somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিভেদ

০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, রিশাদ। কিছু তো কর!
ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সড়িয়ে নিয়ে চশমা টা ঠিক করে মুচকি হেসে রিশাদ বলল-" কি করতে হবে? ব্যান্ড ভাড়া নাকি ডেকোরেটর? ফটোগ্রাফি নিয়ে ভাবিস না। যে ক্যামেরাটা আছে তা দিয়ে দিব্যি তোদের ফাংশন টা কভার দেয়া যাবে।"
- আর কিছু?
- অবশ্যই, খাবার মেন্যু টা বলে রাখবি আগেই; ভাল না হলে আমি কিন্তু যাব না। শেষে তোদের স্মৃতিগুলো ফ্রেমে বন্দী করার মানুষ পাবি না বলে দিলাম।
- তুই থামবি?
হালকা হেসে মুখ সরিয়ে নেয় রিশাদ। এ হাসির অর্থটা অপ্সরার জানা। ছোটবেলায় যখন খুব বেশি অভিমান করত রিশাদ, ঠিক এভাবেই হাসত সে। তখন সে রিশাদের প্রিয় গানটা শিষ বাজাতো। কিছুক্ষ্ণ পর রিশাদের অভিমান ভেঙ্গে যেত। সেটা বোঝার ও উপায় জানত অপ্সরা। মাঝের দিকে এসে শিষের সাথে তাল দেয়ার মানে হচ্ছে রিশাদের অভিমান ভেঙ্গে গেছে। আজ সে এমনই কিছু করতে যাচ্ছিল। শিষ দিয়ে রিশাদের প্রিয় গান টা ধরতেই, রিশাদও ধরল অপ্সরার সাথে। অপ্সরা থেমে গেল। কারণ সে আগে কখনোই এভাবে দেখে নি রিশাদ কে শুরুতেই তাল দিতে। অপ্সরা রিশাদ কে চিনছে না কদিন ধরে। কেমন যেন হয়ে গেছে রিশাদ! কথা বলে না ঠিকভাবে; সারাক্ষণ যে ডায়েরী নিয়ে পড়ে থাকত সে এখন ফোন নিয়ে পড়ে থাকে। কিছু বললে বলে যে-"আমি ফোনে নোট করি এখন। হাতে লিখতে ভাল লাগে না আর।" কিন্তু সেদিন অপ্সরা রিশাদের ফোন চেক করেও কিছু খুঁজে পায়নি। শুধু পেয়েছে কয়েকটা লাইন; তাও আবার একেকটা একেকদিনে লেখা। রিশাদ আর কেন জানি সিগারেটও খায় না তার সামনে। আগে সিগারেট খেলেই মুখ থেকে টেনে নিত সে। একবার তো কি হল; রিশাদ কেবলই একটা সিগারেট ধরিয়েছে। অপ্সরা সেটা টেনে নিয়ে মুখে ধরে টান দিব দিব বলতেই সত্যি সত্যি টান দিয়ে দিল। তারপর কি যে এক অবস্থা! কাশতে কাশতে মেয়েটার মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। আর শাস্তিস্বরূপ রিশাদের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। রিশাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। তার পুরো পরিস্থিতিটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছিল। থাপ্পড় খাওয়ার পরেও যেন ভয় পেয়ে যায় রিশাদ। এই ঘটনার পর এক সপ্তাহ সে সিগারেট খায়নি অপ্সরার সামনে। কিন্তু এটা তো অনেক পুরোনো ঘটনা। তারপর কতবার সে সিগারেট খেয়েছে অপ্সরার সামনে! আর এখন; ভুলেও অপ্সরার সামনে সে সিগারেট ধরায় না। অপ্সরা ভাবতে থাকে মানুষ কতই না অদ্ভুত। আগে তার সামনে সিগারেট ধরানোর জন্য সে গালাগালি করতো আর এখন ধরায় না বলে সে মন খারাপ করছে।
রিশাদের কাঁধে অনেকদিন গিটারও দেখে না অপ্সরা। আগে ওর ভাঙ্গা গলায় জোর করে ধরে যখন ওর লেখা আর সুর করা উলটাপালটা গান শুনাতো সে, তখন কি যে বিরক্ত লাগতো অপ্সরার! মাঝেমাঝে উঠে চলে আসতে নিত। কিন্তু রিশাদ উঠতে দিত না। হাত চেপে ধরে আবার বসিয়ে দিত। আর এখন গিটারের তারে ধুলো পড়ে যাচ্ছে, স্ট্রিং গুলো জঙ করে কালো হয়ে যাচ্ছে; রিশাদ আর গিটার বাজায় না।
-রিশাদ! তুই ফোনটা রাখবি?
