
তুমিও জানো, আমিও জানি—জামাত মানেই পাকিস্তানি।
তুমিও জানো, আমিও জানি—শিবির মানেই পাকিস্তানি।
তুমিও জানো, আমিও জানি—আল-বদর পাকিস্তানি।
তুমিও জানো, আমিও জানি—রাজাকার পাকিস্তানি।
এটাই ছিলো কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবতা। চীনের দুঃখ যদি হয় হোয়াং হো নদী, তবে জামাত-শিবিরের দুঃখ হচ্ছে এই চিরস্থায়ী ‘রাজাকার’ ট্যাগ। তারা যতই ভালো সাজার চেষ্টা করুক, যতই উন্নত কাজ করুক: মানুষ এখনো তাদের একই পুরনো সন্দেহের চোখে দেখে।
২০২৪ সালের আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের জন্য তারা যথেষ্ট জনবল দিয়েছিল। কিন্তু গত ১৬ বছর ধরে জামাত-শিবির নিজেদের পরিচয়ে রাজনীতি করতে পারেনি : তাদের ছাত্রলীগের ‘লুঙ্গির নিচে’ রাজনীতি চালাতে হয়েছে। এখন বাংলার মুক্ত বাতাসে সুযোগ আসতেই প্রধান মিত্র বিএনপি আবার তাদের ‘রাজাকার’ বলে আক্রমণ শুরু করেছে। আন্দোলনে মাঠে থাকা বামপন্থী গোষ্ঠীও শিবিরকে ‘পাকিস্তানি’ বলে বিদ্ধ করছে। প্রতিশোধস্বরূপ শিবিরও তাদের প্রতিপক্ষকে ‘ভারতের দালাল’, ‘শাহবাগি’ ট্যাগ দিচ্ছে এবং অশ্লীল ভাষায় হুমকি ছুঁড়ছে।
জামাত-শিবিরের অনেক নেতা বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে: "এত প্রেম-ভালোবাসা ছিল, হঠাৎ কী হলো যে আমরা রাজাকার হয়ে গেলাম? আগে মনে ছিল না?" কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, খোঁচাখুঁচি শুরু করেছিল জামাত-শিবিরই। “১, ২, ৩, ৪…” স্লোগান দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে নিয়ে তারা কী বলেনি ! এখন বিএনপি রাজাকার ইস্যুতে রাজনীতি করলে জামাত গস্সা খাচ্ছে: এটা যেন গুলি করে আবার আহতের ভূমিকায় অভিনয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও প্রক্টর বসিয়ে জামাত-শিবির ভেবেছিল তাদের সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের ছবি ঝোলাবে কিন্তু সেটাও ব্যর্থতায় শেষ হয়। এদিকে জামাত-বিএনপির এই দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন জাতীয় ইমাম নাহিদ ইসলাম। তার বক্তব্য যারা একাত্তর নিয়ে রাজনীতি করছে, তারা ২০২৪-কে অপমান করছে। ৪৭-এর মতো ৭১-ও ইতিহাসে থাকবে, কিন্তু রাজনীতিতে আর প্রভাব ফেলবে না। নাহিদ ইসলামের হঠাৎ ৭১ নিয়ে চুলকানি কেন ? বিএনপি-জামাত ঝগড়া করছে, ব্যথা পাচ্ছেন নাহিদ ! যদি অভ্যুত্থানের সময় তিনি বলতেন: “৭১-কে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য ২০২৪-এর আন্দোলন” তাহলে ভুতো পাশে থাকত না। কারণ এই ইস্যু সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, এবং সাধারণ মানুষ এতে খুব কমই জড়ায়।
শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করলেও, গণমাধ্যমের কারণে মানুষ জানত কারা রাজাকার। সমাজে এই ধারণা গেঁথে আছে এবং থাকবে। তবে রাজনৈতিক দলের সহায়তা ছাড়া খুব কম মানুষই এই ইস্যু নিয়ে মাঠে নামে। শাহবাগে শুরুতে কিছু সাধারণ মানুষ গেলেও পরে তা পুরোপুরি আওয়ামী লীগপন্থী কর্মীদের দখলে চলে যায়। ২০০৮ সালেও শেখ হাসিনা রাজাকার বিচারের প্রতিশ্রুতি না দিলেও নির্বাচনে জিততেন।
নাহিদ ইসলাম কি ঠিক করে দেবেন, কে কোন ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করবে? ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য ভেঙে ফেলেছে। স্বৈরাচার পতনের মিশন শেষ হতেই সবাই নিজেদের পলিটিক্সে ফেরত গেছে। নাহিদের নজর কেবল দুই বড় দলের কথাবার্তায় কিন্তু নিজের দলে কাদের জায়গা দিয়েছেন, তারা কী করছে সে বিষয়ে তার নীরবতা লক্ষণীয়।
গত এক মাস ধরে এনসিপি নেতা সরওয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে আসছে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো কড়া পদক্ষেপ হয়নি। উল্টো তিনি নিয়মিত টকশোতে হাজির হচ্ছেন। নতুন দলটির যেন দুর্দশা কাটছেই না: একবার নারী ইস্যু, একবার দুর্নীতি, আবার অদ্ভুত বক্তব্য নিয়ে তারা সবার সাথে ঝামেলায় জড়াচ্ছে। প্রতিদিন তাদের নেতা-কর্মী পদত্যাগ করছে, কিন্তু সংখ্যার হিসাবও মেলানো যাচ্ছে না। জামাত-শিবিরের ভঙ্গিতে নাহিদ ইসলাম কথা বললে তার কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। শুধু শুধু ইউনুস স্যার পণ্ডশ্রম করছেন এবং এটাই বাস্তবতা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



