somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হয়তো ভালো না বাসার গল্প

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ভালবাসার গল্প আর দশটা গল্পের মত নয়। একটু ভিন্ন। আর এটাকে ঠিক ভালবাসার গল্প বলা যায় কিনা ঠিক জানি না। তবে সব মানুষের জীবনে ভালবাসা আসে আর আমার জীবনেও এসেছিল। কলেজে আসার পরে একটু ভিন্ন পরিবেশের আমেজ পেলাম। যেহেতু গ্রাম থেকে এসেছি তাই একটা আজব অনুভূতিতো ছিলই। দেখতে হাবলার মত না হলেও স্মার্ট বলা যেত না। তাছাড়া এই সব ভাবার সময় ও ছিলনা। মেয়েদের সাথে কথা বলতে যদিও জড়তা ছিলনা তবে ক্লাসের কোনও মেয়েও আমাদের মত গ্রাম থেকে আসা দলছুটদের সাথে কথা বলতনা। যাই হোক নতুন অনেকের সাথে পরিচয় হল। আমার মত গল্প বই পড়া অনেককে ও পেলাম। ভালই যাচ্ছিল সময়। লাইব্রেরি কার্ড করিয়ে লাইব্রেরি থেকে বইপত্র নেওয়া শুরু করলাম। গল্প, কবিতা আর উপন্যাস। এইভাবেই “জীবনান্দ দাশ কাব্যসমগ্র” হাতে এলো। বেশির ভাগ কবিতাই বুঝতে কষ্ট হয়। কিন্তু ‘বনলতা সেন’ কবিতাটা কেন জানি ভালো লেগে গেল। আচ্ছা পাখির নীড়ের মত চোখ দেখতে কেমন? কারো চোখ কি এমন হতে পারে? পরের ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি পড়াশুনা বাদ দিয়ে সহপাঠিনীদের চোখের মধ্যে পাখির নীড়ের মত চোখ খুঁজতে লাগলাম। বরং ছেলেদের সাথে ওদের আচরণ খুব বেশি স্বাভাবিক বলে ওদের মাঝে আলাদা কিছু নজরে এলো না। একদিন ফিজিক্‌স প্র্যাকটিকাল ক্লাসে আমরা কেউই স্ক্রু গজের পিচের সংজ্ঞা পারছিলাম না। এমন সময় পেছন দিক থেকে কেউ একজন খুব চমৎকারভাবে আর স্পষ্ট উচ্চারণে বলে দিল। স্যার সেই মেয়ের খুব প্রশংসা করলেন। পাশের প্রিন্সকে ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় বললাম মেয়েটার কথা খুব সুন্দর। প্রিন্সের সাথে কলেজেই পরিচয় ,আমাদের পড়া বইয়ের ধরণ আর চিন্তা চেতনা বেশ মিলে যায়। আমরা বন্ধুই বলা চলে। ও বলল, কিরে হটাৎ মেয়েদের প্রশংসা? আমি কিছুটা লজ্জাই পেলাম। মেয়েদের বিষয়ে কথা আমার মুখে আসলেই মানায় না। প্রিন্স বলল, মেয়েটার চোখগুলো দেখ। বনলতা সেনের মত। সেই থেকে শুরু। প্রিন্স মাঝে মাঝে দুষ্টমি করার সময় আমাকে লজ্জা দেবার জন্য বলে, তোর বনলতা সেনের কি খবর? এইভাবে দুষ্টমি করতে করতে আমি এক সময় লুকিয়ে মেয়েটাকে লক্ষ্য করতে লাগলাম। মেয়েটা খুব সুন্দর সুন্দর ওড়না পরত। নীল, ফিরোজা, ময়ূরকণ্ঠী । ক্লাসের মাঝে মাঝে আমি হটাৎই এই সব লক্ষ্য করতাম আর নিজে নিজেই লজ্জা পেতাম। তবে ব্যাপারটা করতে ইচ্ছা করত আর বিচিত্র এক অনুভূতি হত যার নাম আমার কাছে অজানা ছিল। একদিন কোনও এক স্যার নাম ধরে রোলকল করায় জানলাম ওর নাম হাসিন। অর্থাৎ সুন্দরী। রোলও আমার ঠিক বিশজন পরে। আমি নিজে নিজে এইসব অদ্ভুত মিল খুঁজতে লাগলাম আর নিজে নিজেই লজ্জা পেতে লাগলাম। এইভাবেই কাহিনীটার সমাপ্তি হতে পারত। কিন্তু ফাজিল প্রিন্সের দুষ্টমিতে আমি একদিন ওর সাথে কথা বললাম। প্রিন্স আমার ব্যাপারটা লক্ষ্য করল, বুদ্ধিমান ছেলে।এরপর থেকে প্রায়ই খেপাত, সাহস থাকেলে গিয়ে কথা বল। একদিন লাইব্রেরিতে বই পড়ছিলাম ,আমি আর প্রিন্স । ও ঢুকে মেয়েদের রিডিং রুমের দিকে যাচ্ছিল। প্রিন্সকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আজকে কি প্র্যাকটিকাল ক্লাস হবে? – না। ঐ শুরু এবং শেষ। আমি বলবনা সিনেমায় যেমন দেখায় কিংবা প্রেমের উপন্যাসে আমরা যেমন পড়ি তেমন কিছু হয়েছিল। আমি নাওয়া-খাওয়া, পড়াশুনা এই সব কিছুই বাদ দেইনি কিংবা মরিয়া হয়ে উঠিনি। তবে যখনই ওকে দেখতাম যে অদ্ভুত অনুভূতি হত সেটা ঠিক লেখার মত না। আমি জানি সবাই প্রেমে পড়েনা আর অন্য অনেকের মত প্যারেডের কোণায় দাঁড়িয়ে গল্প করা ও আমার দ্বারা অসম্ভব। কলেজ থেকে যেদিন ট্রান্সক্রিপ্ট আনতে যাই সেদিন আমার পক্ষে অস্বাভাবিক এমন একটা কাজ করি। ট্রান্সক্রিপ্ট নেওয়ার সময় একটা ফর্মে সই করতে আর ফোন নাম্বার দিতে হয়। আমার বিশ ঘর নিচেই ওরটা ছিল। আমি বেশ আস্তে আস্তে সই করতে করতে ওর নাম্বারটা কয়েক বার পড়ে নিলাম। তারপর তাড়াহুড়া করে বেরিয়েই আমার ফোনে নাম্বারটা তুলে নিলাম। আমি এমন কাজ কেন করলাম আমি নিজেই জানি না। কিন্তু অপরিচিত এক মেয়ে যার নাম ছাড়া আর কিছুই জানি না তাকে ফোন করার মত আমি কখনই ছিলাম না। ঠিক করলাম নাম্বারটা শুধুই আমার ডাইরিতে লিখ রাখব। কিন্তু বাসায় এসে দেখি আমি বারো ডিজিটের একটা নাম্বার সেভ করেছি। ভালই হল কোনও দিন যদি আজকের মত মাথায় ভূতও চাপে তার পরেও কাউকে বিরক্ত করতে পারবনা। আমার বনলতা সেন নাহয় জীবনান্দের বনলতার মতই রহস্যময় আর কলেজজীবনের সুখের একটু অনুভূতি হয়ে থাক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×