- এক মিনিট, রাখছি।
রিশাদ কখনোই এমন করে নি আগে। ফোন রাখ বলার সাথে সাথে ফোন পকেটে রেখে দিত সে। আর এখন মুখের উপর না বলে দিল! যার উপর অধিকার খাটানো যায় তাকে আর যাই হোক ঘৃণা করা যায়
না। এজন্যই হয়ত এখনও অপ্সরা রিশাদকে চায়; সবসময়।
মনে মনে অপ্সরা ভাবতে থাকে তাকে সব ভুলে যতে হবে, ফেলে আসা দিনগুলো, আবেগে ঢাকা স্বপ্নগুলো, আদরে গড়া খুনসুটিগুলো; সবকিছু।
ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে উঠে যাচ্ছে অপ্সরা। ভেবেছিল রিশাদ আটকাবে; কিন্তু আটকালো না। সে ফোনের দিকে তাকিয়েই আছে আর কিছুক্ষণ পর পর হাসছে। কার সাথে এত কথা রিশাদের! কেন সে অপ্সরা না! কেন অন্যকেও!
অপ্সরা পিছে ফিরে হাঁটা শুরু করলো। প্রতিদিন এভাবে সে পিছে ফিরে হাঁটে। ঠিক যেভাবে পিছে ফিরে হাঁটত রিশাদ। কিন্তু কখনোই কোনো বাস এসে চাপা দিয়ে যায় না তাকে। তাহলে কেন রিশাদকে
দিল! ছোটবেলা থেকে তো কোনকিছুতে তাদের কেও আলাদা করে নি; তাহলে কেন সেদিন শুধু রিশাদের সাথে এমন হল!
অপ্সরার নিজেকে খুব বেশি দোষী মনে করে। যে কারণগুলোর জন্য রিশাদ এভাবে উঠে উঠে চলে যে সেসব তার নাটক ছিল। সে চাইতো কখনো রিশাদ ফোনটা কেড়ে নিয়ে দেখুক; কখনো রিশাদ একটু
শাসন করুক; কিন্তু সে করে নি।
আজ হয়ত তার শেষ আসা পার্কে। আর হয়ত বাসা থেকে বের হতে দিবে না তাকে। কাল বাদে পরশু বিয়ে। ছেলে বাইরে থাকে, বিয়ের পর তাকেও বাইরে নিয়ে যাবে। সে জানে রিশাদের সাথে তার আর দেখা হবে না। সে আবার পিছে তাকায়; রিশাদ মিশে যাচ্ছে। হাত নেড়ে শেষবারের মত বিদায় দিয়ে দিল রিশাদ। এটা দেখে অপ্সরা খুশি হয়েছিল ক্ষণিকের জন্য; সে ভেবেছিল সে আজ মারা যাবে। ঠিক যেভাবে রিশাদ মারা গিয়েছিল সেদিন। কারণ এভাবে হাত নেড়ে বিদায় কখনোই দেয় নি রিশাদ।
কিন্তু অনেক ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও মানুষ চাইলেই স্বাভাবিকভাবে মারা যায় না। হয় তাকে পথ বেছে নিতে হয়, নয়ত পথের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সে মনে মনে ভাবে- রিশাদ ত পথ বেছে নেয় নি; তাহলে
আমি কেন! তাই তার সামনে দিয়ে বাস চলে গেলেও পা বাড়ায় না অপ্সরা।
"জীবনটা রিশাদের লেখা; ছন্দটা না হয় আমিই দেই.........." এটা ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে যায় অপ্সরা। হয়ত কোন এক বিকেলে অপ্সরা এসেছিল আবার, বসেছিল পার্কের ধার ঘেষে শ্যাওলা পড়া সেই ভাঙ্গা বেঞ্চে। কিন্তু রিশাদ আসে নি। অপ্সরা ফিরে যায়। আর কখনো আসে নি সে; এমনকি দেশে ফিরেও
না।।।।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×