সামুতে লিখছি চার বছর ধরে, আর তার আগে আরো দুই বছর পাঠক ছিলাম। এই অর্ধ যুগে সামু নিয়ে মনে যত কথা জমেছে তার পরিমাণ খুব কম না। ক'দিন আগে সামুতে আমার চার বছর পূর্ণ হলো, তাই এইবেলা একটা "যা দেখেছি যা পেয়েছি তুলনা তার নাই..." ধরণের পোস্ট দিয়ে ফেলি, যাবার বেলা হুট করে যদি এসেই যায়... সেক্ষেত্রে, শিরোনামে যা বলেছি তাই আবার বলি, সামুতে বিচরণের আনন্দটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া থাকবে।
অচেনাকে ভয় কী আমার ওরে
অচেনাকে চিনে চিনে উঠবে জীবন ভরে।
অচেনা এই ভুবন-মাঝে কত সুরেই হৃদয় বাজে-
অচেনা এই জীবন আমার, বেড়াই তারি ঘোরে ।।
সামুর এই ভার্চুয়াল ভুবনে না এলে জানা হতো না কত সুরে কত হৃদয় বাজে... কখনো কোনো সুরে নিজে সুর মিলিয়েছি... সেটা আনন্দময় অভিজ্ঞতা। অবশ্য কখনো সখনো সুর কেটেও গেছে, সেটা মাত্র দুয়েক বার...
সামুতে এসে সবচেয়ে প্রথম পাওয়া "নিজেকে জানা"। গ্রীসের সক্রেটিস বলতেন "নিজেকে জানো", সামুর সক্রেটিস "নিজেকে জানো" বলেন না, বরং তিনি নিজেই অন্য ব্লগারদের জানিয়ে দেন তাঁরা আসলে কী! উনি না থাকলে কখনো জানা হতো না মুরগি, ডোডোপাখি, লিলিপুট আর পিগমিরাও আজকাল সামুতে ব্লগিং করে, জানতাম না, আমার মাথা ভরা মুরগির মগজ...
সামুতে এসে দ্বিতীয় পাওয়া, ব্লগার কাকে বলে তা জানা, এখানে না এলে হয়ত ব্লগার সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েই যেত! যারা ব্লগিং করেন না, তারা কি জানেন ব্লগিং বা ব্লগার কাকে বলে? আমি সুযোগ পেলেই জানতে চেষ্টা করেছি মানুষ ব্লগারদের সম্পর্কে কী ভাবেন। ফেসবুকে যেমন শিক্ষিত/ অশিক্ষিত নির্বিশেষে সবাই যান, ব্লগে সেভাবে সবাই যেতে পারেন না; কারণ শিক্ষিত এবং মননশীল না হলে ব্লগে করার তেমন কিছু থাকে না। আশ্চর্য হয়েছি জেনে, ফেসবুকের অনেক পন্ডিত ব্লগ/ ব্লগার সম্পর্কে কিছুই জানেন না! আবার যারা কিছু জানেন বলে দাবি করেন তাদের বেশিরভাগই ভুল জানেন; এর কারণ হয়ত ব্লগার শব্দটার সাথে তাদের প্রথম পরিচয় ঘটেছিল নেতিবাচক খবরের মাধ্যমে। ধরে নিলাম যে দেশের মানুষেরা নেতিবাচক খবর পড়ে ব্লগারদের সম্পর্কে এমন ভুল ধারণা পোষণ করেন, কিন্তু প্রবাসী শিক্ষিত বাংলাদেশীরা এদেশের ব্লগারদের সম্পর্কে কী ভাবেন? তাঁরাও হয়তো ইতিবাচক কিছু ভাবেন না! আমি এমন মনে করছি কারণ কিছুদিন আগে আমার এক বিদূষী আত্মীয়া আমার হয়ে একটা ফর্ম পূরণ করতে ( টু চাঁদগাজী: এটা পূরণ করার মতো মগজ আমারও আছে!) গিয়ে এক জায়গায় একটা প্রশ্ন পান সামাজিক মাধ্যমে বিচরণ সংক্রান্ত। জানালাম আমি ফেসবুকে না, ব্লগে আছি। আমার আত্মীয়া বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, "ব্লগ শুনলে খারাপ ধারণা করতে পারে, তাই ব্লগের কথা জানাবার দরকার নেই"... শুনে মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল, তাই জানতে চাই নি খারাপ কী ধারণা করতে পারে! কেউ কখনো আমার কাছে জানতেই চান নি ব্লগে কী লিখি, বরং নিজেই নিজের মতো করে ধারণা করে নেন ব্লগে না জানি কী ভয়ংকর বিষয়ে লেখা হয়!! মানুষের এই ভুল ধারণা দেখে খারাপ লাগে... জানি না কীভাবে এই ধারণা বদলানো যায়!!
