দুচোখে ঘুম নেই। প্রতিদিনই কাটছে হতাশা আর ব্যাঞ্জনায়।ভেবেছিলাম হয়তো খুব শীঘ্রই চলমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবো আমি,আমার মত হাজারও মানুষ।এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে গ্রামে এসেছিলাম।কিন্তু না।সারা দিন-রাত ঘর বন্দী থাকতে হচ্ছে।সন্ধ্যায় ইচ্ছে হয় একটু দোকান-পাট থেকে ঘুরে আসি।দোকানে গেলে অনেক মানুষ আছে যাদের সাথে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলা যাবে।আর তারই মাঝে একটু খানি স্বস্তি খুঁজে নিবো। কিন্তু না সেটা আর হয়ে উঠছে না।এটাকে বাধ্যতামূলক বলবো নাকি পরিস্থিতির শিকার বলবো আমি জানি না।কিন্তু ঘুরে ফিরে কথা একটাই যাওয়া যাবে না কোথাও। সময় যত গড়াচ্ছে আমার মন ততই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এই মনটা যেন পাতালের দিকে তলিয়ে যাচ্ছে।হারিয়ে যাচ্ছে সেটার অতল আঁধারে।
মোবাইলে জুম্মন সাহেব আমাকে এ সকল কথাই বলেছিলেন।আমি তাকে বলেছিলাম,আপনি ধৈর্য রাখুন জুম্মন সাহেব।গতকাল যে তরকারি দিয়ে ভাত খেয়েছিলেন আগামীদিন একই তরকারি দিয়ে ভাত খাবেন তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই।জুম্মন সাহেব বলেন সেটা অবশ্য ঠিক।কিন্তু মাহমুদ কি করে বোঝাই আমার কাছে এমন পরিস্থিতে ঘরবন্দী হয়ে থাকাটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে ।এক রোগ থেকে রক্ষা পেতে গিয়েকখন আরও কয়টা রোগ এসে দানাবাধে কে জানে!আমি জুম্মন সাহেবকে আর কিছুই বোঝাতে যাই নি। কারন আমার অবস্থা তার মতই। তারপরও একটি মাধ্যম আছে বলে এখনও হাল ছাড়ি নাই।আর সেটা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক , ব্লগ।আল্লাহর দয়ায়, এদুটোই আমার নিত্যদিনের পথচলার সঙ্গী।এখানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার আলোকে বিভিন্ন পেশা-শ্রেনীর মানুষ বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রদান করে থাকেন। আর সেগুলোর মাঝে নিজের ভাবনাগুলোকে মিলানোর চেষ্টায় মশগুল থাকি।
গত দুইদিন ধরেই মনটা খুব স্থবির হয়ে আছে।পত্রিকায় আজকের শিরোনামগুলো কেমন যেন বিষন্নতায় পূর্ণ।শিরোনামের ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রতিটি বিস্তারিত লেখাগুলো দুঃখভরাক্রান্ত আবেগ আর আতঙ্কে ভরা।যেমন- একটা ছেলে আত্মহত্যা করে।কারন ছেলেটির মা বাহিরে যেতে তাকে বাধা দিয়েছিলো।এতে ছেলেটি বড্ড ক্রোধান্বিত হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রন হারিয়ে অবশেষে এই বোকামীপনাটা করে বসে।এতে তার কি কোন লাভ হয়েছে?মাঝে দিয়ে বেচারী মা’কে কষ্টে ফেলে দিল সে।আবার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন না মানায় বড় ভাই আর তার বউ মিলে ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে।এখন তারা জেলে।আবার দুজন কৃষক লকডাউনে কিভাবে দিন পার করবে কিভাবে সংসার চালাবে এইভেবে আত্মহত্যা করে।দুধ কিনতে বের হওয়া এক যুবক পুলিশের লাঠির আঘাতে মারা গিয়েছে।আবার একদোকানি মাস্কের দাম কম করে বিক্রয় করায় পাশের দোকানদার তার নাক মুখ ফাটিয়ে দেয়।। আহারে মানুষ!কতটা কষ্টকর এই ঘটনা আর প্রেক্ষাপটগুলো।আমার বড্ড অসহ্য লাগে। গতকাল আবার একজন মহিলা এসিল্যান্ড বাবার বয়সী তিনজন বৃদ্ধলোককে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।কারন তারা ঘর থেকে রোজগাড়ের আশায় বের হয়েছিলো আর তার ওপর তাদের কারোরই মুখে মাস্ক ছিলো না।এদুটোই ছিলো তাদের অপরদাধ।কতটা নিম্ন মস্তিস্কের মানুষ এই মহিলা।তার মুখে ওয়াক থু।
আজ সারা পৃথিবীর মানুষ কত অসহায়!প্রান থাকতেও নিষ্প্রান প্রতিটি চেহারায় এক দিগন্ত মুমূর্ষুতার ছাপ স্পষ্ট।বুকফাটা হাহাকারে পরিপূর্ণ প্রতিটি মন মনন।কেউ কি কখনও ভেবেছিলো গতকাল তারা যেমন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলো আজ তাদেরকে এমন ভয়ানক একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে?আমরা মানুষ।আমরা খুবই আত্মকেন্দ্রিক।এক্ষেত্রে ধনী গরীব কোন ভেদাভেদ নেই।এই বিলাসিতার মাঝে থেকে আমরা নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ হারিয়ে ফেলি কিংবা ভুলে যাই।আমরা ভুলে যাই এই সমাজের নিকট,সমাজের প্রতিটি পেশা-শ্রেনীর মানুষের নিকট আমরা দায়বদ্ধ। হয়তো সামাজিকভাবে নয়তো অন্য যেকোনভাবে।আমরা ভুলে যাই মানুষের প্রতিফল তার কর্মের ওপর নির্ভরশীল।যে যেমন কর্ম করবে সে তদ্রুপ ফল ভোগ করবে।আর করোনা আমার কাছে তেমনি একটি প্রতিদান আল্লাহর পক্ষ থেকে।এটা গোটা বিশ্বকে নিশ্চুপ করে দিয়েছে। ইস্রায়েলের আগ্রাসন,মিয়ানমারের আগ্রাসন,এ আই এস আই এস এর আগ্রাসন,যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন,ভারতের আগ্রাসন সহ সব ধরনের অমানবিক আগ্রাসন থামিয়ে দিয়েছে করোনা।তাই সবরকম ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মানবতার স্বার্থে প্রত্যেকে এখন যার যার অবস্থান থেকে খুঁজে চলেছে মুক্তির সোপান।দিন-রাত এক করে গোটা পৃথিবী একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।সকলের উদ্দেশ্য একটাই , মুক্তি চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫০