উপমহাদেশের কালজয়ী লোকসঙ্গীত শিল্পী আবদুল আলীমের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মাত্র তেরো বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড হয়। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় যান এবং সেখানে আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গান করেছেন। ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল আলীম। ১৯৭৭ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করে বাংলাদেশ সরকার।
দেশ বিভাগের পরে আব্দুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আব্দুল আলীম গান করেছেন। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। তিনি অন্যের গাওয়া গান শুনে গান শিখতেন। আর বিভিন্ন পালা পার্বণে সেগুলো গাইতেন। ১৯৪২ সাল। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এলেন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বড় ভাই শেখ হাবিব আলী আবদুল আলীমকে নিয়ে গেলেন সেই অনুষ্ঠানে। শিল্পী ধীর পায়ে মঞ্চে এসে গান ধরলেন, ‘সদা মন চাহে মদিনা যাবো।’
আব্দুল আলীম বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার। আবদুল আলীম মারফতি-মুর্শিদি গানে ছিলেন অদ্বিতীয়। তিনি ৫০০ স' গান গেয়েছেন। এবং গুলো গানই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই যুগে এসেও তার গান মানুষকে আনন্দ দেয়, শান্তি দেয় এবং মুগ্ধ করে। আজ গ্রাম বাংলায় তার গান কৃষকের মুখে মুখে থাকে। এই শিল্পিকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
তাঁর কিছু অবিস্মরণীয় গান হলো:
# নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা
# সর্বনাশা পদ্মা নদী
# হলুদিয়া পাখী
# মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম
# এই যে দুনিয়া
# দোল দোল দুলনি
# দুয়ারে আইসাছে পালকি
# কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ
# মনে বড় আশা ছিল যাবো মদীনায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪০