
আহ, কী চমৎকার দেশ আমাদের! যেখানে যোগ্যতা মানে শুধু মেধা বা পরিশ্রম নয়, বরং দুর্নীতির নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার এক অসাধারণ ক্ষমতা। আর এই যোগ্যতার অনন্য উদাহরণ হিসেবে আমাদের সামনে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি ডিগ্রি কলেজের এক সাধারণ ছাত্র, কে জানত একদিন তিনিই হয়ে উঠবেন ক্ষমতার এক প্রতিচ্ছবি? গ্রামের নিপাট ছেলেটি যখন পুলিশ ক্যাডার হলেন, তখন অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, “বাহ! পড়াশোনা করে ছেলেটা জীবনে কিছু একটা করল!” কিন্তু তারা কি জানতেন, এটা ছিল হিমশৈলের চূড়ামাত্র? আসল খেলা তো শুরু হলো এরপর।
সিস্টেমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের 'অ্যালামনাই' বনে যাওয়াটা তো কেবল শুরু। নাইট কোর্সের ছাত্রত্ব নিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক! ভাবা যায়? সাধারণ মানুষ যখন দিনের পর দিন খেটেখুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়, তখন কেউ কেউ স্রেফ একটি 'সিস্টেম' ব্যবহার করে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। এরপর এলো পিএইচডি! নম্বর জালিয়াতি করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করাটা তো আর যেই সেই ব্যাপার নয়। এর জন্য চাই তুখোড় বুদ্ধি, অসাধারণ পরিকল্পনা এবং হ্যাঁ, ড. শিবলী রুবাইয়াতের মতো একজন 'কারিগরের' সহায়তা। কে বলবে এটা যোগ্যতা নয়? আমাদের সমাজে এই ধরনের 'যোগ্যতা'কেই তো লোকে সালাম ঠুকে!
হাজার হাজার একর জমির মালিকানা? সে তো স্রেফ একটা শখ! এত অল্পতেই যদি থেমে যেতেন, তাহলে কি আর তিনি বেনজীর আহমেদ হতেন? দেশের আনাচে-কানাচে তার নামে, বেনামে জমি ছড়িয়ে আছে। এসবই তো তার দূরদর্শিতা আর 'ব্যবসার' acumen-এর প্রমাণ। সাধারণ মানুষ এক কাঠা জমির জন্য জীবনপাত করে, আর তিনি সারা দেশে সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এ যেন রূপকথার গল্প!
তবে তার সর্বশেষ অবদানটি সত্যিই অসামান্য। নিজের ব্যবহৃত কাপড়চোপড় আমজনতার জন্য রেখে গেছেন। তবে হ্যাঁ, ফাও না, টাকা দিয়ে কিনতে হবে! এটাকেই বলে বিজনেস সেন্স! সাধু, সাধু! এই মহানুভবতা দেখে আমাদের চোখে জল চলে আসে। এত বড় হৃদয়ের অধিকারী মানুষ ক'জন আছেন এই দুনিয়ায়?
ক্ষমতার রাস্তা খুঁজে পাওয়া সহজ নয়, কিন্তু তার চেয়েও কঠিন হলো সেই ক্ষমতা হজম করা। বেনজীর সাহেব দেখিয়ে দিলেন, ক্ষমতাকে কীভাবে আত্মস্থ করতে হয়। তবে সব ক্ষমতা যে হজম হয় না, বা ক্ষমতার গরম যে সবসময় নিজেকেই পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়, সে কথা হয়তো তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন। যখন ক্ষমতার অপব্যবহার সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন সেই ক্ষমতা আর রক্ষাকবচ থাকে না, বরং তা নিজেই 'বারবিকিউ' বানিয়ে দেয়।
আমরা সাধারণ মানুষ এই ‘যোগ্যতা’র কাছে বারবার হেরে যাই। আমরা শুধু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি, কীভাবে একজন মানুষ সব সীমা অতিক্রম করে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে, আর শেষমেশ সবকিছু হারিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। তারপরও, আমরা তো 'সালাম' জানাতে ভুলি না। কারণ এটাই তো আমাদের নিয়তি, এই ধরনের 'যোগ্যতা'কেই বারবার স্বীকৃতি দেওয়া!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




