somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় অবেলায় নীড়ে ফেরা

১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(৬)
আজ মিঃ হাওলাদারকে ব'লেই ফেললো,আঙ্কেল আপনাকে তো কখনো বাড়ি যেতে দেখলাম না?
-কখনো বউ মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলাম না?
- সবাই যার যার মতো চলে গেছে আর রিক্ত শূন্য আমি!আমার কোথায় যাওয়ার নেই!এই কাজের জায়গাটাতেই পড়ে থাকি।
- কি বলেন,আপনার সাথে যোগাযোগ না রাখার কারণ কি?
- সেটা তো আমি নিজেও জানিনা,জীবনে কিছু হৃদয়স্পর্শী দূর্ঘটনা অকারণেই ঘটে।দায়টা কার সেটা রয়ে যায় অগোচরে।
- তাহলে সারাদিন ও সারারাত কোথায় থাকেন?
- মনটাকে হালকা করতে আড্ডা,খেলা দেখা এগুলো করতে যাই।
- সে কি!কোথায় যান?
-আজ আপনার সাথে যাবো।
- যেতে চাইলে,চলো।
আঙ্কেলের সাথে টাউন সেন্টারের একটি ঘরে ঢুকলো।সেখানের দেয়ালে একটার সাথে আরেকটা ডিসপ্লে টিভি।কুকুরের দৌড়,ঘোড়ার দৌড়,ফুটবল,টেনিস,দাবা সহ বিভিন্ন খেলা হচ্ছে।কেউ কেউ বাজীতে জিতে গিয়ে অট্টহাসি দিতেছে আর কেউ কেউ হেরে গিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতেছে।দেখতে যেমন নেশায় আচ্ছন্ন স্নায়বিক উ্ওেজনা না জানি খেলায় অংশগ্রহণ করলে কেমন অনুভূতি হয়!
মিঃ হাওলাদার বললেন,
- কোন ঘোড়াটা এই দৌড়ে জিতবে বলে তোমার মনে হয়?
- আমার মনে হয় সাদা রঙের ঘোড়াটা জিতবে আর সাদা রং হলো সু-ভাগ্যের লক্ষণ।
- এই বিশ টাকা তাহলে তোমার কথা মতো সাদা ঘোড়াটাতে ধরলাম।
বিশ টাকায় দুইশত বিশ টাকা পেয়ে মিঃ হাওলাদার আবারো বললেন কোন কুকুরটা শক্তিশালী মনে হয়?
- মজনুর কথামত বাজী ধরে,আবারে জয়!

প্রথম দিনে প্রায় হাজার পাউন্ড জিতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে মিঃ হাওলাদার বললেন তুমি আসলেই সবকিছুতে দক্ষ।এভাবে মিঃ হাওলাদারের প্রতিদিনের খেলার সঙ্গী ও উপদেষ্টা হয়ে গেলো। মজনু যা টাকা পয়সা রোজগার করে সব চলে যায় জুয়ার নেশায়।সে আগের মতো বাড়ির কোন খোঁজ খবর নেয়া হয় না।বাবা- মাকে ফোন করলে দু একমিনিট কথা বলে।কোন একসময় ফ্রি হলে কথা বলবে বলে মা-বাবার ফোনের লাইন কেটে দেয়।কখনো বাড়ির ফোনে মজনুর ফেরত কল করা হয় না!

দিন যায় বছর যায় মজনু বাড়ির কোন খোঁজ খবর নেয় না।বাবার এ্যাজমার ঔষধের জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয় তা মজনু বেশ ভালো করে জানা সত্ত্বেও কানাকড়ি বাড়িতে পাঠায় না।বাড়ির কাজ শুরে করার কয়েকবছর হয়ে গেলেও এখনো অর্ধেক কাজ বাকী।বর্তমানে তাদের বাড়িতে কোন ছাদ নেই।পুরাতন টিন দিয়ে কোনভাবে বেড়া দিয়ে টিকে আছে এরচেয়ে বরং আগের পুরাতন একচাল টিনের ঘর অনেক ভালো ছিলো।বোনের বিবাহের টাকার জন্য কত অনুনয় করে তাকে বলা হলো।এই দিচ্ছি,এই পাঠাইতেছি এসব করে করে একটা টাকা না দেওয়াতে বড় ভাই মুদি দোকানটা বিক্রি করে বোনের বিবাহ সম্পন্ন করে।জায়গাজমি যা ছিলো সব বিক্রি করে বড় ভাই এখন অন্যের কাজ করে সংসারের ঘানি টানছে।

এদিক রোগে,শোকে,অনাহারে,অদ্রাহারে অতিশীপর বৃদ্ধ পুত্রশোকো কাতর হয়ে গেলেন। জীবন সায়াহ্নে এসে জানতে পারলেন তার গর্বের ধন সর্বনাশা জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে প্রিয়জনকে ভুলে গেছে।কঠিন পৃথিবীর পাথুরে বাস্তবতায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।দুঃখ-কষ্ট,হতাশা ও যন্ত্রণা পোহাতে পোহাতে স্বাভাবিক স্বপ্ন ধীরে ধীরে মলিনও ঝাপসা হতে থাকে। আদরের সন্তান যে ছিলে বাবার আর্দশের প্রতিক তাকে আজ মরণ ছোবল নেশায় পেয়েছে এরজন্য কাঁদতে কাঁদতে ছানিপড়া চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে।এমনি করেই কোন একদিন কাঁশতে কাঁশতে চোখ-মুখ ও নাক দিয়ে রক্তের স্রোত শীতল মাটিতে ঝরতে থাকে।মাটি এ অভিশাপের ভার সইতে না পেরে আপন করে বুকে টেনে নিলো এক সময়ের মাটি কাটরা কন্টাকটার মোজাম্মেল সাহেবকে।এক কপালপোড়া বাবা চিরদিনের জন্য মাটির বুকে শুয়ে পড়লেন।মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে ঢেকে গেলো আলোকোজ্জ্বল দিন।এক শুভ সোমবারে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন বড় দুঃখী এক বাবা।

বাবা– যে সন্তানকে ঘিরে হাজারো সুন্দরের জাল বুনে,যে অন্ধকারের মধ্যে আলোর দীপ্তি।সে বাবার জীবনধারণের উপায়কে ছিনিয়ে জীবনের আলো নিভিয়ে দেওয়ার ভূমিকায় ছিলো মজনুর মতো শিক্ষিত ছেলে।

বাবার মৃত্যুর পর,পঁচাশামুকে আটকে পড়া জীবনের খোলস থেকে মজনু বের হয়ে আসতে চায়।যেমন করে হোক হতাশা আর অস্থিরতা ঝেরে ফেলতে চায়।ভুল স্রোতে তলিয়ে যাওয়া সম্ভবনাকে টেনে তুলতে চায়।একটা অপরাধবোধ ও পরাজয়ের গ্লানি থেকে বহুদিনের চেনা ও সুযোগ সুবিধা ছেড়ে পাড়ি দিলো দুরের শহরে সোয়ানসি (Swansea) নামক স্থানে।লন্ডন থেকে আড়াইশো মাইল দুরে বাল্যবন্ধু শাহীন নতুন একটা রেষ্টুরেন্টে প্রতিষ্ঠিত করেছে।রেষ্টুরেন্টটি সমুদ্রের কাছাকাছি যেখান সমুদ্রের সাথে বলবে দুঃখের কথা।বাবাকে মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে।এবার নিজের কর্তব্যপরায়ণতা থেকে অন্তত মায়ের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবার পণ।আবার নতুন করে তার পথচলা শুরু ------ (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:২৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×