আমাদের ছাত্র শব্দটি বর্তমানে খুব সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। ১৫/১৬ বছরের কোন ছেলে যদি পড়াশোনা না করে গ্যারেজে কাজ করে, কিশোর অপরাধের সাথে জড়িত হয়, চুরি ডাকাতি করে আবার ভোল পাল্টিয়ে ছাত্র নামে রাজনীতি করে মানুষের সিমপ্যাথি আদায় করতে চায় আমাদের সকলের উচিত তাদের বয়কট করা। ছাত্র বা শিক্ষার্থী খুব মর্যাদাপূর্ণ একটি উপাধি যার মাধ্যমে আলোর পথের অনুসারীদের বোঝানো হয়। জ্ঞান আহরণের প্রতি যারা তীব্র ক্ষুধা আছে তাদের বোঝানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় অছাত্ররা ছাত্রদের বেশে জনগণ কে বিভ্রান্ত করছে। সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে সে বৈষম্য বিরোধী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে দেশে এক ধরণের সংকট চলছে। তারা অতি বিপ্লবী চেতনা অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দেশ স্থিতিশীল হউক তা চাইছে না। যারা এক সময় সাধারণ মানুষের বাহবা পেয়েছিল তারাই এখন বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বুঝতে পেরে মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের নিয়ে প্রথম যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা হলো ইন্টেরিম সরকারে থেকে রাজনৈতিক দল গঠন। রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক দেশে গঠন করা যেতেই পারে কিন্তু সরকারের পরিপূর্ণ সাপোর্ট নিয়ে দল গঠন করে ক্ষমতায় যেতে চাইলে এদেশের মানুষ তা মানবে না। রাজনৈতিক দলগুলো বারবার বলছে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল আসলে কেমন হবে ? দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্রদের সংগঠন আছে তারাও কি ছাত্রদের গঠিত নয়া দলের অংশ হবে ? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্ররাজনীতি সাধারণ বিষয় এবং তা বড়ো রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসাবে পরিচিত লাভ করে। কিন্তু সরাসরি রাজনৈতিক দল ছাত্রদের মাধ্যমে গঠিত হলে তা কি সকল ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করবে? ছাত্ররা আজীবন ছাত্র থাকবেন না। যখন তারা অছাত্র হয়ে যাবেন তখন কি দল থেকে সরে যাবেন? এই প্রশ্নগুলোর সাথে আমাদের দেশের তরুণদের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র সংগঠন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। উত্তরায় ছাত্র-জনতার নামধারী কতিপয় যুবক কে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কতিপয় সদস্য থানায় হামলা করে। এ যেন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা কে মনে করিয়ে দিচ্ছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব তারা পালন করতে চাইছে যা আমাদের দেশের সরকারের দুর্বলতম দিক । সরকার আমলাতন্ত্র কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। তাই সরকারের ছাত্র সংগঠন হিসাবে ছাত্রদের দুইটি অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম রয়েছে যারা জনগণের জানমাল হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছে। যেখানেই কোন গ্যাঞ্জাম সেখানেই তারা ঢুকে পড়ছে যা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না । সর্বশেষ গাজীপুরে সংগঠিত হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা তাই প্রমাণ করে। আমাদের দেশের মানুষ রক্ষণশীল হওয়াতে কিশোর ও তরুণদের পাকনামি ভালো চোখে দেখে না। গাজীপুরের হামলার সূত্রপাত যে কারণে ঘটুক এর দায় ইন্টেরিম সরকার ও অরাজনৈতিক সংগঠনের তথাকথিত ছাত্রদের নিতে হবে। সরকার একদিকে আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করতে পারছে না আবার তথাকথিত ছাত্রদের দিয়ে দমন করাতে চাইছে এ ধরণের পলিটিক্স দেশের মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি হিসাবে বিবেচিত সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারিতে আত্নপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার ভাষণ কে কেন্দ্র করে সারা দেশে ছাত্র-জনতার নাম ধারী ব্যক্তিরা যে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের বিরক্তি চলে এসেছে। প্রথমে সাধারণ মানুষ ভেবেছিল শুধু ঢাকার মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকবে কিন্তু পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ায় সমাজে প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনা ভবিষ্যতে গঠিত রাজনৈতিক দলের জন্য বুমেরাং হবে। সাধারণ মানুষ এখন প্রশ্ন তুলছে ইহাই কি তবে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ? আগের তুলনায় কোনো পরিবর্তন কি দেখা যাচ্ছে ? চাইলেই যে কাউকে এভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শেষ করে দেয়া যায় ?
নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা কত বছর বয়সে রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন ? যে বয়সে তারা পড়াশোনা করে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করবে, পরিবার ও দেশের সেবা করবে সে বয়সে রাজনীতিতে যোগদান কি তাদের জন্য উপকারী ? আজকে যখন জুলাই অভ্যুত্থান ও শহীদ দের কল্যাণে রাতারাতি স্টার বনে যাওয়া ছাত্রনেতা ও উপদেষ্টারা সংসদ নির্বাচনের জন্য লড়তে চান সেখানে জুলাইয়ের চেতনা থেকে নিজেদের স্বার্থের দিকটাই বেশি নজরে আসে। তাদের দেখাদেখি যখন ১৫/১৬ বছরের কিশোরেরা বড়ো ভাইদের অনুগ্রহ পাওয়ার আশায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তখন এর দায় সে সব ছাত্র নেতাদের নিতে হবে। জীবন গড়ার সময়ে জীবন ধ্বংসের জন্য যেভাবে তারা ব্যবহার হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিনদিন। জনগণ এমন কোন রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতি কোনদিন বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করতে পারবে না। তাই বাংলাদেশে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সম্ভাবনা চালু হওয়ার পূর্বেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩১