পারম্ভিকতাঃ
আজ মহান 'মে দিবস' বা May day। যাদের জন্য এই দিনটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়,যাদের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, শ্রম, ঘামের ফসল আজকের মে দিবস,সেই শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সংহতি এবং উৎসবের দিনটি শ্রমিক-শ্রেণির কাছে অজানাই রয়ে আছে।
শুরুর ঘটনাঃ
---------------
প্রতিটি প্রাপ্তির পিছনে থাকে আত্মদান,আত্মহুতি ও কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস। আটার শতকের মাঝামাঝি ইউরোপে ছিলো শিল্প বিপ্লব ও পুঁজিবাদী বিকাশের প্রাথমিক যুগ। অমানবিক জুলুম, বিরতিহীন পরিশ্রম তখন শ্রমিকদের নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা যেখানে ছিলো না কোনো নিদিষ্ট শ্রমঘণ্টা ও ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা। সেই অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনা শুরু হয় দ্রোহ ও ক্ষোভ।
আন্দোলনের প্রক্রিয়াঃ
আমেরিকার কয়লা শ্রমিকরা অসংগঠিতভাবেই অনধিক ১০ ঘণ্টার শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ ও আরো আনুষাঙ্গিক দাবিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাথমিক আন্দোলন শুরু করে।
১৮৮০-৮১ সালের দিকে শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠা করে Federation of Organized Trades and Labor Unions of the United States and Canada [১৮৮৬ সালে নাম পরিবর্তন করে করা হয় American Federation of Labor]। এই সংঘের মাধ্যমে শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে শক্তি অর্জন করতে থাকে। ১৮৮৪ সালে সংঘটি '৮ ঘন্টা দৈনিক মজুরি' নির্ধারনের প্রস্তাব পাশ করে এবং মালিকও বনিক শ্রেণীকে এই প্রস্তাব কার্যকরের জন্য ১৮৮৬ সালের ১লা মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়।
১৮৭৫ খ্রিঃ যুক্তরাষ্ট্রেরপেনসেলভেনিয়ার কয়লা খনি শ্রমিকদের সংঘর্ষে ১০ শ্রমিক নিহত হন। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে ১০ ঘণ্টার নীচে শ্রমঘণ্টা নির্ধারণের দাবিতে শ্রমিকদের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি যেই মুহূর্তে শহরের কেন্দ্রস্থল 'হে' মার্কেটের কাছে পৌঁছলো ঠিক তখনি সৈনিকরা বাধায় তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়। সৈনিকদের বেপরোয়া মনোভাব ও মুহুমুহু গুলিতে বহুসংখ্যক শ্রমিক নিহত ও আহত হন। শ্রমিকদের রক্তে ভেজা শার্ট নিয়ে আন্দোলনের দাবানল তীব্র ছড়িয়ে পরে । শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত পোশাক শোক শক্তিতে পরিণত হয় । ধর্মঘট ও প্রতিবাদ মিছিল চলে ৫ মে পর্যন্ত। ইতোমধ্যে ৩ মে ৬ জন এবং ৫ মে আরও ৪ জন শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহত হন। গ্রেফতার হন শত শত শ্রমিক। পরবর্তীকালে যাদের অনেককেই মৃত্যুদন্ডের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় ।
স্বীকৃতি -
১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকান American Federation of Labor উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেন্ট লুইস শ্রমিক সম্মেলনে কাজের সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারণের দাবিতে ‘মে দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস সম্মেলনে ১ মে তারিখটিকে দেশে দেশে শ্রমিক-শ্রেণির আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত না হলেও ১৮৯০ সাল থেকে ইউরোপের দেশে দেশে শ্রমিক-শ্রেণী পহেলা মে। মে দিবস পালন করে আসছে।
