somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেফজো শিক্ষা কিছু স্মৃতি এবং মাদ্রাসা জীবন।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুই..............

আমার আব্বা চিংড়ী মাছের পোনার ব্যাবসা করত। আমাদের উইনিয়ানটি চারদিকে নদী বেষ্টিত হওয়ায় মাছের পোনার ব্যাবসা খুব বেশি হত। কোন একটা কারনে আব্বার ব্যাবসার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় একারনে আমাদের সংসারে টানাপড়ন শুরু হয়। পরিবারের খরচ চালাতে আব্বা হিমশিম খাচ্ছিল একারনে আমার আম্মা একটা কাজের ব্যবস্থা করলো নিজের জন্য। নদীর ও পারে একটি মাদ্রাসার বোডিং এ রান্নার কাজ নেন। সেই সুবাদে আমাকে আবার ঐ মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন আম্মা। সেখানে ২টি বিভাগ ছিল । একটি কেরাতখানা অপরটি হেফজ বিভাগ। আমি কেরাতখানায় ভর্তি হই। সেখানে আল মামুন নামের একটি ছেলে সাথে আমার একটি ছেলের সাথে আমার খুব ভাল বন্ধত্ব হয়। এক সাথে পড়াশুনা থাকা খাওয়া এমনকি রাতে একি বিছানায় ঘুমাতাম বোডিং ঘরে আমরা। এভাবেই চলছিল।সেই দিনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে এই মুর্হত্বে। তখন ছিল শীতকাল। ঐ এলাকার কাছাকাছি সুন্দরবনে একটি অংশ জুড়ে আছে। সেখানে মু্ন্সিগঞ্জের কলবাড়ী নামক স্থানের পাশদিয়ে সুন্দরবনের কোলঘেসে একটি সুরু নদী একেবেকে বয়ে গেছে। ভাটার সময় খুব অল্প পানি থাকে নদীতে। সেখান থেকে মাঝে মাঝে বন থেকে বাঘ চলে আসে বনে খাবারের অভাব দেখা দিলে লোকালয়ে। লোক মুখে শুনেছি বাঘের জালাতন মাঝে মাঝে অনেক বেড়ে যায়। মানুষের ছাগল গরু কখনও কখনও মানুষের উপরে ও হামলা করে শুনেছি। লোকমুখে অনেক কথা প্রচলিত আছে বাঘ সম্পার্কে। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন শুনলাম সত্য বন থেকে লোকালয়ে বাঘ পার হয়ে এসেছে। রাতের বেলায় খাবারের খোজে বাঘ এলাকায় মানুষের খোয়াড়ে গোয়াল ঘরে ঘুরে বেড়ায়। দিনের বেলায় বাঘ ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে।ছাগল গরু নিয়ে যায় আজ একটা কাল একটা। মানুষ দিনের বেলায় ভাল থাকলে ও রাত হলে ভয়ের ভিতরে রাতপার করে। আমরাও মাদ্রাসায় রাতে একা একা বাহির হইনা। রাতে খাওয়ার পর পোটকা (বাজি) ফুটাই, মাদ্রাসার ভাঙ্গা দরজা রশি দিয়ে বাঘের ভয়ে বেধে রাখি।একদিন শুনলাম বাঘ মারাপড়েছে । এর মধ্যে মশার উপদ্রপ অনেক বেশী ছিল । একারনে মশার কয়ে জ্বালাত আল মামুন। আগেই বলেছি আল মামুন আর আমি বোডিং ঘরে থাকতাম। ফ্লোরে থাকতাম ২জন। পায়ের দিকে থাকত বোডিংএর হাড়িপাতিল। একদিন রাতে আল মামুন মশার কয়েল জ্বালিয়ে পাতিলের ঢাকনার উপরে রাখল। বোডিং ঘরটি ছিল কেরাতখানার সাথে লাগানো। সেদিন যথারীতি প্রতিদিনে মত রাতের খাওয়া শেষে সব ছাত্ররা শুয়ে পড়ল। কেউ আস্তে আস্তে গল্প করছে আবার কেউ কোন কথা না বলে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। মামুন আর আমি ও এক লেপের ভিতরে ঘুমিয়ে পড়লাম। শীতের দিন চাদিকে নিরব হয়েগেল আস্তে আস্তে। তখন আনুমানিক রাত ২টা আড়াইটা বাজে। হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গেগেল ধোয়ার উৎকট গন্ধে। অন্ধকারে লেপের ভিতর থেকে মুখ বের করে দেখলাম আমাদের গায়ের লেপের উপরে আগুন জলছে দাউ দাউ করে। হঠাৎ মাথার ভিতরে বিদ্যুৎ খেলেগেল। চিৎকার করে আগুন আগুন বলে কালো ধোয়ার ভিতরে একলাফ দিলাম। সাথে সাথে কাঠের বেড়ার গায়ে গিয়ে পড়ে অনেক আঘাত পেলাম। অন্য ছাত্ররাও আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে লাগল। আশপাশ থেকে সাথে সাথে লোকজন আসল আগুন নিভাতে। অনেক চেষ্টার পরে আগুন নিয়োন্ত্রন করল। পরে জানতে পারলাম পাতিলের ঢাকনার উপর থেকে আল মামুনের জ্বালানো মশার কয়েল লেপের উপরে পড়ে আগুন লেগে ছিল।
সেদিনের পর থেকে ছাত্ররা আমাকে আগুন বলে ডাকত। এরপর রমযানে পর ঈদের ছুটিতে হল। ছুটির পরে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখলাম আমার ট্রেরাংটি নেই। অনেক খোজার পরে ট্রেরাংটি পেলাম কিন্তু ভাঙ্গা চেপ্টা অবস্থায়। মনখারাপ করে বাড়ীতে ফিরে আসলাম। বললাম আর পড়বনা। আব্বা আম্মা সবাই অনেক বুঝাল কিন্তু আমি অনড় আর ঐ মাদ্রাসায় পড়বনা। বাড়ীতে থাকতে লাগলাম।

চলবে...........
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×