’আয়না জোড়া অন্ধকার’ (২০০৩) এর আট বছর পর প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস ও সত্যবদ্ধতা নিয়ে ‘সম্পন্ন সাম্পানে’ যাত্রা করেছেন কবি খালেদ মাহবুব মোর্শেদ। এ যেন এক নতুন অডিসি। নব্বই এর দশকে নিচু লয়, গীতল কন্ঠ অথচ অনিবার্য শব্দচয়নে ঐতিহ্যানুগতার শেকড়, নিসর্গ আর বাস্তবতাকে একত্রে বয়ন করে দৃষ্টি আকর্ষনী পথ চলা শুরু করেছিলেন এই কবি। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর দুই মলাটে আবারো সংরক্ষণ করলেন ক্রমঋদ্ধ নিরবচ্ছিন্ন কাব্যচর্চার গোছালো সম্ভার। কাব্যগ্রন্থটি তিনটি উপশিরোনামে তিনটি পর্বে বিভাজিত: যথাক্রমে ‘মানচিত্রের মনোচিত্রে অমনোতোষের মমি’, মগজে মননে জমা গমনাগমনের ভূমি’ ও ’তাকে দেখতে দেখতে কাকে দেখি’। খালেদ মাহবুব মোর্শেদ এবারে বসেছেন দীর্ঘ কবিতায় কাব্যিক শক্তিমত্ততার পরীক্ষা এবং প্রেম ও দ্রোহের প্রতি, মানুষ ও মাতৃভূমির প্রতি সত্যবদ্ধতার পংক্তি রচনায়, পূর্বোক্ত গীতলচরিত্রের সাথে কিঞ্চিত আপোষরফা ক’রে। নিসর্গের প্রমাণিত রূপকার এই কবির চোখে কেবলমাত্র সুষমা সৃষ্টির ছলে এড়িয়ে যায়নি দিকে দিকে গ্রাম বিক্রির চুক্তিনামা, নিসর্গে হানা দেয়া দস্যুর নখর, শ্রমিকের ঘাম থেকে জন্ম নেয়া কালো মরীচিকা কিংবা সংঘের শঠতা নাশা নির্বানের দীপ।
কবির আজকের বর্ষামঙ্গল অন্যমাত্রার, আজকের সমুদ্র দর্শন অন্য দৃষ্টির। আজও কি নেই জীবনবাবুর পথে হাঁটাহাঁটি- আছে, তবে তা অন্য গন্তব্যে; আর একালের ইউসুফের স্বপ্নে হানা দেয় যমুনার তলদেশে ধানের শীষের জাদু-বাস্তবতা । বিচিত্রগামী খালেদের কবিতা: মিথ ও রূপকথার জগৎ, দর্শনিকতা, পুরাণের প্রতিপাঠ, সর্বোপরি ক্রমশই কৌতুহলোদ্দীপক প্রেম এবং অথবা ভালবাসার রহস্যের মোড়ক খুলে খুলে দেখিয়েছেন এই প্রেমিক কবি। আর কার কাছ থেকে পাওয়া যেত এই দেহ সমুদ্র যে নুনের বেহারা তার বিশ্লেষণ কিংবা বিবাহ বিষয়ক মৌলিক ভাষ্য! খালেদ মাহবুব মোর্শেদের কলমের অপেক্ষাতেই ছিলো প্রাক্তন প্রেমের নামে ওড়ানো পতাকা, প্রিয়ার হাতে নকল মেহেদি রাঙা কপট আদর কিংবা বামের বিলোল অগ্নির প্রতি ভালোবাসা ।
পাহাড়ময় সমুদ্রঘেরা দ্বীপবাসী এই কবি ধীবরের মগ্নতায় চাঁদের কাছেও ঈর্ষনীয় শব্দের রূপচাঁদা আহরণ ক‘রে যে রূপশালী ফসলের সম্পন্ন সোনার তরী বেয়ে যাচ্ছেন, কাব্য পাঠকের কূলে কূলে নিশ্চিত বারবার ভেড়াবেন তা; আর আমাদের অভিজ্ঞতায় ধরা দেবে এক অবিস্মরণীয় ভ্রমনের স্মৃতি। কবির বাক-রীতে ঋদ্ধ হোক মানস সবার একথা কবির মতো আমারও আশাবাদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