প্রাথমিকভাবে গুটি কয়েক দেশে 'মে দিবস' পালন হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ পহেলা মে-কে সর্বজনীন শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। অতঃপর অনেক দেশ এই দিনটিকে রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক সংগঠনগুলো পহেলা মে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে পহেলা মে হয়ে উঠে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।
আজকের পেক্ষাপটঃ
আজকের রানা প্লাজা, এম, আর টাওয়ার ও কয়লা খনি, গার্মেন্টস শিল্প সহ বিভিন্ন ছোট বড় কলকারখানা দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রমিক পরিবার কতটুকু সাহায্য সহযোগীতা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা কি নূনতম মজুরি ও কাজের সময়সীমা আজ পযর্ন্ত পেয়েছে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মাধ্যমে মে দিবস পেলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজও শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি।
প্রস্তাবনাঃ
১) শ্রমিকদের প্রতি বৈষ্যমের মূলনীতি পরিহার করে শ্রমিকবান্ধব আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা।
২) শ্রমকদের নূন্যতম মজুরী প্রদান করতঃনূনতম মজুরির বিধান নিশ্চিত করার জন্য আইনের যথাযথ কার্যকর করা।
৩) শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন।
৪) শিশু শ্রম বন্ধ করা।
৫) সরকারী ও বেসরকারীভাবে মহিলাদের মাতৃকালীন ছুটি অবস্থায় ছয় মাস বেতনের পুরো অংশ প্রদান করা।
৬) কর্ম ক্ষেএে নারী বৈষম্য নিরোধ করতে হবে।
৭) কর্ম ক্ষেএে নারীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্হা করতে হবে।
৮) শ্রমিকদের জন্য শক্তিশালী শ্রমিক সংঘ প্রতিষ্ঠাতা করে তাতে সরকারের খবরদারি বন্ধ করতে হবে।
৯) কোন শ্রমিকের আকস্মিক মৃত্যু ও দূর্ঘটনার শিকার হলে তার পোষ্যদের জন্য চাকরির সুবিধা, পেনশন,ভাতার সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
১০) শ্রমিকদের অসুস্থতা, উৎসব, মেডিকেল লিভ সহ কাজে সাময়িক অনুপস্থিতে বেতন কর্তন রহিত করতে হবে।
যাদের ঘামে আজকের ইট পাথরের এ শহর, যাদের যাদুর পরশে আঁধার হয় আলোকিত, তাদেরকে আপন করে বুকে টেনে নেই,শেষ হোক বৈষম্য ও দৈন্যতার দিন, এটাই হোক মে দিবসের অঙ্গিকার।
হে মানুষ!
নৈতিক ও আদর্শিক চরিত্রের ভিত্তিতে চিন্তা ও পরস্পারিক সহযোগীতা বিকশিত করো,
সাম্য-মৈত্রীর কোমল স্পর্শে দূর হোক মনের কালিমা,বৈষম্য আর অন্ধকার জরা যত।
অজ্ঞতা,দুঃখ,গ্লানি ও বিভেদের আবর্তে নিমজ্জিত থাকা বর্বরের হিংস্রনীতি,
তা'যে অধিকার ও মর্যাদা হারানোর'সংকেত অশনি'।
সংকীর্নতা,অনাস্থা,অবিশ্বাস,স্বেচ্ছাচারী ও অহংকারের গভীর গর্ত থেকে বের হয়ে-
বাড়াও বর্ণিল সম্প্রীতির সৌন্দর্য।
দয়া-ভালোবাসার প্রবল খরা ছিন্ন করে - আলোকিত হোক প্রতিটি জীবন,
মানবতাবোধ জাগ্রত হোক প্রতিটি প্রাণে - বয়ে যাক শান্তির প্লাবন।
আজ বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা নয়!
বরং
জ্ঞান,চারিত্রিক মাধুর্যতা,বিনয়,ভদ্রতা,সমঝোতা,বোঝাপড়া ও আস্থাতেই---
ব্যক্তি,সমাজ,ও রাষ্ট্রের কল্যাণ নিহিত রয়।
''মানুষ আমি এটাই হোক আমার বড় পরিচয়'
--- রহমান লতিফ-----
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৮:২২