তোমার চলার পথে ধূলো উড়ছে, পাতা ঝরছে-শূন্যতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাবলার ভিড়ে বসে বসে তোমার বন্দনায় কত বিকেলের রঙ মেখেছি গায়ে তার ইয়ত্তা নেই। চলে গেছ তো বেশ করেছ নয়তো গত জ্যোৎস্না প্লাবনে আমারও চোখে বিভ্রমের পিঁচুটি জমত। দিনমান একটি সুরের অন্বেষণে কী করে আমি ছিলাম জানতে চাইবে হয়ত ফিরে; অনিমেখ তাকিয়ে সে দিন জানি কিছুই বলতে পারবনা। অনুভবে রাঙানো ছাড়া আবেগ কী আর করতে পারে। পুটলি সমেত পাততাড়ি গুছাতে গুছাতে সে দিন কি বলেছিলে মনে আছে? হিমানো শরীর যেন হয়েছিল আমার সে সব শব্দ শ্রবণে, সটান হেলে পড়েছিলাম বিছানায়। মা'র আর্তিতে চোখ খুলে দেখি-পুরানো পেলেস্তার খসা দেয়ালগুলো বিষাদভরে তোমার না থাকার গল্প শোনাচ্ছে, ও সবে একদম কান দিইনি; বিশ্বাসে নিয়ত জাগ্রত-তুমি আসবে ওই তালতলা, বাবলার ধার ঘেঁষে।
দিনকে দিন বিkxর্ণ হচ্ছে শরীর, বড্ড জ্বালিয়ে যাচ্ছি স্বজনদের; আমার জন্য তাদের বুকে পোড়ন লাগুক তা কখনো চাইনি। আমার একটু হাসির জন্য এক বিন্দু স্বস্তির জন্য তাদের কী প্রাণান্তকর চেষ্টা! মিনু দি কত বোঝায় জীবন অনেক দামী; নিজেকে মূল্য দাও একটা ভুলের দামে পুরা জীবন বিকানোর কোনো মানে হতে পারে না। মিনু দির সুখের কপাল, ভালো চাকরি চেয়েছে-পেয়েছে, যাকে চেয়েছে তাকেও পেয়েছে সে জন্য তার বিচার আমাকে বুঝিয়ে কুলোবেনা, তাছাড়া-তুমি তো ভুলের নাম নও।
দুর্ভাগ্যের আকর নিয়ে আছি বুকে। তোমার উচ্ছ্বাসের সরল আলিঙ্গনে মনে হয়েছিল এবার খুলবে সুখের কপাট, কিন' তুমি পাখা মেলে দিলে অনিশ্চিতে। কী খেয়ালে শীতল বাতাস কিছু আমার জানালায় পাঠালে, বিমুগ্ধ আমাকে ডুবিয়ে আনন্দ পেলে তবে বলেই দিতে- ডুবো; নিশ্চিন্তে ষোলকলা পূর্ণ করে ডুবে যেতাম তোমার খাতিরে... কৃষ্ণচূড়া মাতিয়ে ফিরছে বোশেখী পাড়া। আবিরের দানায় পূর্ণ হচ্ছে বাতাস, চলতি পথে সামিয়ানা টেনে ধরে বাহারের আতশ লাগাচ্ছে মুগ্ধজনের চোখে। মন মাতানো কাঁঠালি চাঁপা এ নয় তবু আমার কি যে হলণ্ড কৃষ্ণচূড়া ফুলের এক একটি পাপড়ি চোখের সামনে ডানা মেলে যাচ্ছেণ্ড মনে হয় এগুলো লাল প্রজাতি, মনে হয় তোমার অজস্র চোখ। তন্ময় ডুব সাঁতারে তোমার চিহ্ন খুঁজে ফিরি...
ঘুমের সিঁড়ি টপকে বহুদূর উঠার মানসে পা ফেলতে ফেলতে আটকে পড়িণ্ড সমস্ত ইটে ইটে ভাসতে দেখি তোমার উজ্জ্বল মুখ। এসব কী হয় নিজেই জানি নাণ্ড মাঝে মাঝে যাপিত প্রহরগুলোর অণু কণা ছেয়ে পড়ে তোমার ছবিতে। ডাক্তার এসব শুনে অবসেশনের ঔষধ দেয়। অবসেশন! স্মৃতির খোলসে বাঁধা পড়ার এ বুঝি ডাক্তারী নাম? তোমার স্মরণে দিনমান পেরোই বলে তো বেঁচে আছি, যে ঔষধ ভণ্ডুল করবে তোমার অবস্থান সে আমি কি ভাবে গ্রহণ করি? ডাস্টবিনে, কমোডে, রাস্তায় লুকিয়ে লুকিয়ে সেসব ছুঁড়ে দিই। আমার ভাল হওয়া প্রলম্বিত হতে থাকে। তোমার স্মরণে রোগাক্রান্ত দিনও মধুময়।
সাদা বক জলার পাশ থেকে উড়ে যাচ্ছে, তার সাদা ডানায় লুকোই নিজেকে, চতুর মাছরাঙ্গার তড়িৎ বেগে জলেও ছুঁড়ি শান্তি মেলে না। বাতাসে, স্বনীলে, সবুজে, জলে ভেসে ওঠ তুমি, অথচ এভাবে নয় আমি চাই তুমি আস-বাবলা বন ঘেঁষে নিরব পথে ধূলো তাল তুলে-আমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে। ফিরো, বিরহ শিকলে আর কতো? এসো অবসন্ন হই মিলন কুঞ্জে।