somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন জীবন- চার

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব: নতুন জীবন- তিন

খালুকে এত উদ্বিগ্ন দেখে আমি আর বলতে পারলাম  না, রোজালিন ছাড়াও এমন আরো কয়েকজন আছে! মনে মনে ঠিক করলাম, ওদেরকেও এই গোপনীয়তার প্রতিজ্ঞা করাতে হবে। প্রতিজ্ঞার কথা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়ে খালু আমার পিঠ চাপড়ে দিয়ে কাজে ফিরে গেলেন।

সেদিন সন্ধ্যায় রোজালিন আর বাকিদের কাছে আমি এই ঘটনাটা বললাম। আমাদের প্রত্যেকেই কখনও না কখনও অসতর্ক হয়েছি, আশেপাশে কেউ হয়তো তাতে ভ্রুকুটি করেছে, কিন্তু কোন সন্দেহ করেনি!! এক্সেল খালুর উদ্বেগ দেখে এখন বুঝতে পারছি, আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। সবাই এর গুরুত্ব বুঝতে পারল, সকলেই গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিজ্ঞা করল। এই প্রথম আমরা বুঝতে পারলাম, আমরা অন্যদের থেকে আলাদা, অন্যরকম মানুষ !!

৪)
 এর কিছুদিন পর একদিন খবর এলো প্রান্তভূমি- মানুষের একটা দল আমাদের কাছের এলাকায় অতর্কিতে আক্রমণ করেছে। তাদের আক্রমণ মানে অনেক কিছু লুটতরাজ হওয়া, কারণ আমাদের লোকজন এত দূরে দূরে থাকে যে, লুটপাটে বাঁধা দেবার জন্য একত্রিত হতে হতেই অনেক সময় নষ্ট হয়। জানা গেল, তারা ওয়াকনুক থেকে মাত্র সাতমাইল দূরে আছে। খবর আসা মাত্র আমাদের উঠোনে লোকজন জমায়েত হতে লাগলেন; বাবা তাদের লড়াইয়ের নির্দেশনা দিলেন,কিছুক্ষণ পর তারা প্রান্তভূমির মানুষের সাথে লড়াই করতে চলে গেলেন।

একদিন পরে তাদের একজন ফিরে এসে জানালো, যুদ্ধে  প্রান্তভূমি-মানুষেরা পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেছে, আর কয়েকজনকে ধরে বন্দী করে আনা হচ্ছে।

বিকেল বেলায় দুই বন্দী সহ আমাদের লোকজন ফিরল। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতে এলাম, আমার ধারণা ছিল প্রান্তভূমি- লোকজনের দুটো মাথা, সারা গায়ে চুল, অথবা ৫/৬ টা করে হাত-পা থাকবে। কিন্তু দেখলাম তারা একেবারে আমাদের মতই দেখতে, শুধু তাদের চুল দাঁড়ি লম্বা আর কাপড় ছেঁড়াখোঁড়া! বন্দীদের একজন বুড়ো, আরেকজনকে দেখার সাথে সাথে আমি ভীষণ চমকে গেলাম; এই লোকের দাঁড়ি কামিয়ে নতুন কাপড় পরালে দেখাবে হুবহু আমার বাবার মত!

বাবা ঘর থেকে বেরোলেন বন্দীদের দেখার জন্য। কিন্তু এই লোকটিকে দেখা মাত্র বাবার মুখ ছাইয়ের মত সাদা হয়ে গেল। লোকটাও বাবাকে দেখছিল... তীব্র ঘৃণায় লোকটির মুখ ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল! বাবা যেন ভীষণ এক ধাক্কা সামলাতে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে পড়লেন!

 বন্দীদের হাত- বাঁধা দড়ি খুলে তাদের ঘোড়া থেকে নামানো হলো। এবার আমি বুঝতে পারলাম গোলমাল কোথায়; লোকটি স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে প্রায় দেড় হাত লম্বা!! পুরো শরীর  লম্বা না, শুধু হাত- পা গুলো অস্বাভাবিক রোগা আর লম্বা! দেখে মনে হয় যেন আধা- মাকড়সা, আধা- মানুষ!

