somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্রদের নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কি সফলতার মুখ দেখবে?

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের ছাত্র শব্দটি বর্তমানে খুব সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। ১৫/১৬ বছরের কোন ছেলে যদি পড়াশোনা না করে গ্যারেজে কাজ করে, কিশোর অপরাধের সাথে জড়িত হয়, চুরি ডাকাতি করে আবার ভোল পাল্টিয়ে ছাত্র নামে রাজনীতি করে মানুষের সিমপ্যাথি আদায় করতে চায় আমাদের সকলের উচিত তাদের বয়কট করা। ছাত্র বা শিক্ষার্থী খুব মর্যাদাপূর্ণ একটি উপাধি যার মাধ্যমে আলোর পথের অনুসারীদের বোঝানো হয়। জ্ঞান আহরণের প্রতি যারা তীব্র ক্ষুধা আছে তাদের বোঝানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় অছাত্ররা ছাত্রদের বেশে জনগণ কে বিভ্রান্ত করছে। সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে সে বৈষম্য বিরোধী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে দেশে এক ধরণের সংকট চলছে। তারা অতি বিপ্লবী চেতনা অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দেশ স্থিতিশীল হউক তা চাইছে না। যারা এক সময় সাধারণ মানুষের বাহবা পেয়েছিল তারাই এখন বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বুঝতে পেরে মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের নিয়ে প্রথম যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা হলো ইন্টেরিম সরকারে থেকে রাজনৈতিক দল গঠন। রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক দেশে গঠন করা যেতেই পারে কিন্তু সরকারের পরিপূর্ণ সাপোর্ট নিয়ে দল গঠন করে ক্ষমতায় যেতে চাইলে এদেশের মানুষ তা মানবে না। রাজনৈতিক দলগুলো বারবার বলছে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল আসলে কেমন হবে ? দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্রদের সংগঠন আছে তারাও কি ছাত্রদের গঠিত নয়া দলের অংশ হবে ? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্ররাজনীতি সাধারণ বিষয় এবং তা বড়ো রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসাবে পরিচিত লাভ করে। কিন্তু সরাসরি রাজনৈতিক দল ছাত্রদের মাধ্যমে গঠিত হলে তা কি সকল ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করবে? ছাত্ররা আজীবন ছাত্র থাকবেন না। যখন তারা অছাত্র হয়ে যাবেন তখন কি দল থেকে সরে যাবেন? এই প্রশ্নগুলোর সাথে আমাদের দেশের তরুণদের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র সংগঠন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। উত্তরায় ছাত্র-জনতার নামধারী কতিপয় যুবক কে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কতিপয় সদস্য থানায় হামলা করে। এ যেন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা কে মনে করিয়ে দিচ্ছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব তারা পালন করতে চাইছে যা আমাদের দেশের সরকারের দুর্বলতম দিক । সরকার আমলাতন্ত্র কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। তাই সরকারের ছাত্র সংগঠন হিসাবে ছাত্রদের দুইটি অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম রয়েছে যারা জনগণের জানমাল হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছে। যেখানেই কোন গ্যাঞ্জাম সেখানেই তারা ঢুকে পড়ছে যা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না । সর্বশেষ গাজীপুরে সংগঠিত হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা তাই প্রমাণ করে। আমাদের দেশের মানুষ রক্ষণশীল হওয়াতে কিশোর ও তরুণদের পাকনামি ভালো চোখে দেখে না। গাজীপুরের হামলার সূত্রপাত যে কারণে ঘটুক এর দায় ইন্টেরিম সরকার ও অরাজনৈতিক সংগঠনের তথাকথিত ছাত্রদের নিতে হবে। সরকার একদিকে আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করতে পারছে না আবার তথাকথিত ছাত্রদের দিয়ে দমন করাতে চাইছে এ ধরণের পলিটিক্স দেশের মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি হিসাবে বিবেচিত সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারিতে আত্নপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার ভাষণ কে কেন্দ্র করে সারা দেশে ছাত্র-জনতার নাম ধারী ব্যক্তিরা যে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের বিরক্তি চলে এসেছে। প্রথমে সাধারণ মানুষ ভেবেছিল শুধু ঢাকার মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকবে কিন্তু পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ায় সমাজে প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনা ভবিষ্যতে গঠিত রাজনৈতিক দলের জন্য বুমেরাং হবে। সাধারণ মানুষ এখন প্রশ্ন তুলছে ইহাই কি তবে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ? আগের তুলনায় কোনো পরিবর্তন কি দেখা যাচ্ছে ? চাইলেই যে কাউকে এভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শেষ করে দেয়া যায় ?

নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা কত বছর বয়সে রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন ? যে বয়সে তারা পড়াশোনা করে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করবে, পরিবার ও দেশের সেবা করবে সে বয়সে রাজনীতিতে যোগদান কি তাদের জন্য উপকারী ? আজকে যখন জুলাই অভ্যুত্থান ও শহীদ দের কল্যাণে রাতারাতি স্টার বনে যাওয়া ছাত্রনেতা ও উপদেষ্টারা সংসদ নির্বাচনের জন্য লড়তে চান সেখানে জুলাইয়ের চেতনা থেকে নিজেদের স্বার্থের দিকটাই বেশি নজরে আসে। তাদের দেখাদেখি যখন ১৫/১৬ বছরের কিশোরেরা বড়ো ভাইদের অনুগ্রহ পাওয়ার আশায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তখন এর দায় সে সব ছাত্র নেতাদের নিতে হবে। জীবন গড়ার সময়ে জীবন ধ্বংসের জন্য যেভাবে তারা ব্যবহার হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিনদিন। জনগণ এমন কোন রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতি কোনদিন বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করতে পারবে না। তাই বাংলাদেশে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সম্ভাবনা চালু হওয়ার পূর্বেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩১
২৭টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এয়ার এম্বুলেন্স ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী’কে নিয়ে জরিপে আপনার মতামত দেখতে চাই॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৩০

যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন শহরে বসবাস করছেন। সেই দলের মূল নেত্রী অসুস্থ। আর তাকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাওয়ার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিবে কাতারের আমির। বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের কি এতটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×