somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা_হিপোক্রেসি- নরকের কীটের সাথে সহবাস

১১ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নরকের কীটের সাথে সহবাস
(বয়োবৃদ্ধ ও বয়োকনিষ্ঠদের পোস্টটি এড়িয়ে যাবার অনুরোধ )


(গল্প)
পর্ব -০১
নাটকের শেষ দৃশ্য...... জীবনে কতই না অপেক্ষা,টানটান উত্তেজনা, বিরক্তি, আসক্তি, উম্মাদনা আর কতইনা খিস্তিখেউর করেছি নাটকের শেষ দৃশ্য দেখবো বলে। সেই আলিফ লায়লা,সিন্দাবাদ, ম্যাকগাইভার, বাকের ভাই কত্ত কিছু আর বাস্তব জীবনে যখন নিজের জীবন নাটকের শেষ দৃশ্য আর শুরুর শেষ নিজেকে উপভোগ আর উপহাসের সম্মুখীন হতে হয় তখন হয়তো কেউ জানে না। নিজের জীবন নাটকের অনেক ঘটনাই ক্ষত সৃষ্টি করে হৃদয়ে অনেকটা ভোরের শিশির বিন্দুর মতো ফোঁটা ফোঁটা রক্ত কণিকা গলিয়ে পড়ে হৃদয় থেকে অবিরাম কেউ দেখে না। কেউ জানে না।
ঠিক এমনি একটি রক্তস্নাত অধ্যায় আমার জীবন নাটকে প্রদর্শিত হয়েছিল যা কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। কাউকে জানতে দেইনি কতটা ভয়াবহ ছিলো সেই মুহূর্ত। দুলোক- ভূলোক কি যাতনাকে লঘুচিত্তে বহন করেছি কেউ শুনে নি। আর সেই যাতনার কারিগর যখন সেই রূপবান যাকে তিলে তিলে সঞ্চিত করে রেখেছিলাম হৃদবন্দরে, যাকে দিয়েছিলাম যৌবনের তেরটি বছরের নিস্পাপ ভালোবাসার ষোলকলা।বিংশ শতাব্দীর শেষে যখন বূহ্যভেদ আশায় বিদেশে পাড়ি জমাই ঠিক তখন আমার ছিলো বয়সী বিশের রসালো যৌবন। কাউকে ভালোবাসা আর ভালোলাগা কি সে বয়সে যতটা বুঝতাম তা ছিলো ঠিক আম,জাম,ডুমুর ফলের গাছের দিকে ফল তাকিয়ে দেখার মতো। কখনো হাত বাড়িয়ে বা কখনো গাছের ডালে চড়ে বোটা থেকে জোটা হতো না। সেটা হয়তো বয়ঃসন্ধিতে নিজের তেমনি গড়ে উঠা আত্মা যা ছিলো সফেদ আর নিখাঁদ। কিন্তু কে জানে সেই খাঁটি অন্তরীক্ষে কোন বাজীকর দিয়ে দিবে দাবার চাল যা বুঝতে পেরে ওটা সম্ভব হয়নি এই সরলমনে। ২০০০ সালে লন্ডন আসার পর অনেক মেয়ের সাথে পরিচয় হলো। আমার সবুজ মনটাকে অনেকেই অবুঝ ভেবে নাড়া দিতে থাকলো। তাদের কেউ হাত বাড়িয়ে নয় বরং বুক বাড়িয়ে জড়িয়ে নিতে চাইতো। আর আমি তো নাদান ষষ্ঠী মধুর অপেক্ষায় থাকা ঋষি হয়েই থাকতে চাইলাম।

