গত বেশ কিছুদিন যাবৎ বাম বুকে ব্যাথা, খালি পেটে ব্যাথা, ভরা পেটে বাম বুকে জ্বালা পোড়া করা, মাঝে মাঝে বুক ধড়ফড় করা সহ ইত্যকার সমস্যায় ভুগছিলাম। এর সাথে আবার নতুন করে বাম হাতে অসস্থি লাগাতে, একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম হার্টে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা! ডাক্তার দেখাব ঠিক করলাম। কিন্তু কোন স্পেশালিষ্ট ডাক্তার দেখাই? তা নিয়ে আবার আরেক দুঃশ্চিন্তায় পড়লাম। হার্ট স্পেশালিষ্ট দেখাবো নাকি মেডিসিন স্পেশালিষ্ট দেখাবো। অবশেষে কয়েকজনের সাথে পরামর্শ করে মেডিসিন স্পেশালিষ্ট দেখানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমি যে ডাক্তার দেখাবো বলে ঠিক করলাম, উনি একজন প্রফেসর। আবার এফসিপিএস করেছেন দুইবার। একবার পাকিস্তান আমলে আবার বাংলাদেশ হওয়ার পরে। আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও ডিগ্রি নেওয়া। ভাবলাম অভিজ্ঞ ডাক্তার, আবার ভিজিটও কম। মাত্র ৬০০ টাকা ভিজিট। তাহলে উনার কাছেই যাই। আমি যেখানে থাকি তার পাশেই একটা নাম করা হাসপাতালে উনি চেম্বার করেন প্রতি রবিবার ও বুধবার।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল তার কাছে গিয়েছিলাম। হাসপাতালে গিয়ে ৬০০ টাকা ভিজিট দিয়ে সিরিয়াল দিলাম। উনার আসার কথা সকাল ১০ঃ৩০ টায়। সিরিয়াল দেওয়ার পর জানতে পারলাম উনি আসবেন ১১ঃ০০ টায়। বসে রইলাম উনার আসার অপেক্ষায়। অপেক্ষার সময় কি আর কাটতে চায়। অবশেষে ডাক্তার সাহেব আসলেন। তখন ঘড়িতে ১১ টা বেজে ৪৫ মিনিট। ডাক্তার সাহেব আসার পর আবার শুরু হলো সিরিয়াল পাওয়ার অপেক্ষা। অপেক্ষার পালা শেষ করে চেম্বারে প্রবেশ করলাম। সালাম দিয়ে উনার সামনে বসলাম এবং আমার যাবতীয় সকল সমস্যা খুলে বললাম। ডাক্তার সাহেব সব কিছু শুনলেন এবং গজ গজ করে প্যাডে পরীক্ষার লিস্ট করলেন। তারপর আমার হাতে ফাইলটা দিয়ে বললেন এগুলো পরীক্ষা করে নিয়ে আসেন। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার যে পরীক্ষা নিরীক্ষা দিবেন এটা জানাই ছিল। আমি যতটুকু জানতাম, যে সমস্যা নিয়ে আমি গিয়েছি, তাতে করে আমাকে তিনটা পরীক্ষা দেওয়ার কথা। কিন্তু উনি আমাকে তিনটার জায়গা ছয়টা পরীক্ষা দিয়েছেন। অবশ্য এই সব আগেই প্রস্তুতি ছিল। যাইহোক, সকল পরীক্ষানিরীক্ষা করে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার সাহেবের কাঋে গেলাম। ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট গুলো দেখে আমাকে বললেন, আপনার তো কোনো সমস্যা দেখি না। আমি বললাম, স্যার তাহলে আমার উপসর্গ গুলো কিসের। ডাক্তার বললেন, আপনি টেনশন করেন। তারপর তিনি প্রেসক্রিপশন করতে গিয়ে আমাকে কি ঔষধ দিবেন ভেবে পেলেন না। অবশেষে মোবাইলে এ্যাপস দেখে তিনটা ঔষধ লিখে দিলেন। চলে আসার সময় শুধু বললাম, স্যার আপনার যে বয়স, এই সময়ে আপনার তো রেস্টে থাকার কথা। আপনি কেন জাগায় জাগায় চেম্বার করে বেড়ান। এখন স্যার রেস্ট নেন। তার উত্তরের অপেক্ষা না করে বেরিয়ে চলে এসেছি।
আসতে আসতে একটা কথা মাথায় ঘোরপাক খেতে লাগল। আচ্ছা একজন ডাক্তারের জীবনে কত টাকা প্রয়োজন? সারাটা জীবন এই ডাক্তার সাহেব তো টাকা কামিয়েছেন। এই শেষ বয়সেও তার এতো টাকার প্রয়োজন কেন? পরে এই ডাক্তার সাহেবের গতকালের একটা হিসাব করলাম। তাতে গতকাল উনি প্রায় ৯০০০ (বিশ) হাজার টাকা শুধু ভিজিট বাবদই পেয়েছেন। এই টাকাটা উনি পেলেন মাত্র বেলা ১১ঃ ৪৫ থেকে বিকাল ৪ঃ০০ পর্যন্ত পরিশ্রম করে।
আগে যদি জানিতাম, তবে ডাক্তারই হইতাম
রোগী দেখতাম, আর টাকা কামাইতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৯ রাত ১০:০৭