সাম্যবাদ, এটি সমান অধিকার,সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্য একটি মতবাদ যা সবার জন্য নির্দেশ করে।অর্থাৎ সাম্যবাদ হলো এমন একটি ব্যাপার যেখানে একটি শ্রেনীহীন সমাজ ব্যাবস্থা থাকবে যার নিয়ন্ত্রন থাকবে এমন একজন ব্যক্তির ওপর যিনি থাকবেন রাষ্ট্রপ্রধান।আর এটা সম্পূর্ণভাবে অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা কেন্দ্রিক।এটাকে বলা হয় সমাজতন্ত্রের একটি উন্নত ও অগ্রসর রুপ।বিশ্বাস করা হয় যে সাম্যবাদ থাকলে ধনী গরীবের ব্যবধান থাকবে না। এখানে কায়েম থাকবে সকল পেশাজীবি মানুষের শাসন।ধারনা করা হয়, অন্য যে কোনো মতাদর্শের ব্যাবস্থা ও সমাজ ব্যাবস্থা থেকে এটা ভিন্ন এবং মানব ইতিহাসে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশী সম্পূর্ণ , প্রগতিশীল , বিপ্লবী ও যুক্তিসঙ্গত।
সাম্যবাদের স্তর দুটো,
১। উচ্চতরস্তর বা সম্পূর্ণ সাম্যবাদ।এতে রয়েছে কমিউনিজমের মূলনীতি," প্রত্যেকের কাছ থেকে সামর্থ অনুযায়ী, প্রত্যেকে চাহিদা অনুযায়ী"। অর্থাৎ শ্রম অনুসারে বণ্টন ছেড়ে সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে চাহিদা অনুযায়ী বণ্টনের দিকে।এখানে শ্রম একজন ব্যক্তি কম কিংবা বেশী দিতেই পারেন যার যার সামর্থ্য মোতাবেক তবে এটা কোন বিষয় নয়।মূল কথা হলো সবাই যার যার চাহিদা মোতাবেক পারিশ্রমিক পাবেন।
২। নিম্মতম বা সমাজতন্ত্র, যেখানে কোন নিজস্ব মালিকানা থাকবে না।ফলে উৎপাদন শক্তির সুপরিকল্পিত বিকাশে কোন বাধা থাকবে না।এর মূল লক্ষ্য জনগনের সচ্ছলতা বৃদ্ধি ও সমাজের প্রতিটি লোকের সার্বিক বিকাশ।
এখন সাম্যবাদকে আপনার কাছে খুব সুন্দর পদ্ধতি মনে হলেও সত্যিই কি এটা মানুষের যাবতীয় সকল সমস্যা থেকে মুক্তির পথ?
আসুন এবার একটু গভীরে যাওয়া যাক।মানুষের মাঝে স্রষ্টা কর্তৃক বিশেষ দুটো গুন বিদ্যমান।একটি সহযোগিতা আর অন্যটি প্রতিযোগিতা।সাম্যবাদ সহযোগিতার কথা বললেও অন্যটি কিন্তু ধনতন্ত্রের ওপর গুরুত্ব দেয়।ধনতন্ত্র এমন একটি ব্যাপার যার গুরুত্ব বিত্তশালীদের কেন্দ্র করে।ফলে অর্থহীনরা শোষিত শ্রেনীর মাঝে পড়ে যায়।আর এই জন্য সাম্যবাদের প্রতি চোখ দিতে হয় নির্বোধ বিশেষজ্ঞদের।তারা তখন মধ্যযুগীয় কমিউনের যুক্তি দাঁড় করায় যেখানে মানুষের বিশ্বাস , মূল্যবোধ , জীবনযাত্রার মান হবে একই ধরনের।এটা সুন্দর ভাবনা মনে হলেও এখানে ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা ব্যাহত হওয়ার শতভাগ শঙ্কা আছে।আবার একজন মানুষ পরিশ্রম করুক আকাশ সমান কিন্তু তার প্রয়োজন মোতাবেক পারিশ্রমিকই তাকে দেয়া হবে।তিনি কখনওই তার ন্যায্যতা দাবি করতে পারবেন না।এটাও অনেক বড় একটা সমস্যা।
এছাড়াও ভাবুন আপনি এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন ১০০ মন।প্রতি মন ধানের বাজার মূল্য ৪০ টাকা।কিন্তু আপনার ইচ্ছা হবে বাজারে প্রতি মন ধানে ১০ টাকা বেশী মুনাফা যেন অর্জন করতে পারেন।এখান থেকে প্রকাশ পায় মনুষ্য স্বভাবের একটি গভীরতম দিক - উচ্চাকাঙ্ক্ষা।মানুষ সব সময় আপন ক্ষমতার ওপর টিকে থাকতে চায়।আপন পরিশ্রমের চেয়ে দশগুন বেশী মুনাফা লাভের আকাঙ্ক্ষা মানুষের মনে দাপিয়ে বেড়ায় সর্বক্ষণ।আর এখান থেকেই শুরু হয় কে কার আগে যাবে বা প্রতিযোগিতা। আর এটাই হবে উৎপাদন শক্তির সুপরিকল্পিত বিকাশের পথে প্রধান অন্তরায় আমার বিশ্বাস।তাই অত ব্যাখ্যায় যেতে চাই না শুধু সংক্ষেপে বলতে চাই, আপনি যদি সাম্যবাদকে প্রতিষ্ঠা লাভ করাতে চান আপনাকে হতে হবে মার মুখী।হতে হবে প্রচন্ড ক্ষমতার অধিকারী।না হলে সাম্যবাদ কখনোই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।কারন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা মানুষের কাছে মহামূল্যবান সম্পদ।এটা কেই বা চাইবে ঘোলাপানিতে ছেড়ে দিতে?
সাম্যবাদ হলো ঘোলা পানি।কারন সাম্যবাদ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বিরোধী,একজনকে দিয়ে এক আকাশ পরিশ্রম করিয়ে নেবে কিন্তু তাকে তার ন্যায্য পারিশ্রমিক দিবে না, একজন শিক্ষক ও একজন মুচির মাঝে তফাৎ থাকবে না।কারন উভয়ের সম্মান থাকবে সমান সমান।তখন মুচি একজন শিক্ষক থেকে নিজেকে কোন অংশে কম মনে করবে না।সে ভাবতে বাধ্য হবে যে শিক্ষক ও তার জ্ঞান সমান সমান তাই তাদের সম্মানও সমান সমান।ফলে সে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে কোন উপদেশ গ্রহন করতে চাইবে না।ফলে তৈরি হবে সংঘাত।মূল কথা হলো একটা শ্রেনী ভিত্তিক সমাজ আছে বলেই পৃথিবীটা আজও শান্ত আছে। না হলে অনেক আগেই ধবংস হয়ে যেত।উপযুক্ত উদাহরন হলো,একজন ব্যাক্তি যিনি প্রধান শিক্ষক তার সম্মান ,তার অধিকার এবং বেতন অন্যান্য শিক্ষকদের তুলনায় বেশি ফলে সবাই তাকে মান্য করে।কিন্তু যখনই সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা হবে তখন সম্মান, অধিকার, বেতন সবার একই থাকবে যার ফলে কেউ কাউকে মানতে চাইবে না।আর এই জন্যই সাম্যবাদ হচ্ছে ধবংসের মূল।আমি জোর গলায় বলতে চাই, আমি সাম্যবাদ বিরোধী একজন মানুষ।
_মাহমুদুর রহমান।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৫৭