পর্ব -০২
সময় কখনো চোরাবালিতে আটকায় না। সে চলে যায় বহতা নদীর মতো কলকল- ছলছল নৃত্যের কলতানে। কখন যে দিন চলে গিয়ে রাত আসে আর কিভাবে যে ফুরিয়ে যায় প্রভাতরাগ কিংবা সন্ধ্যা মালতীর সুর তাতো কেবলি অধরাই কিংবা বেখেয়ালি থেকে যায়। মাঝেমধ্যে সময়ের এই গতিরেখা কি সবজায়গায় একি সমানতালে সরলরেখায় চলে নাকি বক্ররেখায় আঁকা বাঁকা চলে তা নিয়ে বিশদভাবে জানতে ইচ্ছে করে! তবে বিদেশে বিভূঁইয়ে এসে জানতে পারলাম সময় কতনা বিদ্যুৎতিক বেগে চলে যায়। দেশে থাকতে সময় যেন বাঁশের সাঁকোর মতো পরিপাটি ও জড়োসড়ো হয়ে আটকে থাকতো। সামনে আগাতে অনেক বেগ পেতে হয় কতনা অলস দুপুর হাই ভলিয়মে ক্যাসেট প্লেয়ারে হিন্দি গান আজা নাচলে, মাহিরে কিংবা বাংলার হারানো দিনের গানের মধ্যে চলতো সতীনাথ থেকে মান্না দে, শ্রীকান্ত কিংবা হাসনরাজা থেকে রথীন্দ্র নাথ শুনে শুনে তবুও যেন দুপুর গড়িয়ে রাত আসতো না। আর নিশুতি রাতের আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে কখনোবা কাঁথা মুড়িয়ে জীবনানন্দ থেকে মাসুদ রানা কিংবা কাশেম বীন আবুবকরের ইসলামি রীতিগত সুড়সুড়ি দেয়া গল্প পড়তে পড়তে। তবুও সময় যেন দেশের কাদামাটির মতো কর্দমাক্ত ও পিচ্চিল হয়ে চলেতো। কখন হোঁচট খেলাম কখন আঘাত পেলাম তা ক্ষণে ক্ষণে মনে জেগে থাকতো।
-আর এই বিদেশের মাটিতে সময় যেন সহস্র মাইল বেগে চলে যায় কখন যে ছয় মাসের ভিজিট ভিসার সময় কেটে গিয়ে অবৈধ অভিবাসীর তকমা গায়ে লাগিয়ে গেলো তা কোনভাবেই টেরই পেলাম না।
- হায় ঈশ্বর মানুষ আমি হয়ে গেলাম নৈসর্গের বুকে এক আজব, জটিল, অবৈধ নাগরিক।
দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট্ট হওয়াতে পরিবারের বৈরীভাব কখনো আঁচ করতে পারিনি। বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়াতে হয়তো অন্যরকম বাবা বলে আমার কাছে মনে হতো। বাবার কাছে দেশ,মানুষ ও পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ আমাকে মুগ্ধ করতো আর তাই ছেলে হিসাবে যখন যা চাইতাম তাই সাধ্যমত এনে দিতেন ৷সিলেট শহরের সুরমা নদীর কুল ঘেষা দক্ষিণ সুরমায় আমাদের পারিবারিক বাসস্থান। শহরে আসতে মাঝে মধ্যে বেগ পেতে হতো। ঝামেলার অন্যতম কারণ ছিলো এই সুরমা নদী। নদী পারাপারের জন্য ব্রিজ যাকে বলে কীন ব্রিজ তা পারাপারে রিক্সার সাথে আরেকজন সহযোগী লাগতো রিক্সার পিছনে ঠেলে দেওয়ার জন্য। এমতাবস্থায় বাবাকে আবদার করতেই একটা সুযোকি হোন্ডা আমাকে কিনে দিলেন। হোন্ডা পেয়ে মনের আনন্দে সকাল- বিকাল সবসময় শহরমুখী হতাম। আড্ডা আর হৈ-হুল্লোড়ের কেটে যেতে মধুর সময়৷ কখনো বৈষম্য চোখে পড়তো না। কখনো আজেবাজে কাজে নিজেকে জড়াতাম না ৷মাঝে মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সংগঠনে যুক্ত হতাম। টুকটাক গান বাজনা, শারীরিক কসরতের জন্য কুংফু এগুলো শিখতে লাগলাম। মেয়েদের সাথে মিশেলও একটা দুরত্ব বজায় রাখতাম। নিজেকে কোন বৈধ কিংবা অবৈধ, বা অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতাম না। সবসময় নিজেকে ভার্জিন রাখার মানষে নৈতিকতাকে সবকিছুর উর্ধে রাখতাম। বৈধ আর অবৈধ সম্পর্ক কি তা ঠিকই বুঝতাম তবে বিদেশে এসে এই বৈধ আর অবৈধের বৈষম্য মারাত্মকভাবে বুঝতে পারলাম। আদম সন্তান মানুষও যে অবৈধ হয় তা কখনো বুঝতাম না। এবার বিদেশে এসে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম অবৈধ কি আর কেনইবা বলা হয় নিজগৃহে একবেলা খেয়ে বাঁচা শতগুণ ভালো এই নিদারুণ নিষ্ঠুর পরবাস থেকে।
দেশে আমাদের পাঁচ বেডরুমের ঘর। অনেকদিন নিজের ঘরের এক রুমে থেকে আরেকটি রুমে যাওয়া হয়না। অযত্নে থেকে যায় ঘর, আসবাবপত্র, রুম আর বিদেশে একটু মাথা গুঁজে থাকার জন্য কত কক্ষপথ অতিক্রম করতে হয় কত আসীম পেরিয়ে পাওয়া যায় সসীমের দেখা তা কেবল ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানবে না। অবৈধ হওয়ার পর থেকে নিজের মাথা গুঁজার ঠাঁই, কাজের ব্যবস্হা, বৈধ হওয়ার সাধনা এগুলো নিয়ে তছবিহ জপতে থাকলাম।

(চলবে নাকি)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:২১
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×