somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা দিবস নিয়ে জেন-জির ভাবনা !

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস! বাঙালি তার মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য পাকিস্তান আর্মির অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়েছিল যা অন্যান্য দেশের মানুষের চোখে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। আমরা বাঙালিরা সবসময় নিজের মা, মাটি ও ভাষার প্রতি টান কিছুতেই ছাড়তে পারি না। কিন্তু বাঙালির প্রাণের ভাষাকে এত বছর পার হলেও সার্বজনীন করে তোলা যায় নি। বিদেশি ভাষার দৌরাত্নে আমরা নিজেদের মাতৃভাষা ভুলতে শিখেছি। আমাদের উচ্চশিক্ষার মাধ্যম, অফিস-আদালত ও কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশি ভাষার কাছে আমরা বন্দী হয়ে পড়েছি। বাংলাদেশ বেতারের যুগে শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা ছিলো মিডিয়ায় দেখার মতো। সে সময় বাংলাদেশ বেতারের নাটক, বিটিভির নাটকের ভাষা শুনে মুগ্ধ হয়ে যেত সবাই। কিন্তু কালের বিবর্তনে শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা হারাতে বসেছে। এরজন্য দায়ী আকাশ সংস্কৃতি ! বেতারের যুগের পর এলো এফএম রেডিওর যুগ। শুরু হলো ভাষার বিকৃতি ! বাংলা ও ইংলিশ মিলিয়ে বাংলিশ নামক এক নতুন জগাখিচুড়ি ভাষা তরুণদের মধ্যে ব্যাপক চর্চিত হয়। চিঠি লেখার যুগ শেষে যখন এসএমএস পাঠানোর যুগ আরম্ভ হলো তখন ভাষা বিকৃতি আরো বেশি হওয়া শুরু করে। বাংলিশ মেসেজে তরুণদের মধ্যে চলতে থাকে প্রেম পিরিতি, আড্ডা, গান ও কথোপকথন। Babu Khaiso টাইপ করতে যতটা সময় কম লাগে বাংলা কিবোর্ড লে আউট ব্যবহার করে লেখালেখি তখন ঝামেলা মনে হতো অনেকের কাছে। অবশ্য অভ্রের প্রচলন কিছুটা বাংলায় লেখালেখিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

যে মাতৃভাষার জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষেরা প্রাণ দিয়েছেন সে বাংলা ভাষার মূল্যায়ন কমে গেছে খোদ বাঙালির কাছে। হোটেল রেস্তোরাঁয়, দোকানের সাইনবোর্ডে প্রচুর ভুল বানান দেখা যায়। কিন্তু এগুলো সংশোধনের জন্য কারো মাথা ব্যথা নেই। আমাদের উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানো সম্ভবপর হলে নিজেদের ভা্‌ষায় আমাদের যেমন কোনো কিছু বুঝতে সুবিধা হবে একই সাথে শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চার প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মাবে। ছেলেবেলায় যখন টিভিতে কলিকাতার ছবি দেখতাম তখন তাদের মুখে বাংলা ভাষা শুনে অবাক লাগতো। তাদের উচ্চারিত শব্দগুলো বাংলাদেশের মানুষের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। ভিন্ন উচ্চারণের কারণে কলিকাতার বাংলা ছবি দেখে মজা লাগতো না। আমাকে নিয়ে পরিবারে অভিযোগ ছিলো আমি বিটিভির মতো একটি সরকারি চ্যানেল নিয়ে কেন বসে থাকি ! আমার বাসায় একজন স্যার প্রাইভেট পড়াতে আসতেন। মা কথায় কথায় বলে ফেলে যে আমার বিটিভি দেখার খুব শখ। স্যার অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি বিটিভিতে কি দেখি ? বিটিভিতে আমি টকশো, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সংগীতানুষ্ঠান বেশি দেখতাম। কাজী নজরুল ইসলামের গান আমার মাথার উপর দিয়ে যেত। তবে মাতৃভাষা দিবস, ও মুক্তিযুদ্ধ রিলেটেড কোন প্রোগ্রাম বাদ দিতাম না। তাই খুব ভালোভাবেই লক্ষ্য করেছিলাম কিভাবে সরকার বদলের সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে যেত। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অবশ্য একই দেখেছিলাম প্রায় সব সরকারের আমলেই।

বর্তমানে বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের জেন-জির তেমন আগ্রহ নেই। একাডেমিক ক্যারিকুলামে পড়া লাগে তাই বাধ্য হয়ে পড়তে হয়।বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে শিখার আগ্রহ জন্মাত যদি এর মাধ্যমে আমার কর্মসংস্তানে সহায়তা হতো। বিগত বছরগুলোতে ফেব্রুয়ারী মাস এলেই 'আমার ভাইয়ের রক্তের রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ' গানটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন চলতো প্রায় মাসব্যাপী। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়াতে সবাই চুপচাপ নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। হয়তো একুশ তারিখে কিছু অনুষ্ঠান হবে। অনেক মানুষ শহীদ মিনার যাবে আবার অনেকে যাবেন না। আমাদের দেশ এমনই বৈচিত্র্যময়।

বাংলা জানেন এমন শিক্ষিত বাঙালির জন্য মতপ্রকাশের একটি সুন্দর প্লাটফর্ম হচ্ছে সামু। সামুতে যারা প্রথম দিকে ব্লগিং করতেন তাদের বাক্য গঠনের দক্ষতা , শব্দ চয়ন এত আকর্ষনীয় ছিলো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলা ভাষাভাষীর জন্য আরো অনেক ব্লগিং প্লাটফর্ম ছিলো যাদের কারণে কিছুটা হলেও মানুষ বাংলা ভাষায় মুক্তচিন্তা করার সুযোগ পেত। বাংলা ভা্‌ষায় অনেকে বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়, দর্শনের জটিল বিষয় ও ধর্ম নিয়ে জ্ঞান গর্ভ আলোচনা করতেন। এখন ফেইসবুকের কল্যাণে সামুতে সুন্দর শব্দ চয়নে লেখা বাংলা বাক্য কারো লেখনীতে দেখা যায় না।

সামুর মাধ্যমে সকল দেশ বিদেশের বাংলা ভাষাভাষীদের জানাই ' আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের' শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×