ব্লগ সম্পর্কে আমার ধারণা কী!! আমার মনে হয় ব্লগ এক বিশাল দেয়াল, যেখানে আমি
দেয়ালে দেয়ালে, মনের খেয়ালে, লিখি কথা
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার, স্বাধীনতা!
যার খুশি সে লেখা পড়ছে, যার খুশি না পড়ে চলে যাচ্ছে। অন্যরাও সেখানে লিখছেন, আমি কারো লেখা পড়ছি, কারো লেখা পড়ছি না। সব লেখাই ভালো তা নয়, অনেক মিথ্যা/ ভুল তথ্য ভরা লেখা ব্লগে দেখি কিন্তু কারো মহা ক্ষতি হয়ে যাবে এমন লেখা ব্লগে আমি দেখিনি। তবে মাঝেমধ্যে এই সুন্দর দেয়ালটা কোন দুর্বৃত্ত এসে নোংরা করে পালিয়ে যায়! আমি খুব করে চাই একদিন এই দুর্বৃত্ত ধরা পড়ুক, আমরা তাকে চিনে রাখি...
আমি কেমন ব্লগার? ব্লগার- রেটিংয়ে আমার মান গড়মানের তুলনায় খুবই কম, চারবছরে আমার পোস্ট ৮৬টা! অনেকে এক মাসেই এরচেয়ে বেশি পোস্ট করেন! অনেকগুলো ব্লগের পাঠক আমি কিন্তু সবচাইতে ভালো লাগে সামহোয়্যারইন ব্লগ, অন্য কোনো ব্লগেই আমি এই ব্লগের মতো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না! এত বিচিত্র বিষয়ে লেখা, ছবি ব্লগ- এসব আমি আর কোন ব্লগে পাইনি!! এই ব্লগে এসেছি হঠাৎ করেই; যে সময়টাতে ব্লগার নিয়ে খুব আলোচনা চলছিল তখন আমার জানার ইচ্ছা হল ব্লগ আর ব্লগার সম্পর্কে। একটা ব্লগের খোঁজ পেলাম কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলাম বড্ড একপেশে লেখা, একেবারেই ভালো লাগলো না। সামুর খোঁজ পেলাম আরও বছরখানেক পরে, প্রথম পরিচয়েই ভালো লাগা। বছর দুয়েক পর লেখার ইচ্ছা হল। নিক নিলাম করুনাধারা, এই নিকেরও একটা গল্প আছে। সুন্দর একটা নিক পছন্দ করে রেজিস্ট্রার করতে গিয়ে দেখি সেই নামে আগেই কেউ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এভাবে ১০/১২ বার চেষ্টা করার পর হয়রান হয়ে গেলাম, সব নিকই আগে নেয়া হয়ে গেছে! সেসময়একটা গান বাজছিল, শুনতে শুনতে আনমনে করুনাধারা নামে রেজিষ্ট্রেশন করতে গেলাম, দেখি সাথে সাথে হয়ে গেল। "আরে এটা তো ভুল করে করেছি, বানানটাও তো ভুল...থুক্কু", বলে নিক বদলাবার অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল ... এর তিন দিন পর পোস্ট দিতেই প্রথম পাতায় গেল। সমস্যা হলো কেউ সেই পোস্ট পড়েনা, যেন অদৃশ্য কালিতে লেখা। আবার দিলাম, এবার ২/৩ জন পাঠক পেলাম। এভাবে কিছু দেখে, কিছু ঠেকে আস্তে আস্তে আমারব্লগিং এগোতে লাগলো। মন্তব্যের উত্তর কীভাবে হলুদ রঙে রাঙাতে হয় এটা শিখতে অনেক দিন লেগেছে। ব্লগের প্রথম দিনগুলোতে মনে হতো অজ পাড়াগাঁ থেকে প্রথমবার এসে গুলিস্তানে নেমেছি, চারপাশে অসংখ্য মানুষ অথচ কেউ আমাকে দেখছে না, আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কেবল সবাইকে দেখে চলেছি... যে কোন জায়গায় কিছুদিন থাকলে বেশ পরিচিতি হয়ে যায়, সামুতে আমারও অনেকের সাথে পরিচয় হলো। পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে