somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঞ্চিত অভিজ্ঞতার নোট -০১

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গড ইজ স্মাইলিং টুডে
*********************

জীবনে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে সেটা আমারা কোন কিছুতেই ভুলতে পারি না।কেন ভুলতে পারি না তার জন্য কোন সার্থক যুক্তিও নেই!তবে এটুকু বলা যায় এসব ঘটনা মনের মনিকোঠায় স্পষ্ট ছাপ রেখে যায়।আমাদেরকে জীবন চলার পথে শিখতে সাহায্য করে।আমার জীবনে ঘটে যাওয়া বিচিত্র সব ঘটনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মাধ্যমে জীবন সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা।

(এসব বর্ণনার সাথে এমন সব ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেছি যা আমার জীবনে ঘটেছে এবং তার মর্ম যতটুকু বুঝতে পেরছি তার কিছুটা শেয়ার করলাম।)

প্রায় একযুগ আগের ঘটনা,ইংল্যান্ড তখন ডাইভিং শিখতে শুরু করেছি।যেহেতু ডাইভিং এ পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তাই ভাবলাম বাঙালি কোন ইনৃইন্সট্রাক্টরের কাছে কয়েকটি লেসন নিয়ে পরীক্ষাটা দিলে হয়ে যাবে। বাঙালি একজনের কাছে ব্লক বুকিং দিলাম দশটা লেসন। বার নাকি ষোল পাউন্ড ঘন্টা ঠিক মনে নেই। যাইহোক ভদ্রলোক প্রতি লেসনে শুধু ড্রাইভ করাতো তারপর ঘন্টা শেষ হলে বিদায়। না শেখায় কোন পাকিং ও কোন টেকনিক শুধু গাড়ি চালাও। কোনভাবেই বোঝাতে পারলাম না যে আসলে কি শিখছি। কি শেখাচ্ছ!
দশটা লেসন অযথা শেষ করে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ইংলিশ ইন্সট্রাক্টরের কাছে আরো দশটা লেসন নিয়ে বুকিং দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে দেবো। বাঙালিতে আর কোন ভরসা নেই।
একজন বাইশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইংলিশ ইন্সট্রাক্টর মিঃ ইয়ানের কাছে লেসন(Lesson) বন্দোবস্ত করলাম। প্রথম দিন দেখি ভদ্রলোক ক্লাস ওয়ান ও টু'র ছাত্রদের মতো স্লেট - পেন্সিল দিয়ে বুঝানো শুরু করছে।মনে মনে ভাবলাম বাঙালি ভদ্রলোক আর এই ইংলিশ ভদ্রলোকের শেখানোর পদ্ধতি কতটা ভিন্ন। মিঃ ইয়ান আমার ডাইভিং স্কিল দেখে বেশ খুশি হলেন। উনি বললেন দশ থেকে বারটা লেসন দিয়ে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা পাশ করতে পারবো। যাইহোক বার থেকে পনেরটা লেসন নিয়ে প্রথমবারের মতো পরীক্ষা দিতে গেলাম।এদেশে ডাইভিং প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা পয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টার হয়ে থাকে। আর যদি কেউ একটা বড় ( Major) ভূল করে তবে ফেল।
এবার এক্সামিনার হলো মহিলা।পার্কিং,ড্রইভিং সব শেষ করে যখন এক্সাম সেন্টারে ফেরত আসছিলাম তখন এক্সামিনার মহিলা মোটরওয়ে দিয়ে আসতে বললেন। সেন্টারে ফেরত আসার পর ফেইলের নোটিশ ধরিয়ে দিলো। আমার মন খারাপের কোন ফিলিংস হলো না কিন্ত আমার ইনস্ট্রাক্টরের খুব বেশি মন খারাপ হলো। উনি বললেন দোষটা আসলে উনার কারণ উনি আমাকে কখনো Motorways তে নিয়ে লেসন দেয় নাই। মোটরওয়েতে লেনে ঢুকতে যে স্পিড মেনে চলতে হয় তা আমি মানি নি বলে ফেল। যাক পরে আরো কয়েকটি লেসন মোটরওয়েতে নিয়ে দ্বিতীয় বার পরীক্ষায় গেলাম।
এবার পুরুষ এক্সামিনার,এবারো পুরো পয়তাল্লিশ মিনিট ড্রাইভিং শেষ করে পরীক্ষার সেন্টারে ফেরার সময় সেন্টারের ঠিক সামনে একটি রাউন্ড এবাউট। আমার সামনে দিয়ে এক অভদ্র চালক স্পিডে গাড়ী চালিয়ে চলে যায় আর আমি শক্ত করে ব্রেক না করার ফলে এবারো ফেল।এবারো আমার ইনস্ট্রাক্টর বেশ বিষন্ন মুখে বললেন সরি,বেড লাক।

কিছুদিন পর তৃতীয়বারের মতো পরীক্ষা বুকিং দিলাম।সেদিন খুব ভোরে কুয়াশা ঘেরা সকালে পরীক্ষা সেন্টারে যাওয়ার সময় ইনসট্রাক্টর বললেন God is smiling today. আমি কিছু বুঝিনি কেন আমার ইনস্ট্রাক্টর এ কথা বলছেন।আমি ভাবলাম মনে হয় কুয়াশার ভোর কেটে সূর্য উদিত হচ্ছে দেখে একথা বলছেন। আবারো পুরুষ এক্সামিনার। প্রায় পয়ত্রিশ মিনিট ড্রাইভিং করার পর এক্সামিনার বললেন পরীক্ষা সেন্টারে ফেরত যাওয়ার জন্য।উনি হাসিমুখে পাশের নোটিফিকেশন ধরিয়ে দিলেন। সাথে এও বললেন আমি ভবিষ্যৎ ভালো ড্রাইভার হবো কারণ আমি নাকি ম্যানুভার খুব ভালোভাবে অবজারভ করি। এবার আমার ইনস্ট্রাক্টর বললেন আমি জানতাম আজ তুমি পাস করবে। আমি বোকার মতো বললাম কিভাবে! উনি আমাকে জানালেন, সকালে যাওয়ার সময় দুটি সাদা পায়রা বসে আছে তা তিনি দেখেছেন। তার বাবা ঘোড়ার লেদে কাজ করতে। খুব ছোটবেলায় তিনি তার বাবার সাথে ঘোড়ার লেদে যাবার সময় এভাবে পাখি দেখলে তার বাবা বলতেন আজকের দিনটা ভালো কাটবে কারণ 'গড ইজ স্মাইলিং টুডে'। বাবার স্মৃতিচারণ করতে করতে তার চোখে জল এসেছিলো।বাবার প্রতি আমার বৃদ্ধ ইনসট্রাক্টরের আবেগময় স্মৃতি এখনো চোখ ভাসে। বাবারা এমনি হয়। যখন হারায়ে ফেলি তখন তাদের কদরটা ভালো করে অনুভব করি।

নোট --
১) সন্তান যতই বৃদ্ধ হোক বাবার স্মৃতি আজীবন তাড়া করে বেড়ায়।
২) যেকোনো শিক্ষকই তার ছাত্রের সাফল্য দেখে তৃপ্তি পান।
৩) ভাগ্য বলে একটি কথা জীবনে কখন অবহেলা করা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ২:৫০
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×