somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পালনবাদী মাহফুজের স্টাটাস-স্টাটাস খেলা জনগণ আর কতো দিন সহ্য করবে?

০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের একবছর পূর্তি। গতবছর এই দিনেই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছিল। এমন একটি ঐতিহাসিক দিনে উপদেষ্টা পরিষদের স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ততা বেশি থাকার কথা। বিশেষ করে ছাত্র উপদেষ্টা দুইজনের কাছে জনগণের প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন । মনে হচ্ছে আমলাদের উপর দায়িত্ব দিয়ে উপদেষ্টারা বেশ অবসর সময় কাটাচ্ছেন। সেই ফাঁকে ফাঁকে ফেইসবুকিং না করলে কি ভালো লাগে? জেন-জি বলে কথা! উপদেষ্টা মাহফুজ সোশ্যাল মিডিয়া গরম করতে তাই একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিলেন। তার ফ্যান-ফলোয়ার সহ সবাইকে উত্তেজিত করে তুললেন।

নারী ইনফ্লুয়েন্সাররা যেমন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ভক্তকুল কে উত্তেজিত করেন, মাহফুজ আলমও স্ট্যাটাস দিয়ে একই কাজ করেন। তবে পার্থক্য হলো - নারী ইনফ্লুয়েন্সারগণ শত সমালোচনা সহ্য করে হলেও তাদের কন্টেন্ট রেখে দেন। অন্যদিকে মাহফুজ আলম সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। নেগেটিভ মন্তব্য বেশি পড়লেই স্ট্যাটাস ডিলিট করে দেন।

প্রফেসর ইউনুস মাহফুজ আলমকে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেক সমন্বয়কই মাহফুজকে চিনতেন না। আমরা তার পরিচয় জেনেছিলাম আন্দোলনের সময়েই - একজন ঢাবির শিক্ষার্থী যিনি পাঠচক্রে জড়িত, ডানপন্থী ও বামপন্থীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী, যার বাবা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং যিনি বাংলাদেশের বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কাছে দীক্ষা নিয়েছেন। দেশি-বিদেশি আন্দোলন নিয়ে যার পড়াশোনা রয়েছে এবং যিনি এতই চতুর যে বাংলাদেশের কোন গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ধরতে পারেনি। গোয়েন্দা সংস্থা চলে ডালে ডালে আর তিনি চলেছেন পাতায় পাতায়।

মাহফুজ আলম বিভিন্ন সময় স্ট্যাটাস দিয়ে সমাজে বিতর্ক উস্কে দেন, পরে সেই স্ট্যাটাস ডিলিট করেন। এক সপ্তাহ আগে তার স্ট্যাটাস ছিল এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। যখন তার দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসে, তখন তিনি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন যে নতুন দলের নেতারা দুর্নীতিতে জড়িত হলেও মাহফুজ আলম কোন দুর্নীতিতে জড়িত নন, তাই অনেকের গাত্রদাহ হচ্ছে। পরে সেই স্ট্যাটাস সংশোধন করে বিতর্ক এড়াতে চেষ্টা করেন। মাহফুজ আলমের এই অভ্যাস জেনেই নেটিজেনরা এখন স্ট্যাটাস পড়ার আগেই স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন।

মাহফুজ আলম গতকাল স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন "১/১১ এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে"। নেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি সেই স্ট্যাটাস সংশোধন করলেন - "১/১১ এর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তবে জুলাই জয়ী হবে। জনগণের লড়াই পরাজিত হবে না।" এরপরও শেষ রক্ষা হলো না - শেষ পর্যন্ত স্ট্যাটাস ডিলিট করে দিলেন। মজার ব্যাপার হলো, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনকে যখন এই স্ট্যাটাস নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি হেসে বলেছিলেন "কিছুক্ষণ পর মাহফুজ আলম স্ট্যাটাস ডিলিট করে দিবেন।" মাহফুজ আলম যেন সালাউদ্দিন সাহেবের কথা সত্য প্রমাণ করলেন।

মাহফুজ আলম প্রথমে যে স্ট্যাটাস দিলেন, কেন সংশোধন করলেন? ভুল হলে ক্ষমা চাইতে পারতেন, কিন্তু তিনি নিজের বক্তব্য স্বীকার করতে পারেন না। তাহলে কেন স্ট্যাটাস দেন? স্ট্যাটাস ডিলিট করে কী অর্জন করতে চাইলেন? এগুলো বালখিল্যতার চূড়ান্ত। প্রফেসর ইউনুস সাহেব এসব বালখিল্যতা কীভাবে সহ্য করছেন? এক-এগারোর কথা মাহফুজ আলম প্রথমবার বলছেন না। আগেও বলেছেন। পাশাপাশি নাহিদ ও আসিফ মাহমুদের মুখেও এসব কথা শুনেছি। এসব জুজুর ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে সাধারণ জনগণ তাদের পিছনে আবার দাঁড়ায় এবং সমর্থন দেয় ।

মাহফুজ আলম মনে হয় কিছুটা অনিরাপদ বোধ করছেন এই ভেবে যে তাদেরকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কিনা। মূলত টিআইবির আলোচনা থেকে তার এই ভয়ের সূত্রপাত। টিআইবি নতুন দলটিকে 'কিংস পার্টি' বলেছে কারণ দুইজন ছাত্র উপদেষ্টা এখনো সরকারে। 'নতুন বন্দোবস্ত'এর কথা বলে নতুন দলটি খুব দ্রুতই পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলোর মতো নানারকম অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে।

ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে যারা সরকারে আছেন তাদের মধ্যে আসিফ মাহমুদের নামে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তবুও প্রধান উপদেষ্টা মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। দিনদুপুরে একটি পরিচিত পত্রিকার মালিকানা দখল হয়ে গেছে কিন্তু তথ্য উপদেষ্টার মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। অথচ সরকার গলা ফাটিয়ে বলছে গণমাধ্যম স্বাধীন।

শেখ হাসিনাকে দেখতাম তার কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সরানো তো দূরের কথা, বরং তিনি কেন উক্ত ব্যক্তিকে মন্ত্রী বানিয়েছেন এবং সে সিদ্ধান্ত সঠিক - তা প্রমাণ করতে চাইতেন। প্রফেসর ইউনুস সাহেব তো আর শেখ হাসিনা নন। তিনি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তার সরকারের ব্যর্থতা শুরুর দিকে অবলীলায় স্বীকার করতেন। কিন্তু শুকনো কথায় চিড়ে ভিজে না। একাধিক উপদেষ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও সরানো তো দূরের কথা, শাফল পর্যন্ত তিনি চেষ্টা করেননি।

আমাদেরকে এসব উপদেষ্টাগণের বালখিল্যতা এবং বাস্তবতা বিবর্জিত মন্তব্য ও কথা চুপচাপ দেখে যেতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের একবছর পর এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা - যেখানে দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকেও কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এবং পরে নিজেদের বক্তব্য থেকে সরে যাচ্ছেন। জনগণ আশা করেছিল পরিবর্তনের, কিন্তু পাচ্ছে একই পুরাতন রাজনীতির নতুন সংস্করণ। সময় এসেছে এসব বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবার এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাছে জবাবদিহিতা দাবি করার।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:২৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×