অনেকের সাথে হৃদ্যতা গড়ে উঠলো, আবার কখন তাদের অনেককেই হারিয়ে ফেললাম!! যাদের হারিয়ে ফেলেছি তাদের ভুলে যাইনি। জানি বাস্তব জীবনের গোলক ধাঁধায় পথ হারিয়ে সামুর এই ভার্চুয়াল জগতে অনেক ব্লগার আর ফিরতে পারেন না। কিন্তু কারো কারো অনুপস্থিতি উদ্বেগ তৈরি করে, যেমন আমার প্রিয় ব্লগার মানবী'র অনুপস্থিতি। একদিন কোন এক পোস্টে 'মানবী'র করা মন্তব্যের দেখলাম উত্তরে দেখলাম পোস্টদাতা তাকে জিজ্ঞেস করছেন, "... আপনি এখন কেমন আছেন?" মানবী উত্তরে বলছেন, "বেশি ভালো না।" এরকিছুদিন পর থেকে (৫ই জুন, ২০১৭) তিনি আর ব্লগে আসেন না, কিন্তু প্রায়ই তাকে আমার মনে পড়ে! মানবী লিখতেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, তা সমাজে বা ব্লগে যেখানেই হোক না কেন এবং খুবই বলিষ্ঠ ভাবে তিনি নিজের মত প্রকাশ করতেন। মাঝে মাঝে তিনি গানের পোস্ট বা গল্পের পোস্ট দিতেন, সেগুলোও সমান মুগ্ধতা নিয়ে পড়তাম। মানবীর ব্লগ লিঙ্ক: view this link
"আমি ভালো নেই" একথা বলার পর যেই ব্লগারকেই ব্লগে অনুপস্থিত দেখি তার জন্যই উদ্বেগ অনুভব করি, যেমন কিছুদিন থেকে অনুপস্থিত ব্লগার শের শায়রী, আর আরোগ্য। আমার ঐকান্তিক প্রার্থনা, মানবী আর হারিয়ে যাওয়া সব ব্লগাররা যেন ভালো থাকেন, আবার যেন তারা সামুতে ফিরে আসেন।
হারিয়ে যাওয়া ব্লগারদের মতো হারিয়ে ফেলা কিছু পোস্টের জন্যও মনখারাপ হয়। একবার একটা পোস্টে পড়েছিলাম, কীভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর একজন স্পেনীয় কবির লেখা সন্ধ্যাকাশের মেঘমালা নিয়ে লেখা কবিতা কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছিল; পোস্টটা এত চমৎকার ছিল, পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল শরতের সন্ধ্যার আকাশ দেখছি, আর ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসছে গান, "তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা..." । পোস্টের নাম, লেখকের নাম কিছু মনে ছিল না, তাই ক'দিন পর আবার যখন পোস্টটা পড়তে ইচ্ছা হলো তখন খুঁজে পেলাম না। এর বেশ কিছুদিন পর জেনেছি পছন্দের পোস্ট প্রিয়তে রেখে দিলে বারবার পড়া যায়। একটাই সমস্যা, অফলাইনে পড়ার সময় প্রিয়তে নেয়া যায়না, আর আমি বেশিরভাগ সময় অফলাইনেই পড়ি!! অফলাইনে থেকেও বুকমার্ক করা যায়, তাই আমার ভাললাগার পোস্ট প্রিয়তে না, বুকমার্ক করে রাখি।
প্রথম দিকে আমি ল্যাপটপে লিখলেও বেশ কিছুদিন থেকে মোবাইলে সামু পড়ি ও লিখি। এতে বেশ সমস্যা হচ্ছে; সামু মোবাইল ব্যবহারকারীদের প্রতি ভীষণভাবে অবন্ধুসুলভ! অথচ অধিকাংশ ব্লগার মোবাইলেই সামু ভিজিট করেন। জানিনা কেন, মোবাইল দিয়ে সামু ব্যবহার করার অসুবিধা দিন দিন বেড়েই চলেছে... ইদানিং কালের অসুবিধা, কোন লিঙ্কে ক্লিক করলে সেই পোস্ট না এসে প্রথম পাতা এসে যায়....... কেন যে মোবাইল ওয়ালাদের উপর সামুর এত বিরাগ!!
