারবো তো?


- রফিকুল্লাহ্ কিশোর



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×