
ব্যাংককে দ্বিতীয় দিন!!!! সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেছে! ৮টা ৯ টা বাজে হয়তো! প্রথমদিনের জার্নি আর সারাদিনের ঘুরাঘুরি শেষের ক্লান্তিতে- রাতে যে গভীর ঘুম হবে ভাবছিলাম তেমন কিছু হয়নি। ফ্লাইটে উঠার আগে কড়া এক কাপ ব্লাক কফি খাইছিলাম লাউঞ্জে। এর পর ব্যাংকক নামার পর কয়েকবার রিপিট হইছে। এর রেশ সম্ভবত রাতে ও ছিল। বিছানায় শুয়ে আছি, পুরো শরীর ক্লান্ত!!! ক্ষুদা ও লাগছে কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না।

একটি টিপিক্যাল থাই রেস্টুরেন্টে এ! থাইরা ও দেখছি অনেক মোটা হয়।
ব্যাংককে থাকার মুল কারন রজেন ভাইয়ের সাথে দেখা করা। নাইলে সরাসরি ফুকেট চলে যাইতাম। থাইল্যান্ডে আসছি আর রজেন ভাইয়ের সাথে দেখা করবো না কেমনে কি???? রজেন ভাইরে কেমনে চিনি সেইটা অন্যকোন দিন বলবো নে। ৫০ উর্ধ্বে বয়সী ভদ্রলোক বাঙালি কিন্তু জাপানি নাগরিক, তবে বছরের দীর্ঘ একটা সময় থাইল্যান্ডে থাকেন ব্যবসায়িক কাজে। থাই ভাষা ও ওনার দক্ষতা বেশ ভাল। আমাকে ব্যাপক স্নেহ করে। আমি অবশ্য চিন্তা-ভাবনা করে দেখলাম আমাকে এত স্নেহ করার কারন কি?
১। ভদ্রলোকের যৌবনকাল হয়তো কাজে কর্মে টাকা পয়সা ইনকামে ব্যস্ত ছিল, জীবনকে উপভোগ করতে পারে নাই। আমার বয়স কম তাই আমার মধ্য নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়।
২। বিদেশে একটা বয়সের পর মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে, টাকা পয়সা সবকিছু থাকার পর ও কারো সঙ্গ বা বিশ্বস্ত কোন মানুষ পায় না।

চেং বিখ্যাত একটি থাই বিয়ার।
ওনার সাথে সাক্ষাৎ ব্যাপক টাকা-পয়সা খরচ করে। মাঝে মাঝে নিজেই লজ্জার মধ্যে পড়ে যাই। আবার বিল দিতে চাইলে ও দেয় না, হয়তো আমি বয়সে অনেক ছোট তাই!!! ভাইয়ের জন্য আজকে কিছু নেওয়া দরকার। ভাই আবার রেড ওয়াইন খুব পছন্দ করে। একটা রেড ওয়াইন এর বোতল নিয়া গেলাম ভাইয়ের সাথে দেখা করতে।

ব্যাংককের প্রাতুনাম মার্কেট থেকে কিছু কিনা কাটা করে ওনার হোটেলে চলে গেলাম, বেশ কাছেই। লবিতে অপেক্ষা করছি!!!! ভাই মিটিং শেষ করে আসবে। রজেন ভাইয়ের সাথে অনেকদিন পর দেখা। মাস ৮ তো হবেই!!!ওনারে আমার ব্যাপক ভাল লাগে। টাকা পয়সা খরচ করে অনেক, ঠিক এজন্য না!!! মাঝারি সাইজের গোলগাল চেহারার একজন মানুষ, চোখে পোলারাইজড ডার্ক গ্রে সানগ্লাস, হাতে প্রার্ডার একটা ব্যাগ, গুচির জগারস আর টমি হিল ফিগারের পলো টিশার্টের উপর একটা বোম্বার জ্যাকেট আর মাথায় ক্যাপ। এগুলো অরিজিনাল ব্যান্ডের না রেপ্লিকা তা অবশ্য কখনো জিগায় নাই। Whatever is it!!!! A 50+ men have god damn fashion sense.

জানুয়ারি মাস, লবিতে ক্রিসমাসের সাজসজ্জা তখনই বেশ ছিল।
দুই জনের পেটেই ভাল খুদা!!! হোটেল থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম সুকুমভিত এরিয়ার দিকে। ওইখানে সম্ভবত অনেক বাংঙালী/এরাবিক রেস্টুরন্টে আছে। ল্যাম্ব স্টিক, বাটার নান, বুটের ডাল গরুর মাংস দিয়ে জমাইয়া খাইলাম। শেষে থাইল্যান্ডের ডাবের পানী এত মিষ্টি যে, চায়ের মিষ্টির কোন স্বাদ ই পাইলাম না।


ব্যাংককে এমন অসংখ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মারিজুয়ানা স্টল দেখলাম। করোনার পড়ে পর্যটক ভাটা পড়ায় কয়েক বছরের জন্য বৈধ ছিল। এখন আবার ব্যান।

তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে রজেন ভাই নিয়ে গেল মনোরম একটা স্পা প্লেস এ। একটু ব্রিফ করি!!! তা নাহলে নেগেটিভ একটা ইমপ্রেসন হবে। আফটার অল থাইল্যান্ড বলে কথা!!!!

রজেন ভাইকে পিছনে থেকে দেখে একটু ধারনা নিতে পারেন।


ড্রিংকস লাউঞ্জটি নাকি একটি ফিলিস্তিনি মহিলা চালায়। অনেক স্টাফই দেখলাম এরাবিক। ব্যাংককে অনেক শপিং মলে তারা ব্যাবসা করে।

অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে, শেষ করি। এরপর ও রজেন ভাইরে নিয়ে অনেক জায়গায় গেছি। থাই ফাইন রেস্টুরেন্টে, ক্লাব, বার গুলোতে ডার্ক স্ক্রিন বা ইন্ডিয়ানের দেখলে তেমন একটা পাত্তা বা আগ্রহ দেখায় না। কারন মুলত এরা স্লো স্পেডার। রজেন ভাই দেখলাম পুরাই আলাদা। কিন্তু ওনি কোথায় গেলেই একটা আলাদা ভাইব ক্রিয়েট হয়। মানে উনি রিপিটিডলি এই প্লেস গুলোতে যান, অনেক টাকা খরচ করেন, স্টাফদের টিপস দেন। ওনারে মজার ছলে কইলাম যে "ভাই আপনার তো বেশ জানা-শোনা ব্যাংককে, ইয়ং পোলাপাইনের জন্য একটা প্রিমিয়াম ট্রাভেল প্যাকেজ করবো নাকি"? তাচ্ছিল্য কইরা কয় বাঙালী ঘুরতে আইসা মোবাইলের সিম কিনে না, আর তুমি করবা প্রিমিয়াম প্যাকেজ? আমি হাসতে হাসতে শেষ!!!
যারা প্রথম পর্বটি দেখেননি তারা চাইলে পড়তে পারেন-ব্যাংককের অলি-গলিতে! পর্ব-১
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