অবশ্য সামু পোস্ট দাতাদের প্রতি বেশ সদয়, তাদের অনুপ্রেরণা দেবার জন্য প্লাস দেবার ব্যবস্থা আছে। ফালতু পোস্টে মাইনাস দেয়ার ব্যবস্থা নেই কিন্তু!! এই প্লাস দেয়া নিয়ে আমার একটা ঘটনা মনে পড়ছে। একবার এক ফালতু পোস্ট পড়ে যাচ্ছেতাই রকম বিরক্ত লাগল, সকলের মন্তব্যেই বিরক্তির প্রকাশ দেখলাম। আমিও তেমনি একটা মন্তব্য করলাম। তারপর দেখি সেই পোস্টে একটা প্লাস! এমন পোস্টে কে প্লাস দিলেন তাকে দেখা দরকার ভেবে নাম দেখতে গেলাম... নাম দেখতে পারলাম না বরং দেখলাম প্লাসের সংখ্যা বেড়ে দুই হয়ে গেছে... দ্বিতীয় প্লাসদাতা আমি!!! নাম দেখতে গেলে বামের সংখ্যার উপরে ক্লিক করতে হয়, আমি বিরক্তির ঠেলায় সংখ্যায় ক্লিক না করে তার পাশের হাত চিহ্নে ক্লিক করে ফেলেছিলাম...
সামুকে ভালো লাগে নানা স্বাদের পোস্টের জন্য, তবে পড়ি শুধু সহজবোধ্য হাসিখুশি পোস্ট, জ্ঞানে ঠাসা পোস্ট এড়িয়ে যাই, আমার বুদ্ধি কম। আরেক ধরনের পোস্ট সামুতে দেখলে বিরক্ত হই, একে আমি বলি শবে বরাতের হালুয়া পোস্ট। এই নামকরণের কারণ বোঝাতে গেলে আমার শৈশবে যেতে হবে। ছোটবেলায় শবে বরাতের সময় পাড়ায় এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে নানা রকম হালুয়া/ বরফি বিনিময় হতো। অনেকে আবার হালুয়া/ বরফি বানাতেন না, বরং এক বাড়িরটা আরেক বাড়িতে দিয়ে দিতেন, দেয়ার সময় প্রায়ই ভুলে যেতেন কোন হালুয়া কোন বাড়ি থেকে এসেছে। ফলে প্রায়ই অন্য বাড়ি থেকে আসা প্লেটের ঢাকনা খুলে দেখতাম আমাদের বাড়ির হালুয়াই ফিরে এসেছে!!! মাঝে মাঝেই সামু খুলে দেখি, অনলাইন পত্রিকা, কোরা বা ফেসবুকের পোস্ট হুবহু কপি পেস্ট করে কেউ পোস্ট করেছেন, এ যে কপি পেস্ট তা উল্লেখও না করেই, বরং বেশ ভাব নিয়ে পোস্ট বিষয়ক মন্তব্যের উত্তর করছেন !! এমন পোস্ট দেখলেই আমার ছোট বেলার ঠকানো হালুয়ার কথা মনে পড়ে... (আমার গত পোস্ট কপি পেস্ট হালুয়া পোস্ট, কিন্তু তার সাথে আমি নিজের দুচার লাইনের পাঁচ ফোড়ন যোগ করেছি।)
ঠকানো পোস্ট আরো আছে। একবার একটা পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো, হাতে অনেকটা সময় ছিল তাই দীর্ঘ এক মন্তব্য লিখলাম। মন্তব্য পোস্ট করতে গিয়ে দেখি বার্তা এসেছে:
