somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি দাওয়াত, একাধিক প্রশ্ন: ইউনূসের সঙ্গে সোহেল তাজের সাক্ষাতের রাজনৈতিক অর্থ

১৮ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুখ যেন একেকটি মুখোশ। যাকে আমরা ভাবি বিদ্রোহী, সে-ই হয়তো আড়ালে ক্ষমতারই আরেকটি মুখ। আর যাকে ভাবি বিকল্প, সে হয়তো নিয়ন্ত্রিত বিরোধী এক পুতুল মাত্র। এই নাট্যজগতে সোহেল তাজ নামটি দীর্ঘদিন ধরে ‘সততা’র প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলী সেই ইমেজকে বড় প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সোহেল তাজ যখন শেখ হাসিনার সরকারের ‘ভ্রষ্টতা’ নিয়ে মুখ খুলছেন, তখনই তারই আপন বোন সিমিন হোসেন টানা তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদে আসন আঁকড়ে ছিলেন । আমরা জানি ২০১৪, ২০১৮, এবং ২০২৪ সবগুলোই ছিল বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন। অথচ ভাইয়ের মুখে আপাতত সততার কথা, আর বোনের পায়ে সরকারি গদি এ কেমন দ্বিচারিতা ? শেখ হাসিনা খারাপ কিন্তু তার সংসদ ভালো এমন মানসিকতা কি আদৌ কোনো শুদ্ধ রাজনীতির পরিচয় দেয় ?

সোহেল তাজ দাবি করেছেন তিনি নাকি তাজউদ্দীন আহমদের ১০০তম জন্মবার্ষিকীর দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন ড. ইউনূসের কাছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দাওয়াত দেওয়ার জন্য এখনই কেন? গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা, সরকারের প্রতিক্রিয়া, এবং ঠিক তার পরদিন এই সৌজন্য সাক্ষাৎ যেন নিছক ভদ্রতা নয়, বরং নিখুঁত রাজনৈতিক সমন্বয়ের অংশ। এই সাক্ষাতে কেবল জন্মবার্ষিকীর আমন্ত্রণ নয়, এনসিপির ভবিষ্যৎ, নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সোহেল তাজের আবির্ভাব, এবং বিকল্প শক্তির ‘আন্তঃগঠনমূলক’ রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হয়ে থাকতে পারে।

২০১৮ সালে বিএনপির রুমিন ফারহানা ও অন্যরা সংসদে যাওয়ার কারনে এনসিপিসহ অনেকেই কঠোর সমালোচনায় মুখর হয়ে আপোষকামী ও সুবিধাবাদী বলে গালি দিতেসে । কিন্তু সোহেল তাজ ও তার বোনের সংসদীয় পদধারণ নিয়ে তারা একটিবারও প্রশ্ন তোলেন না। কেন ? তারাও কি জানেন, কিছু পরিবার, কিছু রক্তরেখা, কিছু গোষ্ঠী বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অচ্ছুৎ নয়’? তাহলে প্রশ্ন আসে এই সুশীল নীরবতা কার ইশারায় ?

এনসিপির পাশে এখন যাদের দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে, তাদের অনেকেই অতীতে ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন বা সেই বৃত্তের অংশ। এনসিপির র‌্যালি ও সমাবেশে দেখা যায় চরমোনাই ঘরানার নেতাদের উষ্ণ সম্পর্ক, কিন্তু সেই উষ্ণতা পাওয়া যায় না হেফাজত বা খেলাফত মজলিসের ক্ষেত্রে। বরং শেখ হাসিনার আমলে বারবার মামলায় জর্জরিত হেফাজত এখন প্রান্তিক ও চুপ। চরমোনাই কী এনসিপি ও আওয়ামী লীগের ‘নতুন যুগলের’ ধর্মীয় রূপ ?

যদি সোহেল তাজ এনসিপির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান, তাহলে সেটি হবে এক ঐতিহাসিক রকম পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এনসিপি যদি তাকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয়, তাহলে তাদের সেই আদর্শিক অবস্থান কী থাকবে? অথবা, এনসিপি কি এমনিতেই আওয়ামী লীগের বিকল্প সেজে ‘নিয়ন্ত্রিত বিরোধী’ ভূমিকা পালন করছে ? এই সম্ভাব্য মিলনের কেন্দ্রে রয়েছে ড. ইউনূস, যিনি নিজেও আন্তর্জাতিক মহলের পছন্দের মুখ এবং দীর্ঘদিন ধরে একটি ‘নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম’ তৈরির আড়ালে ছিলেন।

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে কেউ প্রকৃত বিরোধী নয়, আবার কেউই পুরোপুরি ক্ষমতাসীনও নয়। সবাই কোনো না কোনোভাবে খেলায় অংশগ্রহণ করছে, কেউ মূল খেলোয়াড়, কেউ রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা অভিজ্ঞ মুখ। সোহেল তাজ যদি সত্যিই বিকল্প রাজনীতিতে আসেন, তাহলে সেটি শুধুই একটি নতুন চরিত্রের আগমন নয়, বরং একটি পুরনো চক্রের নব রূপেই প্রত্যাবর্তন। এই ব্লগটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক ধরণের দলিল হিসেবে রয়ে যাবে—যেখানে রাজনীতির মুখোশগুলো সময়ের আয়নায় ধরা পড়বে, আর প্রজন্ম চিনতে শিখবে আসল মুখ।


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৩:০৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×