তাঁকে খাবার আর বিয়ার দেয়া হল। খেতে খেতে তিনি চারপাশ খুঁটিয়ে দেখছিলেন, আমার দিকে চোখ পড়তেই হাত নেড়ে ডাকলেন। আমি তার লম্বা হাতের নাগালের কিছুটা বাইরে থেকে কাছে গেলাম।
-তোমার নাম কি?
-ডেভিড, ডেভিড স্ট্রর্ম।
- দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি কি তোমার বাবা?
- হ্যাঁ
লোকটা বাড়ির চারপাশে আরেকবার দেখে বললেন,
-এটা তাহলে ওয়াকনুক!!

হয়তো তিনি আরো কিছু জিজ্ঞেস করতেন, কিন্তু সে সময় কে যেন আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলল! কিছুক্ষণ পর দেখি আবার বন্দীদের হাত-পা বেঁধে ঘোড়ায় চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেখে নিশ্চিন্ত বোধ করলাম। মাকড়সা মানবকে দেখার পর থেকেই আমার ভয়ানক চিন্তা আর অস্বস্তি হচ্ছিল...

কয়েকদিন পর, যখন হামলার উত্তেজনা মিলিয়ে  এসেছে, লোকজন আবার খামারের কাজে ব্যস্ত হয়েছে, তখন বাবা আবার এনগাস মর্টনের সাথে ঝামেলায় জড়ালেন। এমনিতেই দুজনের সাপে- নেউলে সম্পর্ক, এবারের ঝামেলা দৈত্য ঘোড়া নিয়ে। এনগাস মর্টন দুটো দৈত্য- ঘোড়া এনেছেন, এই খবর পেয়েই আমার বাবা ঘোড়া দেখতে গেলেন। বিশালাকৃতির ঘোড়া দুটি দেখেই বাবা নালিশ করে ফেললেন; ইন্সপেক্টর যেন অবশ্যই ঘোড়াগুলোকে বিকৃত সৃষ্টি হিসেবে ধ্বংস করে ফেলেন। 
-এগুলো ধ্বংস করা আমার এক্তিয়ারের বাইরে,  এগুলো সরকার অনুমোদিত, ইন্সপেক্টর বললেন।
-এমন ঘোড়া ঈশ্বর কখনোই বানাতে পারেন না! সরকার অনুমতি কেন দেবে?
- কিন্তু সত্যিই এগুলো অনুমোদিত। তাছাড়া এনগাস মর্টন তো তার প্রতিবেশীর স্বভাব ভালোই জানে; দৈত্য- ঘোড়া সে এনেছে সরকারি ছাড়পত্র সহই !

বাবা অনেকক্ষণ সরকার আর এনগাস মর্টন সম্পর্কে কটূক্তি করলেন, ইন্সপেক্টরকে খুব করে তাগাদা দিলেন ঘোড়াগুলোকে ধ্বংস করে দেবার জন্য। কিন্তু ইন্সপেক্টর রাজি হলেন না। বললেন,
- পারলে আপনিই এগুলোকে মেরে ফেলুন, তারপর দেখুন কি হয়!

বাবা পারলে ইন্সপেক্টরকে ধরে পেটাতেন! সেটা করতে না পারায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাড়ি ফিরে এলেন।

 পরের রবিবারে তিনি বক্তৃতায় বললেন, বিকৃতির বিরুদ্ধে সবাইকে লড়ে যেতে হবে... যারা  বিকৃতিকে লালন করে, অথবা লালন করতে সহায়তা করে, তারা শয়তানের দোসর।  ইন্সপেক্টর কিছু বললেন না, কিন্তু সকলের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, দৈত্য ঘোড়াকে বিকৃত বলাটা কেউ পছন্দ করছে না... 

চলবে...






সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৫
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×