১.
সবাই বলে কুসংস্কার বাংগালীকে পেঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু জনাব ইহা সত্য নহে। কুসংস্কার সমগ্র বিশ্বব্যাপীই ছড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে গেলো? আচ্ছা শুনুন তাহলে। আমার মা শ্রীলংকান। তামিল মুসলিম। উনাদের সমাজে এটা প্রচলিত যে সকালে কোনো মেয়ে চুলায় আগুন দিতে পারবে না। যদি দেয় তাহলে ওই মেয়ের/ওই পরিবারের সংসারে আগুন জ্বলবে তাই সকালে সবার আগে চুলায় আগুন দিবে পরিবারের কোনো পুরুষ আর যে পুরুষ আগুন দিবে চুলায় তার আয়ু বৃদ্ধি পাবে
আমার মা এই কুসংস্কার কঠিন ভাবে মেনে চলে। যার ফলে গত ১৬বছর ধরে চুলায় সকালে আগুন দেওয়ার কাজটা হয় আমার ভাইকে আর নয়তো বাবাকে করতে হয়। যেদিন সকালে ওরা এটা করতে চায় না সেদিন সকালে নাস্তা নাই
২.
গত দুই বছরে আমার বাবা দুইবার ব্রেন স্ট্রোক করে। প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো বাবা। আমি তখন মাত্র ৬ষ্ঠ শেমিস্টারে পড়ি। আমি এক রাতে গিয়ে মা'কে বললাম,"মা বাবার অবস্থা তো ভালো না। প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির খরচ তো তুমি জানোই। আমি ভাবছি সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে দিই।" মা গলার আওয়াজ সপ্তম আকাশে চড়িয়ে বললো,"এতো সাহস? এতো সাহস তোমার? তোমার বাবার একটু অসুখ কি হয়েছে আর তুমি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করেছো?? আজকে বলেছো বলেছো আর যেনো কোনোদিন না শুনি। তোমার বাবার চিন্তা তোমার করা লাগবে না,সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আর তোমার সেমিস্টার ফি যা লাগে তা আমি এবার দিয়ে দিবো। নেক্স সেমিস্টার থেকে ট্রাই করবা স্কলারশিপ এর/কোনো পার্ট টাইম জবের। কিন্তু পড়ালেখা ছাড়তে পারবা না।"
দুই দিন পর সকালে মা আমার হাতে ১৫হাজার টাকা দিলো সেমিস্টার ফি'র ফার্স্ট ইন্সটলমেন্ট দিতে। বিকালে বড় আপুর কাছে শুনলাম মা তার স্বর্ণ এর গয়না গুলো জুয়েলারি শপে রেখে বাবার চিকিৎসা আর আমার জন্য টাকা নিয়ে এসেছে
৩.
আমার মা মারা যায় যখন আমার বয়স চার। লিভার ক্যান্সারে মারা যান তিনি। আমার মায়ের পরিবারের মেয়েরা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বেশিদিন বাঁচে না। আমার মা যখন মারা যান তখন তার বয়স ৩৭বছর। কিছুদিন আগে আমার একমাত্র খালাও মারা গিয়েছেন। উনিও ক্যান্সারে,ব্লাড ক্যান্সারে মারা যান। উনার বয়স হয়েছিলো ৪০বছর।
মা মারা যাওয়ার ২বছর পর বাবা আবার বিয়ে করতে বাধ্য হন আমাদের ফ্যামিলির চাপে। বাবা তখন কুয়েতে ছিলেন,সেখানেই আমার এই শ্রীলংকান মায়ের সাথে পরিচয় আর বিয়ে। তারপর মা চলে আসলো বাংলাদেশে আর পিচ্চি আমি আর বাকি ভাই-বোনগুলোকে আপন করে নিলেন। এতোই আপন করে নিলেন যে নিজের কোনো সন্তানও আর নিলেন না। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেন,"ফুটবল টীম বানাবো নাকি?"
আজ সকালে মা'কে একটা শাড়ি গিফট করলাম মা দিবস উপলক্ষে। মা এতো খুশি হয়েছে যে শাড়িটা সাথে সাথেই পড়ে ফেললো আর বললো, "এই লুপু আমার ছবি তুলে দাও তো।" ছবি তুলে দিলাম। আর মা এখন ব্যস্ত সেই ছবি ইমো,ভাইবার দিয়ে শ্রীলংকা,দুবাই,ফ্রান্স,তাসমানিয়া তে তার আত্নীয়স্বজনদের পাঠাতে এই লিখে যে "আমার মেয়ে দিয়েছে এটা মা দিবসে আমাকে"। মুখে সে কি হাসি!!
পশ্চিমাদের এইসব দিবস সংস্কৃতি খুব একটা খারাপ না