একটা ভুল পাওয়া গেছে।
লেখক এই পোস্টে কোনো মন্তব্য গ্রহণ করবেন না।
আরেকবার এক পোস্টে প্রথম পাতায় ১০/১২ বাক্যে এমনভাবে লেখক রহস্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন যে, আমি সেইটুকু পড়ে চুলা থেকে ভাত নামাবার কথা ভুলে গেলাম, রহস্যের শেষ জানার জন্য "বাকিটুকু পড়ুন" দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। দেখি বার্তা এল:
"এই লেখাটি লেখক নিজে সরিয়ে ফেলেছেন। অনুগ্রহ পূর্বক লেখকের সাথে যোগাযোগ করুন।" লেখক তো ভাগলবা... পাঠকের অবস্থা কল্পনা করে হয়তো হেসে কুটিকুটি হচ্ছেন!
ইদানিং স্মৃতি বড় লুকোচুরি খেলা করে, তাই প্রিয় ব্লগারদের দীর্ঘ তালিকা থেকে কারো নাম বাদ পড়ে যেতে পারে বলে সেই তালিকা সরিয়ে রাখলাম! এখন শুধু সামুর অসাধারণ দুজন ব্লগারের কথা বলি, দিবস রজনীর দীর্ঘ সময় তারা সামুতে থাকেন। এরা দুজন না থাকলে সামু অন্ধকার হয়ে যাবে, কারণ ব্লগে দেয়া নিক অনুসারে তারা দু'জনেই আলোকের উৎস!! দু'জনেই এক অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী- পোস্ট না পড়েই তারা অসাধারণ মন্তব্য করতে পারেন, কখনো মন্তব্যে দার্শনিকতার ছোঁয়াও থাকে। যেমন ভ্রমণ পোস্ট পড়ে হয়ত একজন মন্তব্য করলেন, "কাঁচামরিচ চিবিয়ে দেখেছি, কোথাও মিষ্টি নেই!" আরেকজন লিখলেন, "নিউইয়র্কের মেয়েরা অবশ্যই লিলিপুট মেয়েদের চেয়ে লম্বা!" এছাড়া আরেকজন ব্লগারকে আমার অসাধারণ মনে হয়, কারণ তার দেয়া তথ্যানুযায়ী তিনি বাহাত্তর বছর বয়সে তিনি ব্লগিং শুরু করেছেন! ৭ মাস ধরে তিনি ব্লগে আছেন, প্রায় ১৫০০ মন্তব্য করেছেন। নিজের গুরুত্ব বাড়াতে হয়তো, তিনি প্রথম দিকে প্রত্যেক মন্তব্যের শুরুতে লিখতেন, "১৯৬২ সালে আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি..." ১৯৬২তে ১৪ বছর বয়স হলে ২০২০ এ তার বয়স ৭২ বছর!! এই বয়স্ক মানুষটি যদি হারিয়ে যান তবে তিনি ধরাধাম ত্যাগ করেছেন বলে কি দুঃখ পাবো!! না, পাবো না! কারণ তিনি যার মাল্টি তিনি কমবয়সী, প্রতিদিন একাধিক পোস্ট দিচ্ছেন !!
