প্রখ্যাত লেখক সালমান রুশদিকে নিউইয়র্কে একটি সভায় খুব নৃশংসভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। আক্রমণের ফলে তিনি খুব গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। ইতিমধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন একটি চোখ। বেঁচে ফিরতে পারা নিয়েও সংশয় রয়েছে । আক্রমণকারী হাদি মাতার ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। তাঁর নিন্দিত নন্দিত “স্যাটেনিক ভার্সেস” প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ধর্মান্ধ মুসলিমদের কাছে রাতারাতি খলনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনি তার মাথার দাম ঘোষণা করার পর থেকে তাকে আক্রমণ করার সুযোগ খুঁজছিল উন্মত্ত ধর্মান্ধরা। অবশেষে তারাই সফল।
এই সমস্ত হিংস্র ধর্মান্ধরাই চাপাতির কোপে হত্যা করেছিলো প্রখ্যাত লেখক অভিজিৎ রায়কে, অনন্ত দাস বিজয় আর ওয়াশিকুর রহমান বাবুসহ আরও অনেককে। কলম হয়ে উঠেছিলো তাদের শত্রু। লেখা হয়ে উঠেছিলো তাদের শত্রু। সেই শত্রুতার এমনই তেজ, যে উন্মত্ত হিংস্র আক্রমণ করা ছাড়া আর কোনও দিশা পাচ্ছিলো না তারা।
কথা হচ্ছে একজন লেখক কোনও লেখা লিখে যদি কারো মন জোগাতে না পারেন তাহলে তার বিরোধিতা করার অনেক উপায় আছে। সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হচ্ছে কলম দিয়ে কলমের জবাব দেয়া। সেটা না করে যখন তাকে কেউ শারীরিকভাবে আক্রমণ করতে ইচ্ছুক হয়ে পড়ে ততোক্ষণে কিন্তু সেই আক্রমণোদ্যত ব্যক্তির নৈতিক পরাজয় ঘটে গেছে। এটা পরিষ্কার যে কলম দিয়ে কলমের জবাব দেয়ার মতো কোনোরকমের বুদ্ধিবৃত্তিক বা জ্ঞানগত যোগ্যতা তার নেই। আছে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে শোধ নেয়া, যেটা ভয়াবহ রকমের নিন্দনীয় এবং কাপুরুষোচিত কাজ। কোনও লেখকের একটি লেখায় কারো বিশ্বাসের ভিত যদি কেঁপে উঠে তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তির বিশ্বাসের ভিত কতোটা দুর্বল, কতোটা ঠুনকো, নড়বড়ে। এবং সে আক্রমণের কারণ যদি হয় ধর্ম তাহলে আর যাই হোক তাতে ধর্মের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে না কোনোভাবেই। বরং তাতে করে অসম্মানই জোটে সে ধর্মের, তা সে যতো বড় ধর্মই হোক না কেন। ধর্মের সমালোচনা করার কারণে সে ধর্মের অনুসারীদের কাছ থেকে নির্মম আক্রমণ করার ঘটনা ঘটলে সেটা কোনোভাবেই সেই ধর্মের মাহাত্ম যেমন প্রকাশ করে না তেমনি সেই ধর্মকে সম্মান করারও কোনও ভিত্তি থাকে না। অন্তত সভ্য সমাজে থাকে না।
আর যদি চোখের বদলে চোখ আর খুনের বদলে খুন নীতির মতো অসহিষ্ণু হয়ে থাকেন, জঙ্গিবাদী মানসিকতার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ও আপনারা আর যাই হোক সভ্য সমাজের মানুষ নন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৩২