somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা নোটবুক ০৯ - জুয়ার জৌলুস কতদূর !

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দ্যা নোটবুক - জুয়ার জৌলুস কতদূর !

'খেলাধুলা' আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবশ্য এটি প্রতীয়মান সত্য যে, মানুষের দেহ,মন, চিত্ত ও বিত্তের খোরাক যোগানোর সর্বজনীন এক মাধ্যমেই খেলাধুলা। আধুনিক যুগে খেলাধুলা নিছক বিনোদনের সীমারেখার অতিক্রম করে বরং কৃত্রিমতা ও আদিমতায় ভরপুর সামাজিক বলয় ও অসৎ তরুণ প্রজন্মে তৈরি করে চলছে। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার ২০১৪ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) ৫০তম ‘স্পোর্টস মিট’ উপলক্ষে বক্তব্য বলেছেন, খেলাধুলা শুধু সুস্থতাই দেয় না, সুখও দেয়। আমরা পুরো জাতি খেলোয়াড় হতে পারব না। কিন্তু একটা সুখী জাতি তো আমরা হতেই পারি। এতে বুঝা যায় জাতি গঠনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা।কোন খেলায় যদি বাজী ধরা বা টাকাপয়সার লেনদেন জড়িত থাকে তখন খেলাটি অসাধুদের মেলায় পরিণত হয়। দুর্ভাগাজনকভাবে ঠিক কবে থেকে খেলাধুলায় আসক্তি বাড়ানোর উপকরণ হিসাবে টাকা পয়সার সখ্যতা গড়ে ওঠেছে তা বলা মুশকিল । সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন মধ্যস্বত্ব ভোগী ও সুবিধাবাদিরা তাদের স্বার্থের স্বাদ বাড়াতে পরিকল্পনামাফিক যোগ করে "পে এন্ড প্লে" আর খেলাধুলাকে অসাধু ব্যবসা-সম্পৃক্ত পণ্য হুসাবে চলে "ফ্রডিং এন্ড ফিক্সিং"। পশ্চিমা বিশ্বের আনাচে কানাচে থেকে শুরু করে অনলাইনসহ হরেক পন্থায় বুকিজ হাউস, ক্যাসিনো ও রুলেট মিশিনে শত শত কোটি পাউন্ডের জুয়ার ব্যবসা চলছে। এতে দেখা যায় অনেকেই নিঃস্ব ও সবসুদ্ধ হারিয়ে পাগল হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের একজন ঘরোয়া ফুটবলারের নিলামে যা দাম হয় তা হয়তে বাংলাদেশের কোন বড় শহরের বার্ষিক বাজেটের সমতুল্য বা কম- বেশি হতে পারে৷ জুয়া হলো পুঁজিপতিদের টাকা বানানোর মাধ্যম। কোন ব্যবসায় পুঁজিপতিরা বিনিয়োগ করবে লাভের আশায় নাকি নিছক বিনোদনের জন্য? সে যাই হোক জুয়ারীদের কাছে জুয়া খেলে আখেরে কে লাভবান হয় তা আদৌও ভাবার কোন বিষয় নয়।

ঘটনা -
আমার এক মিউচুয়াল বন্ধু মিঃ ছমীর উদ্দিন ( ছদ্মনাম), যাকে আমি মামা বলে ডাকতাম । ভদ্রলোক কুষ্টিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্য পড়তে আসে। সদাহাস্যজ্বল ও নামাজি লোকটাকে আমার কাছে বেশ আপন আপন ও বন্ধুবৎসল বলে মনে হতো। রাজনীতি, ধর্মনীতি ও লেখাপড়ার বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে তার সাথে বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা ও সমালোচনা হতো। মিঃ ছমীর উদ্দিন একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসাবে কাজ করে। সপ্তাহে বেতন বড়জোড় ২০০-২২০ পাউন্ড পায়। ২০০৯ সালে কোন একসময় সে আমাকে জানালো হঠাৎ করে বিয়ে করে বৌকে এদেশে নিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয় তার একমাত্র ছোট ভাইকেও প্রায় আট লক্ষ টাকা খরচ করে এদেশে স্টুডেন্ট ভিসায় নিয়ে আসছে। হঠাৎ করে তার এত টাকার কর্ম সাধনে বেশ অবাক হলাম ! তার বদলে যাওয়ার গুপ্ত রহস্যের উৎস সন্ধানে মিঃ ছমীরের কাছের বন্ধু মামুন'কে জিজ্ঞেস করি ঘটনা কি? সে এত টাকা কোথায় পেলো? রহস্য উদঘাটনের ফলাফলে জানতে পারি মিঃ ছমীর লন্ডনের নামকরা একটি ক্যাসিনোতে খেলে এক রাতে পনেরো হাজার পাউন্ড আয় করে পুরো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে আর সেই টাকা দিয়ে বিয়ে ও ভাইয়ের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। জুয়ার টাকাটা অন্তত কাজে লাগিয়েছে জেনে ভালোই লাগলো। এরমধ্যে বেশ কয়েকবছর ছমীরের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ নেই। ২০১৩ সালে কোন এক রাতে তাকে লন্ডনের চায়না টাউনে বাংলাদেশি রিকশার মতো (টমটম) চালাতে দেখি। মলিন চেহারা আর কাঁচাপাকা দাঁড়ি -গোঁফে তাকে অন্যরকম লাগছিলো। তাকে দেখে বড় করুণা হলো। আবারো মামুন'কে ফোন দিয়ে মিঃ ছমীরের বর্তমান হালহকিকত সম্পর্কে জানতে চাইলাম। মামুন জানালো মিঃ ছমীরের স্ত্রী তার সাথে ঝগড়া করে বাচ্চা নিয়ে শেলটার হোমে চলে গেছে। তার ছোট ভাই এদেশে একটি মেয়েকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর জানতে পারে তার স্ত্রী মানসিক বিকারগস্ত তাই ছোটভাই সে স্ত্রীকে ফেলে ফ্রান্সে চলে গেছে। কার্যত মিঃ ছমীর একজন অসহায় মানুষ রিক্সা চালিয়ে যা রোজগার করে তা জুয়া খেলে শেষ করে দেয়। এই শিক্ষিত লোকটার এখন আগ- পিছ বলতে কিছু নেই। সবকিছু শুনে মিঃ ছমীরের জন্য যতটুকু করুণা হয়েছিল ততটাই তিরস্কার করতে ইচ্ছে করলো। ভাবলাম জুয়ার জৌলুস কতদূর !

নোট-
(১) অবৈধ কাজকারবার কখনোই মানসিক স্বস্তি ও সুখ কোনটাই দিতে পারে না ।
(২) জুয়ার খোয়াবে শুধু খোয়ানো ছাড়া কোন অর্জন নেই।
(৩) নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞের বিজয় আর অজ্ঞের আহাজারি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৪
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×