দোয়া করি, এই ব্লগাররা সামুতে দীর্ঘদিন আমাদের আমোদের উৎস হয়ে ব্লগিং করতে থাকুন।
অন্যের পোস্টে মন্তব্য করা, কিংবা নিজের পোস্টে মন্তব্যের উত্তর দেয়া, এসব ব্যাপারে একেকজন ব্লগার একেক ধরনের। অনেকেই আমার মত, চেনা পরিচিতদের পোস্টে মন্তব্য করাকে প্রাধান্য দেন। আমি আগে কোন পোস্ট ভালো লাগলেই মন্তব্য করতাম, এখন ভেবেচিন্তে মন্তব্য করি। অনেক পোস্ট দাতা কারো কোন মন্তব্যের উত্তর দেন না, এটা ততটা খারাপ লাগে না। কিন্তু খারাপ লাগে যখন পোস্ট দাতা স্কিপ করে মন্তব্যের উত্তর দেন আর আমার মন্তব্যের উত্তর দেননা। আমার মনে হয় প্রতিটি মন্তব্যের উত্তর দেয়া পোস্টদাতার কর্তব্য ও একধরনের শিষ্টাচার, যদি না মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক ও আক্রমণাত্মক হয়। অনেক ব্লগার ব্যস্ততার কারণে পোস্টে মন্তব্যের উত্তর দিতে না পারলে তা জানিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু পোস্ট দিয়েই যদি গায়েব হতে হয় তবে তেমন পোস্ট না করলেই তো হয়! একজন ব্লগার আছেন যিনি নতুন-পুরানো নির্বিচারে সবার পোস্টে মন্তব্য করেন। যখন আমি ব্লগে নতুন, পোস্টে কেউ মন্তব্য করতেন না, তখন এই ব্লগার আমার পোস্টে নিয়মিত মন্তব্য করতেন। তার সম্পর্কে এই কবিতা মনে হয়েছে:
প্রাচীরের ছিদ্রে এক নামগোত্রহীন
ফুটিয়াছে ছোটো ফুল অতিশয় দীন।
ধিক্ ধিক্ করে তারে কাননে সবাই--
সূর্য উঠে বলে তারে, ভালো আছ ভাই?
এই ব্লগার কে? ধাঁধা দিলাম, দ্যাখেন পারেন কিনা! একটা ক্লু দেই, আমার সবকটা পোস্টে এই ব্লগারের এক বা একাধিক মন্তব্য আছে।
আরেকটা কবিতা মনে পড়ল,
চালুনী বলে সুঁই তোর পিঠে ছ্যাদা কেন...
একজনের নাম সামুর ব্লগার হিসেবে দেখে খুব অবাক আর খুশি হয়েছিলাম- ইনি সাহাদাত উদরাজী। আজ উনার বারো বছর পূর্তি পোস্ট দেখে পুরানো স্মৃতি মনে পড়ল... আমি বাজারের কচুশাক খাই না, (ড্রেণের পাশ থেকে তুলে আনা) সুতরাং রান্নাও জানিনা। একবার এক গ্রামে গিয়ে অনেক কচুশাক পেলাম, সেগুলো তুলে এনে রান্নার জন্য গুগলে রেসিপি সার্চ । অনেক গুলো রেসিপি এল, আমি বেছে নিলাম সাহাদাত উদরাজী নামের একজনের রেসিপি কারণ মনে হলো উদরাজী মানে উদর+ রাজি, এর রেসিপি নিশ্চয় ভালো হবে। হলোও তাই, চমৎকার স্বাদ! এর কদিন পর সামুতে দেখি এক ব্লগারের নাম সাহাদাত উদরাজী, মিলিয়ে দেখলাম ইনিই রেসিপির উদরাজী! খুব আনন্দ হলো উনাকে সামুতে দেখে... অবশ্য সামুতে উনি রান্নার পোস্ট দেন না!!
ধন্যবাদ জোবাইরকে অসাধারণ কথাটার জন্য...
ধন্যবাদ সামুর কর্তৃপক্ষকে, এমন চমৎকার একটা ভার্চুয়াল আকাশ তৈরি করে দেবার জন্য।
ধন্যবাদ সামুর সহব্লগারদের, আমার অনেকটা সময় আনন্দময় করে তোলার জন্য।
শুভকামনা সবার জন্য, আমরা সবাই যেন করোনার সময়টা অতিক্রম করতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২১ বিকাল ৫:০৫