ঘটনাটি বেশ কয়েক বছর আগের। একদিন মধ্যবয়সী এক চাচার রিক্সায়য় চড়ে কোর্ট এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে রিক্সাওওয়ালা চাচা বললেন--- বুঝলা ভাইসতা ( ভাতিজা) মানুষ যত বেশি পড়ালেখা করে তত বেশি মিছা কথা শিখে।এই জন্য চিন্তা করছি আমার পোলারে বেশি পড়ালেখা করামু না।
আমি বললাম--- কেন চাচা? হঠাৎ এই কথা বললেন যে।
তিনি বললেন --- দেহ না, এই খানে কত উকিল - মুক্তার, কত বড় বড় শিক্ষিত মানুষ।কিন্তু তারা কিবা মিছা কথা কয়!
আমি বললাম--- সেটা একদম মন্দ বলেন নাই চাচা।
রিক্সাওয়ালা চাচা বললেন --- কত জনের কত ঘটনা শুনি। কত মানুষ যে এইখান থেইকা কাইন্দা কাইন্দা বাড়ি যায়।যে কোন দোষ করে নাই তারে বানায় দোষী আবার যে দোষী তারে খালাস করায়। এই জন্যই চিন্ত করছি পোলারে বেশি পড়ামু না।
এরপর আমি তাকে আর বেশি কিছু বলতে পারি নাই। কারন তিনি তো মিথ্যা বলেন নাই। হয়তো বলতে পারতাম আপনার ছেলেকে উকিল বানাবেন না। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। কিন্তু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারাও সব সময় সত্যের পথে চলে না বা সত্য কথা বলে না । ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের কথা বললেও হয়তো ঐ রিক্সাওয়ালা চাচা তাদের সম্পর্কেও কোন যুক্তি তুলে ধরতেন। কারন আমাদের থেকে তারা অনেক বেশি শিক্ষিত মানুষের সাথে মিশেছেন বা কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের মনে ঘুন পোকার মত বাসা বেধেছে যে, মানুষ যত বেশি পড়ালেখা করবে তারা তত বেশি মিথ্যা বলা শিখবে।
একজন রিক্সাওয়ালার মনে এই ধরনের ধারনা জন্মানোর পেছনে কিন্তু আমাদের শিক্ষিত সমাজই দায়ী। আমার জানা মতে, কোন অশিক্ষিত লোক দূর্নীতির দায়ে জেল খাটেনি। কোন অশিক্ষিত লোক কালোবাজারি করে অঢেল অর্থের মালিক বনে যান নি। কোন অশিক্ষিত লোক রাজনীতিজীবি হোন নি। আজকের সমাজের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, যারা কথা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন, যাদের সত্যকে সত্য বলার সৎ সাহসটুকু নেই, কোন অশিক্ষিত লোক কিন্তু এই তালিকায় নেই। অথচ এই সমস্ত শিক্ষিত মানুষরাই, ঐ রিক্সাওয়ালা চাচার মনে, সমাজের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের মনে দুঃস্বপ্নের বীজ বপন করছেন।তাদের মনের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষ যত বেশি লেখাপড়া করবে, তত বেশি মিথ্যা কথা শিখবে।যা তাদের সীমিত স্বপ্নের গন্ডিটা পেরিয়ে যতে দিবে না কোন দিন।
শিক্ষিত দূর্নীতিবাজদের চেয়ে অশিক্ষিত বিবেকবান মানুষও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখরে পারে। তাই নিজের সন্তানের পিছনে যারা অঢেল অর্থ বিনিয়োগ করেন শিক্ষিত করার জন্য। তারা যদি তাদের সন্তানকে ছোট থেকেই বিবেক বান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে বোধকরি অর্থের অপচয় রোধ হবে অনেকাংশে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:১৭