somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানসিক রোগের চিকিৎসা ও কিছু ভাবনা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

#random
কদিন আগে এক ছোটভাই কাম কলিগের সাথে আড্ডা হচ্ছিল। কথার প্রসংগে সে বলল, ভাই আমার মনে হয় কি, একসময় বি বি এ নিয়ে মানুষের যেমন ক্রেজ ছিল, সবাই খালি দলবেঁধে বিবিএ করতে চাইত, এখন মেন্টাল হেলথ নিয়ে মেডিকেল সায়েন্সের লোকদের তেমন ক্রেজ দেখা দিয়েছে। কথাটা আমাকে বেশ ভাবালো। আসলেই কি তাই? ফেসবুকে একটু লেখা শেয়ার দেয়া, Hashtag Let's talk লিখে স্ট্যাটাস দেয়া আর ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া জিনিসটা কি এক ! আসলে নাহ । এমন যদি হত তাহলে ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপারট্মেন্ট , মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্ট এসবে ট্রেইনি , স্টুডেন্টদের অভাব থাকত না। আসলেই কি ব্যাপারটা অমন! মানসিক সমস্যা বলতেই যে পাগল বা বদ্ধ উন্মাদ চিন্তাটা বছরের পর বছর আমাদের মাথায় গেঁথে আছে এটা থেকে এত সহজেই কি আমরা মুক্তি পেয়ে গেছি? নাহ। ব্যাপারটা হয় কি, আমরা আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এসব নিয়ে কথা বলার যে জড়তা সেটা কাটিয়ে উঠেছি। এটাও খারাপ না । বলা যেতে পারে A step towards right direction. তবে আমাদের নাক সিটকানো ভাব, অবচেতন যে অবজ্ঞা সেটা এত সহজে যাবে না। তাই ব্যাপারটাকে হালের ক্রেজ বলে হালকা করে দেখার আসলে কিছু নেই।
আমি যখন মেডিকেল কমিউনিটির কারো সাথে কথা বলি, তখন বেশ চমৎকার চমৎকার সব মন্তব্যের মুখোমুখি হই। মাস দুয়েক আগে হলে আমিও বোধহয় এসব মন্তব্য করে বসতাম । ভাগ্যিস ডি এম সির সাইকায়ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর হেড প্রফেসর মামুন স্যার একজন অসাধারণ মেন্টর। ওনাকে নির্ভয়ে যেকোন প্রশ্ন করা যায়। ওনারা ৩০/৪০ বছর আগে যখন দুঃসাহস করে এই ফিল্ড তাতে এসেছিলেন তখন থেকেই এমন সব প্রশ্ন শুনে শুনে ওনারা অভ্যস্ত। তাই হেসে হেসে উত্তর দেন । বুঝিয়ে দেন। একটা কমন কথা শুনি যে , সাইকায়াট্রির রোগী ভাল হয় না। হ্যাঁ। ব্যাপারটা আসলেই সত্য। অনেক সাইকায়াট্রিক কন্ডিশনের রোগীর পুরোপুরি কিউর হয় না। কিন্তু এটা তো অন্য অনেক মেডিকেল স্পেশালিটির মতই। আমরা যখন একজন মেডিসিন স্পেশালিষ্ট এর কাছে যাই তখন কি কখনো প্রশ্ন করি যে হাইপার টেনশন কেন ভাল হয় না? কিংবা এন্দোক্রাইনোলিজিস্ট কে ডায়বেটিস এর ম্যাজিকাল কিউর সম্পর্কে কি কেউ জিজ্ঞেস করি? কিংবা নিউরোলজিস্ট কে এপিলেস্পি বা কনভালশান ডিসঅর্ডার এর কিউর নিয়ে কি প্রশ্ন করি? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করি না। একজন চিকিৎসকের কাছে রোগী যখন আসে তখন আমাদের লক্ষ হয় যে কিভাবে রোগীর কষ্ট কমানো যায়, তাকে কিভাবে যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসা যায় যাতে তিনি একজন সক্ষম মানুষ হিসেবে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের দায়িত্বগুলো ঠিকঠাকভাবে পালন করতে পারেন। সব কিছুর ম্যাজিক কিউর যদি চিকিৎসকেরা পারতেন তাহলে তারা তো আর চিকিৎসক হতেন না, ম্যাজিশিয়ান হয়ে যেতেন। পৃথিবীর বর্তমান জ্ঞানবিজ্ঞানের যেই সীমা তার প্রেক্ষিতে, বিভিন্ন গবেষনার ভিত্তিতে সর্বজন স্বীকৃত প্রচলিত যেই চিকিৎসা তাই চিকিৎসকেরা করে থাকেন। দুই হাজার দশ সালে আপনার হাতের যে মোবাইল আর দুই হাজার একুশের যেই স্মার্ট ফোন তার তুলনা করলেই আপনি বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন। চিকিৎসা যেহেতু একটা বিজ্ঞান তাই তার অগ্রযাত্রাও অনেকটা তেমন। তার চিকিৎসা বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে মানসিক রোগের চিকিৎসা ও তেমন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। মানসিক রোগ বা স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা যেসব অদ্ভুত প্রশ্ন করি সেগুলো যে কি পরিমাণ অদ্ভুত সেটা যাচাই করার জন্য আমাদের শুধু নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে যে মানসিক চিকিৎসাকে আমরা কি বিজ্ঞানের একটা অংশ হিসেবে ভাবছি কিনা। কেন কারো ডীপ্রেশন হয়, সাইকোসিস হয়, বাইপোলার মুড ডীসওরডার হয় এসব নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। অনেক কিছু জানা গেছে । অনেক কিছু আরো বিষদ ভাবে জানা প্রয়োজন। কিন্তু এই যে জ্ঞানের যে অপূর্ণতা সেটা তো শুধু এই শাখার জন্যই সত্য ব্যাপারটা তা না। মেডিকেল সায়েন্সের অসংখ্য রোগ এবং এর চিকিৎসা নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। ম্যাক্রো লেভেলে জানা গেলেও আরো ভাল ভাবে জানতে মাইক্রো লেভেলে জানতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রোজ কাজ করছে। জ্ঞানের এই অপূর্ণতা এবং জানতে চাওয়ার আগ্রহই আমাদের কে মানুষ করে। আর এই বিচারে অন্য কোন মেডিকেল স্পেশালিটির চেয়ে মেন্টাল হেলথ আলাদা না।
বছরের পর বছর আমাদের মধ্যে যে সাবকনশান্স প্রেজুডীস গুলো লুকিয়ে আছে সেগুলোই আমাদের এমন সব অদ্ভুত মতামত দিতে উদ্বুদ্ধ করে।
আমরা কোমর ব্যাথার জন্য ব্যায়াম করতে লজ্জা পাই না, ডায়বেটিস এর জন্য হাঁটতে লজ্জা পাই না, কিন্তু মানসিক সমস্যার জন্য সাইকোথেরাপি নিতে হবে ভাবলেই ভাবি , ওমা এটার কি দরকার আছে! শুধু শুধু কথা বলা কিভাবে চিকিৎসা হয়! আমরা আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে গুমরে গুমরে মরি, নিজে অসুখি থাকি, নিজের পরিবার ও কর্মক্ষেত্র কে অসুখি রাখি কিন্তু সাহায্য নিতে ভয় পাই। এই অসুখ আমাদের এমনভাবে একসময় পংগু করে ফেলে যে আমরা জীবনে যা কিছু অর্জন করতে পারতাম, যা কিছু পরিবার ও সমাজ কে দিতে পারতাম তার ধারে কাছেও যেতে পারি না। কেউ কেউ মরেও যাই। তবুও সাহায্য চাই না। পাছে লোকে কিছু বলে! আমি যদি মরে যাই, আমার জীবনের উদ্দিষ্ট লক্ষে নাই পৌঁছুতে পারি , আশেপাশের সবাইকে অশান্তিতে রাখি , নিজে অশান্তি তে থাকি তাহলে এই লোক কি বলবে সেটা আমাকে কি উপকার করবে! ব্যাপারটা এমন না যে আমার যদি কোন মেন্টাল হেলথ কন্ডিশন থাকে আমাকে ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানাতে হবে। কোন প্রয়োজন নেই যদি আমি কমফোর্টেবল ফিল না করি। কিন্তু আমাকে এটলিস্ট এতটুকু কমফোর্টেবল হতে হবে যাতে আমি নিজের জন্য নিজে সাহায্য চাইতে পারি। আশেপাশে যদি এমন কাউকে দেখি যার সাহায্য দরকার তাকে সাহায্য নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি ।
দিনশেষে সাইকায়াট্রি মেডীসিনের অন্য সব ব্রাঞ্চের মতই একটা সায়েন্স। এখানে আসতে হলে ঠিক ততটাই ভাল মানুষ হওয়া প্রয়োজন যেটা অন্য সব ব্রাঞ্চে গেলে প্রয়োজন। একজন রেডীওলজিস্ট এর যতটুকু ভাল হওয়া প্রয়োজন, একজন সার্জনের যতটুকু ভাল মানুষ হওয়া প্রয়োজন ঠিক তেমনি ভাবেই একজন মেন্টাল হেলথ প্রফেশনালদের ভাল মানুষ হওয়া প্রয়োজন। এখানে যারা আসে তারা পীর-ফকির না , এখানে দোয়া দুরুদ বা বুজুরকি দিয়ে চিকিৎসা হয় না। অন্য সব ব্রাঞ্চের মতই এভিন্ডেন্স বেইসড চিকিৎসা হয়। যতদ্রুত আমরা আমদের সাবকনশাস মাইন্ড থেকে এই বায়াস সরিয়ে ফেলব, এটাকে মেডিসিনের অন্য সব ব্রাঞ্চের মতই একটা সায়েনটিফিক ব্রাঞ্চ হিসেবে মনে করব ততই আমাদের জন্য ভাল। পরিশেষে শুধু বলতে চাই যে , আমি কোন স্পেশালিষ্ট না। আমি এই সাবজেক্ট সম্পর্কে কিছুই জানি না। এখানে যে প্রশ্নগুলো বা যে মন্তব্যগুলোর উত্তর দিলাম তার অনেকগুলো আমার নিজের মাঝেও ছিল। আমি বিভিন্ন জনকে এই প্রশ্নগুলো করে , নিজে ঘেঁটেঘুটে যা বুঝেছি তাই লিখার চেষ্টা করেছি। আরো সঠিক উত্তরের জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞরা তো আছেনই।
একটা ফাইনাল রিয়েলাইজেশন লিখে শেষ করতে চাই , একটু কন্ট্রুভারশিয়াল মনে হতে পারে। নিজ গুনে মাফ করে দেবেন।
" Psychiatry is like your mistress, it gives you solace but you can not acknowledge it due to societal pressure and stigma"
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৪৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×