somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন শেষ হলেই তিনি অদৃশ্য হয়ে যান, সম্ভবত ধূমপানের জন্য। ফিরে আসেন সুগন্ধি কিছু একটা চিবুতে চিবুতে।

ভিনদেশের মানুষের সাথে কথাবলা, তাদের মুখে নিজে দেশের সংস্কৃতি ও রাজনীতি সম্পর্কে শোনা আমার একটি সখ। এক বিরতিতে রাসেমকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কেন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইসরায়েলকে কিছু বলছো না? ফিলিস্তিনিদের সাথে তোমাদের সম্পর্ক কীভাবে টিকে আছে? উত্তরে তিনি যা বললেন, তাতে আমি শুধু অবাক হলাম না, সার্বভৌম রাষ্ট্র সম্পর্কেই আমার ধারণা বদলে গেলো! সহকর্মী রাসেম জানালেন যে, তিনি নিজেও একজন ফিলিস্তিনি এবং জর্ডানের বিরাশিভাগ মুসলমানের চল্লিশভাগই ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। অন্য কথায় ফিলিস্তিনের শরণার্থী। জর্ডানকে বলা যায় ফিলিস্তিনের সহোদর, কিন্তু ইসরায়েলের সাথে আছে তাদের অনেক গভীর সম্পর্ক। কীভাবে এটি হলো?

জর্ডানের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকে তাকালে বলা যায়, এটি একটি আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র যেখানে পরাক্রমশালী সবদেশের আছে অবাদ যোগাযোগ। ধর্মীয় কোন বিভেদ নেই। (তবে শিয়া মুসলমান ছাড়া! হেহেহে... নিজ জাতিকে আমরা এত্ত ভালোবাসি!) বিশেষত, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের এমন সম্পর্ক যে, বলা যায় জর্ডানীরা জাতেই মুসলমান কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং জীবনের মানে তারা পশ্চিমাদেরই সমকক্ষ। যদিও মুসলিম সংস্কৃতি তারা ত্যাগ করে নি।

জর্ডানি এক দিনারে আপনি পাবেন প্রায় দেড় ডলার! রাসেমকে আমি বললাম, আদবকায়দার খাতিরে হলেও অন্তত ইউএস ডলারের নিচে থাকা উচিত তোমাদের! রাসেম বললো, জর্ডানি দিনারের মান ঠিক রাখা যে তাদেরই দায়িত্ব, তাদেরই স্বার্থে! জর্ডানের অর্থনীতি কাদের হাতে এবার বুঝুন। জর্ডানের অর্থনীতির দিকে তাকালে আপনার জাত্যাভিমানের আবশ্যকতা নিয়ে প্রশ্ন জাগতেই পারে (সিঙ্গাপুর এমন একটি দেশ যেখানে জাতীয়তা না বিচার করে, অর্থনৈতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়)। জর্ডানিদের শুধু একটাই সমস্যা, ফিলিস্তিনি শরণার্থী।

কিন্তু ১৯৪৮ এর পূর্বের ফিলিস্তিন কি এমন ছিল? ইহুদিদেরকে আশ্রয় এবং পরবর্তিতে তাদের জবরদখলের আগে কেমন ছিল ফিলিস্তিন? নাকবা (আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ১৯৪৮) সংঘটিত হবার পূর্ব পর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিলো একটি বহুজাতিক, বহুসাংস্কৃতিক এবং সমৃদ্ধ দেশ। তিরিশের দশকে ইয়োরোপ যখন ইহুদিদেরকে কায়দা করে খেদানো শুরু করলো, তখন থেকেই শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের দুর্দিন। ইহুদি রাষ্ট্র কায়েমের নামে পশ্চিমারা একটি দেশ দখলে মদদ দিয়ে আসছে ১৯৪৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত। জাতিসঙ্ঘ সিস্টেম করে দিয়েছে। ফিলিস্তিন তো এখন ইসরায়েল! আর ফিলিস্তিনিরা হয়েছে শরণার্থী। বিশ্বজুড়ে এমন অরাজকতা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মদদেই সম্ভব হয়েছে।

অন্যদিকে ইয়োরোপ এমন একটি মহাদেশ, যেখানে প্রবেশ করলে আপনি হয়ে যান শরণার্থী। কিন্তু ইয়োরোপ থেকে কেউ অন্য অঞ্চলে গেলে তারা হয়ে যায় সেদেশের (কলোনিয়াল) শাসক, অথবা নূন্যতম নাগরিক। শাসক হবার দিন শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। তারপরই তাদের শরণার্থী হবার পালা শুরু হয়েছে। কিন্তু ভাগ্য তাদের সবসময় ভালো থাকে। শরণার্থী হয়ে এসে ইহুদিরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গ্রাস করে নিলো! আর প্রতি বছরের ১৫ মে ফিলিস্তিনিরা পেলো নাকবা বার্ষিকী (আরবি 'নাকবা' মানে বিপর্যয়)।



------------------
পাদটীকা ১: জর্ডান কেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সমর্থক হয়েও ইসরায়েলকে কিছু বলছে না? উত্তরে বলা যায়, কিছু তো বলছেই! কিন্তু অফিশালি বলছে না। প্রথমত, জর্ডান একটি নিরপেক্ষ, শান্তিকামী রাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, কৌশলগতভাবে ছোট্ট রাষ্ট্র জর্ডান চায় না প্রতিবেশি এবং সামরিক শক্তিধর ইসরায়েল ক্ষেপে ওঠুক।

পাদটীকা ২: ফিলিস্তিন এবং জর্ডানের পতাকা কেন এক? বলেছি যে তারা সহোদর, সিরিয়াস টাইপের! ঐতিহাসিকভাবে জর্ডান হলো ফিলিস্তিনের ম্যানডেট। যুক্তরাজ্য কর্তৃক নিযুক্ত এবং জাতিসঙ্ঘের অনুমোদিত। অর্থাৎ অটোম্যানদের বিপক্ষে জর্ডান একই আরব বিদ্রোহের কমরেড। 'প্যান-আরব কালার' সেখান থেকেই এসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×