গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হলেও এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভূত কিন্তু প্রশাসনে রয়ে গেছে। বিগত প্রায় দেড় যুগ ধরে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার সময় গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত প্রশাসনের প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে নিয়োগ দিয়েছে শুধুমাত্র নিজেদের লোক। শুধুমাত্র দলীয় ভিত্তিতে দলীয় স্বার্থে এসব ক্ষেত্রে নিজেদের পক্ষের লোক মনোনায়ন দিয়ে কার্যত আমলা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অন্যান্য আধা সামরিক বাহিনী, আইন বিভাগ, পরিবহন বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে শুরু করে সমস্ত সরকারী বিভাগে কোনও নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে নিজেদের পক্ষের লোক নিয়োগ দিয়েছে। আর এমনভাবে দিয়েছে যে কখনো সরকার বদল হলে যে এদের হটিয়ে আপনি অন্য লোক বসাবেন এসব পদে সেরকম যোগ্য লোক তৈরি হওয়ার কোনও পথ পর্যন্ত খোলা রাখেনি আওয়ামী লীগ। যে কারণে গণ অভ্যুত্থানে তারা উৎখাত হলেও, নতুন সরকার ক্ষমতায় এলেও আমলা, সচিবালয় থেকে প্রশাসনের বিশাল অংশটায় কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
এখন কথা হচ্ছে, তাহলে ইউনুসের ইন্টারীম সরকার কি করলো এতদিনে?
হ্যাঁ, ইউনুসের সরকার সেক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ অবশ্যই।
কিন্তু কথা হচ্ছে, বিগত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ যেভাবে সব জায়গায় নিজেদের লোক বসিয়েছে এবং অন্য কোনোভাবে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যোগ্য লোক তৈরি হওয়ার কোনও পথই রাখেনি সেখানে আপনি এখন কিভাবে এসব আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া সবাইকে ঢালাওভাবে সরিয়ে অন্য লোক বসাবেন?
যাকে বসাবেন তাকে তো প্রশাসন চালানোর মতো উপযুক্ত হতে হবে। যোগ্য হতে হবে। আর এসব ক্ষেত্রে যোগ্যতা রাতারাতি তৈরি হয়না। যোগ্য লোক রাতারাতি তৈরি হয়না। এর জন্য যথেষ্ট সময় লাগে।
আপনি কতো জনকে সরাবেন?
আর এতো জনকে সরিয়ে সেই পরিমাণ বিকল্প যোগ্য লোক কই পাবেন?
নিজেদের দলীয় লোক ছাড়া এসব প্রশাসন চালানোর মতো কোনও যোগ্য লোক তৈরি হওয়ার পথই তো খোলা রাখেনি গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও এজন্য এখনো আমলা থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিরাট অংশ তাদের আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের দিয়েই চলছে।
নিশ্চিত করে বলতে পারি আপনাকে এনে আজ উপদেষ্টা বানিয়ে দিলেও আপনি এই প্রশাসন ঠিকমতো চালাতে পারবেন না, নিজেকে যতোই বুদ্ধিমান ভেবে থাকুন না কেন। আমার মতো অধমের কথা না হয় বাদই দিলাম।
দেশে নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে রেখে এখনো যেভাবে খেল দেখাচ্ছে অবৈধ সিণ্ডিকেট, এই অবৈধ সিণ্ডিকেটগুলো যে আওয়ামী লীগের সময়ই জেঁকে বসেছে, সে কথা বলাই বাহুল্য।
আপনি যে ব্যবস্থা নিবেন এদের বিরুদ্ধে, কার মাধ্যমে নেবেন? নিতে হলে তো সেই তাদের আমলেই নিয়োগ পাওয়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিতে হবে। তারা কি এক্ষেত্রে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করবে মনে করেছেন?
এখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আপনি বদলাতে চান, ভালো কথা। এতো দ্রুত হাজার হাজার লোক বদলানো কি মুখের কথা?
প্রায় একই অবস্থা প্রায় সব প্রশাসনিক ক্ষেত্রে।
আপনি কাকে সরিয়ে কাকে বসাবেন? কাকে দিয়ে সরাবেন? যাকে দিয়ে সরাতে চাইবেন দেখুন গিয়ে সেও আসলে তাদেরই লোক।
এখন কথা হচ্ছে, এই যে সচিবালয়ে আগুন লাগলো, বলা ভালো লাগানো হল, এতে করে লাভ কাদের? কারা লাগাল?
এটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগেনা।
বিগত ১৬/১৭ বছরে যে কি ভয়াবহ পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোর নানা প্রমাণ, সাক্ষী সাবুত পাওয়া যাবে সচিবালয়ে রক্ষিত বিভিন্ন নথিপত্র ঘাঁটলে। কারণ সরকারী পর্যায়ে সরকারের সমস্ত কার্যক্রমের রেকর্ড থাকে এই সচিবালয়ের নথিপত্রগুলোতে। আপনি যদি সরকারের দুর্নীতির তদন্ত করতে যান তাহলে এই সমস্ত নথিগুলো সাক্ষ্য-প্রমাণ যোগাড় করার জন্য অবশ্যই লাগবে।
এইবারে বুঝে দেখুন, এতো বড় স্যাবোটেজ কারা করে থাকতে পারে?
প্রশাসনের ভেতরে ভেতরে আওয়ামী এজেন্টরা খুবই ভালভাবে ঘাপটি মেরে আছে। সময়মত ছোবল মারবে।
এবং সময়মত ছোবল মারার জন্য এরা কিন্তু ওঁত পেতে থাকবে। থাকবেই।
সামনে হয়তো এরকম আরও অনেক “খেলা” দেখতে পাবেন। রেডি থাকেন সবাই!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২৬