স্কুলে যাওয়ার বয়স তাদের। অথচ তারা সারা দিন রাস্তা ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। ভাবলাম তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা? একদিন এ রকম ছয়-সাত জন শিশুকে ডেকে বললাম, আমি যদি তাদের পড়াই তারা পড়বে কিনা। তারা রাজি হয়ে গেল। এভাবেই যাত্রা শুরু উন্মেষ পাঠশালার।"
উন্মেষ পাঠাশালার শুরু সম্পর্কের এভাবেই বর্ণনা করেন তার প্রতিষ্ঠাতা মো: মাহফুজুর রহমান। উত্তরার একটি বাসার কেয়ার টেকার তিনি। বাড়ি কিশোরগঞ্জে। দারিদ্র্যের কারনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে না পারলেও পড়লেখাটাকে নিজের মধ্যে লালন করেছেন তিনি।
২০১২ সালে তিনি কেয়ার টেকার হিসেবে এই বাড়িতে চাকরি শুরু করেন। খুব বেশি কাজ থাকত না তার। সারাদিন শুয়ে বসে দিন কাটাতেন। একসময় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পথশিশুদের জন্য কিছু করতে মন চাইল তার। তিনি বলেন, শিশুরা পড়তে রাজি হওয়ায় নিজের ৭০০ টাকা খরচ করে তাদের জন্য বই কিনে আনেন তিনি। প্রথম দিকে একজন শিশুর মাধ্যমে আরেকজন কে নিয়ে আসতেন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সাত তারিখে সাত জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করার পর তিন মাসেই তা বেড়ে দাড়ায় ২৪ জনে। তার পর প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বাড়ির মালিক তার গ্যারেজে শিশুদের পড়াশোনা করতে দিতে রাজি হবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় ছিল মাহফুজুর রহমানের। কিন্তু বাধা নয় উল্টো সাহস মিলল মালিকের কাছ থেকে। পাঠশালার নামটিও বাড়ির মালিকের দেওয়া। মালিকের বোনও বিষয়টি জানতে পেরে আগ্রহ দেখালেন। মাহফুজুর বলেন, "স্যারের বোন বললেন, চাচা, আপনি তো ভাল কাজ করছেন। আমি আপনাকে সাহায্য করব।" মাহফুজুর রহমানে প্রথম খরচের ৭০০ টাকাও মালিকের বোন দিয়ে দেন। এরপর থেকে আর্থিকভাবে তাকে আর অসুবিধায় পরতে হয়নি।
এই পাঠশালা থেকে শিক্ষা গ্রহন করে শিশুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লে গিয়ে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারে। এখন পর্যন্ত ১০০-১৫০ জন শিক্ষার্থী এখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়লে পড়ালেখা করছে। বর্তামনে ৭৫ জন শিক্ষার্থী আছে এই পাঠশালায়। মাহফুজুর রহমান ছাড়াও এখানে আরও তিনজন শিক্ষক শিক্ষাদান করেন। মাঝে মাঝে বাড়ির মালিক মঈন আহমেদও শিক্ষাদান করেন। মঈন আহমেদ বলেন, "শিক্ষকদের বেতনের দায়িত্ব কোন প্রতিষ্ঠান বহন করলে আরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হতো।"
#বিটিভি ও প্রথম আলোর সৌজন্যে#
আমরা যেখানে সমাজের তথাকথিত এলিটদের নিয়ে মিডিয়াতে মাতামাতি করতে দেখি।সেখানে মাহফুজুর রহমানের মত এমন ব্যক্তিরা সমাজে পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য তাদের কোন সম্মান বা খ্যাতির প্রয়োজন হয় না। তারা থেকে যান অনেকটা নিরবে, নিবৃতে।