বিএনপির নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতাদের নতুন দল গঠন নিয়ে মন্তব্য করেছেন । তার মতে কেন ছাত্ররা জাতীয় নেতাদের পথ অনুসরণ না করে বিদেশি নেতাদের অনুসরণ করছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন। আলালের মতে যে দেশে মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের মতো নেতা জন্মেছেন তাদের কে পাশ কাটিয়ে কেন ইমরান খান, কেজরিওয়াল ও এরদোয়ান কে অনুসরণ করবে তারা ? তিনি বিস্মিত হয়ে বলেছেন বাংলাদেশের আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা সন্তানেরা কেন এখন বিদেশি রাজনীতিবিদ দের আদর্শ অনুসরণ করতে চায় যেখানে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন !
বিএনপি নেতার বক্তব্যে কিছুটা হতাশা ছিলো। কিন্তু দিনশেষে এর জন্য দায়ী প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো। বাংলাদেশের অধিকাংশ তরুণেরা প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর উপর বিরক্ত। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর দায় শতভাগ। যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ ছিলো তারা আজ আদর্শ বিচ্যুত হয়ে জনসাধারণের রোষের মুখে পড়েছে। কিছু দলের বিশেষ কোন আদর্শ নেই বরং অন্য দলের বিরোধিতা করার মধ্য দিয়ে তাদের জন্ম হয়েছে। আবার কোনো কোনো দল দেশ স্বাধীনের বিপক্ষে ছিলো এবং স্বাধীনের পর তারা দেশের মানুষ কে গোমরাহীর পথে নিয়ে গিয়েছিল।
আওয়ামী লীগের কথাই চিন্তা করা যাক, এরকম একটি ঐতিহ্যবাহী দল যার প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানীর মতো নেতা ছিলেন সে দল সময়ের বিবর্তনে একটি পরিবারতান্ত্রিক দলে পরিণত হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতা হতে বর্তমানে কুখ্যাত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পিতা হিসাবে সবখানে জুতার বাড়ি খাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মতো আদর্শ নিয়ে ছাত্ররা রাজনীতি করলে তাদের সেক্যুলার ও বামপন্থী ট্যাগ খেতে হবে যা অতি ধর্মপরায়ণ মানুষের নিকট অস্বস্তিকর । তবে আওয়ামী লীগ কোন সেক্যুলার দল কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বিএনপির রাজনীতির মূল নীতি হচ্ছে সেনাবাহিনী ও জাতীয়বাদ চেতনা। ছাত্ররা এই ধরণের কোনো দলের আদর্শ অনুসরণ করতে চায় না। বিএনপির অতীত ইতিহাস নিয়ে ছাত্ররা ওয়াকিবহাল। ছাত্ররা কোন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনে আগ্রহী নয়। তারা সাম্য, ন্যায্যতা ও সুশাসন কে তাদের আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে চায়। অতীত রাজনীতিবিদ দের মতো তারা বিতর্কিত হতে চায় না।
জুলাই অভ্যুত্থানের অনেক নেতা মওলানা ভাসানীকে অনুসরণ করে বলে শোনা যায়। মাস্টারমাইন্ড মাহফুজ মওলানার পালনবাদে বিশ্বাসী বিপ্লবী। তাছাড়া অন্যতম বিপ্লবী আকতার হোসেন কে তার অনুসারীরা এ যুগের মাওলানা ভাসানী বলে থাকেন। ছাত্রলীগের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ডাকসুর সাবেক এই নেতা বরাবর সোচ্চার ছিলেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা আকতার হোসেন। বর্তমান সমন্বয়ক উপদেষ্টাদের মধ্যে নাহিদ ও আসিফ এই সংগঠনের সদস্য ছিলো। জুলাই অভ্যুত্থানে দলটির ভূমিকা প্রশংসনীয়।
মূলত রাজনীতিবিদ দের সততার অভাব ও জনগণের প্রতি অবজ্ঞা অবহেলার কারণ ছাত্ররা বিদেশি নেতাদের অনুসরণ করতে চায়। জেন-জি জেনারেশন জাতীয় নেতাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না কারণ পাঠ্যপুস্তক থেকে তারা যতটুকু জানতে পেরেছে তার সাথে বর্তমানে তাদের অনুসারীদের মধ্যে সে আদর্শ লেশমাত্র নেই। জেন-জি'রা জাতীয় নেতাদের আদর্শ ও রাজনীতির উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। এর সম্পূর্ণ দায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ দের নিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১৯