somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়ন্ত বিকেল

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়ন্ত বিকেলে ছাদের রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে থেকে সূর্যাস্ত দেখছে রুদ্র আর মেঘকেও কারো সাথে কথা বলছে না। শুধু পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ওরা। মেঘের হাতের দিকে চোখ পড়তেই রুদ্র বলে উঠল
- মেঘ,তোর হাতে আংটি কোথায়?
- খুলে রেখেছি।
- কেন?
- ভাল লাগে না তাই।
- ভাল লাগতে হবে।
- সবসময় কি তোর কথা শুনতে হবে!
- তুই আমাকে কি কথা দিয়েছিলি মনে আছে?
- হ্যাঁ মনে আছে।
- তাহলে হাতে আংটি পড়ে আয় যা। আমি তোর হাত ধরব।
- তো ধর না। আংটি কেন লাগবে?
- তুই আমাকে বলেছিলি যে পরেরবার হাত ধরলে আংটি বাজবে। আমি এই বাধাটা অনুভব করতে চাই। তাছাড়া তোর এই খালি হাত এখন ধরতে আমার ইয়েতে বাজবে।
- তাহলে ধরিস না। আমি তাও পড়ব না।
আরো কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা। চারদিক নিস্তব্ধ, শুধুমাত্র বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
- মেঘ, তুই কি জানিস যে তোর সাথে দেখা হলে আমি হাত না ধরে থাকতে পারি না?
- দেখ তুই যা চাস তা কোনোদিন সম্ভব না। তাছাড়া আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। কাল বাদে পরশু বিয়ে। তুই নিজেই তো বিয়ে খেতে এসেছিস।
- আমি চাই তোর হাত ধরতে। এটা কি অসম্ভব কিছু?
কোনো কথা বলে না মেঘ। চুপচাপ হাত বাড়িয়ে দেয় সে। রুদ্র ওর হাত ধরে নিজের বুকে চেপে ধরে রাখে আর কি যেন ভাবতে থাকে। মেঘ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। কেও জানে না তারা কি ভাবছে।
- রুদ্র , এই রুদ্র
কোনো সাড়া দেয় না সে। মেঘ জোড়ে একটা ধাক্কা মারলে তবে মুখ খুলে।
- কিছু বলবি?
- আমি নিচে থেকে দুকাপ চা বানিয়ে আনি। তুই এখানেই থাক।
- ঠিক আছে যা।
- হাত ধরে থাকলে কি করে যাব আমি, তুই বল?হাত কেটে দিয়ে যাই?
- তাহলে তো ভালোই হত।
- পাগল একটা তুই। এখন হাতটা ছেড়ে দে।
হাত ছেড়ে দেয় রুদ্র। সে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে লাল শাড়ি পড়ে। তারপর কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ দেয় আর চোখে গাঢ় করে কাজল। রুদ্র একদিন বলেছিল-" লাল শাড়ি, ছোট কালো টিপ আর কাজল কালো চোখে তোকে খুব সুন্দর লাগে। ঠিক যেন রুপকথার রাজকন্যা।" তারপর দৌঁড়ে ছাদে চলে আসল।
কিন্তু ছাদে রুদ্র নেই। কোথায় গেল সে! এসময় রাস্তায় মানুষের চিৎকার শুনতে পেল সে। ছাদ থেকে উকি দিল নিচের দিকে। বাড়ির নিচে রাস্তায় রুদ্রের লাশ পড়ে আছে। এই নিষ্ঠুর সত্যকে সহজে মেনে নিতে পারল না সে। সে দৌঁড়ে নিচে নেমে লাশের কাছে গেল। তারপর সেখানেই বসে থেকে কাদতে থাকল। হঠাৎ লক্ষ করে দেখল রুদ্রর হাতের মুঠোয় একটা চিরকুট। ভয়ে ভয়ে সেটা খুলল সে।
" কি যেন বললি তুই; অসম্ভব তাই না? সত্যিই কি তাই!আমি যা চাচ্ছিলাম তা কি সত্যিই অসম্ভব?কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবি আমি কি চাচ্ছিলাম। আর এটাও বুঝতে পারবি যে আমি তা সম্ভব করেছি। সূর্যের সাথে তোর রুদ্রও আজ অস্ত যাচ্ছে। শেষ দেখা, শেষ কথা,শেষ হাত ধরা সবই তো হল। শুধু বাদ থাকল শেষ ইচ্ছা পূরণ। তাই পা বাড়ালাম আমি। আমাকে যদি কখনো দেখতে ইচ্ছে হয় তবে রাতে একবার ছাদে উঠিস। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটাই হব আমি। আর তা না হলে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি অবাস্তব রুদ্র তো তোর কাছে আছেই। বিদায় আমার কৃষ্ণকলি। ভাল থাকিস।"
সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল। সেদিন সারারাত এমনকি পরেরদিনও কাদল মেঘ। বাসার অনেকেই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল ওর দিকে আর ভাবল- " কাল মেয়ের বিয়ে, আর সে কিনা অন্য একটা ছেলের জন্য কাদছে! তাও আবার হিন্দু ছেলে!"
হয়তো মানুষের এই ভাবনার কথা ভেবেই মেঘ প্রথমেই তাদের সম্পর্ককে অসম্ভবের মধ্যে স্থান দিয়েছিল।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×