বাংলাদেশ এমন একটি সম্ভাবনার দেশ যেখানে অনেক ক্ষেত্র অব্যাবহারিত অবস্থায় বিদ্যমান আছে। এই সমস্থ অব্যাবহারিত ক্ষেত্র গুলোকে সঠিক ব্যবহার ও সমন্বয় এর মাধ্যমে উত্তরন সম্ভব। এর জন্য দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এই রকম একটি ক্ষেত্র হচ্ছে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্র।
শাক সবজি চাষ করা ছাড়াও অনেক পুষ্টিকর শাক সবজি ও ফলমূল আনাচে কানাচে ও সবএ জন্ম হয় যা অনেকের চাহিদা মেটাতে সক্ষম । কিন্তু অজ্ঞানতার ও কূসংষ্কারের কারনে জনসাধারনের মধ্যে এইসমস্থ পুষ্টিকর শাক-সবজি ও ফলমূল খাবারের অভ্যাস তৈরী হয়নি। যারফলে আমাদের দেশে অধিকাংশ জনগন পুষ্টিহীনতায় ভূগছে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগন গরিব। ৪০% জনগন বেশ গরিব তার মধ্যে ১৫%-২৫% অতি দ্ররিদ্র বা আলট্রা পুওর(অতি দ্ররিদ্র বলতে বোঝাচ্ছি যাদের কাছে ১০ ডেসিম্যল জমির কম জমি আছে কিংবা যাদের বাসায় কোনো কর্মহ্মম পুরুষ নেই)। সারা বছর ধরে তারা তাদের চাহিদার তুলোনায় প্রয়োজনীয় খাবার খেতে পারে না। সাধারনত তারা প্রতিদিন যা খায় তা হছে কেবল ভাত আর সবজি আর কিছূ শাক আর মাঝে মাঝে প্রচূর কাঁচা বা লাল মরিচ দিয়ে বিভিন্ন রকম ভর্তা। তারা যা খায় তা তাদের নিজেদের কষ্টার্জীত উপার্জন যা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। যারফলে তারা অপুষ্টিতে ভুগছে।
কিন্তূ মূলকথা হচ্ছে তারা তাদের নিজেদের কষ্টার্জীত এই সাধারন খাবার যে পদ্ধতিতে খাচ্ছে তা তাদেরকে আরো অপুষ্টিতে ভোগাচ্ছে। যা সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করলে অনেকাংশে অপুষ্টি রোধ করা সম্ভব। এর জন্য বিদেশী সাহায্যের কোনো দরকার নেই। শুধু দরকার একটু সচেতনতার। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গনসচেতনতা।
নিন্মলিখিত খাদ্য প্রস্তূত করার বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখলে অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব বলে মনে হয় যা ধনী গরীব সকল পরিবারের জন্য প্রয়োজ্য।
১।খাদ্যপ্রস্তুত করনের প্রয়োজনীয় তৈজশপত্র ও উপকরনাদি বিশূদ্ধ পানি দিয়ে ভাল ভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
২।সকল ধরনের শাক সবজি ও ফল রান্নার পুর্বে খোসা সহ ধুয়ে নিতে হবে।
৩।ধোয়ার পর যথাসম্ভব খোসাসহ কাটতে হবে। বড় বড় টূকরা করে কাটতে হবে, কারন ঠিক খোসার নিচে ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে।
৪।কাটার পরপরই রান্না করতে হবে বা খেতে হবে। কেটে বেশীক্ষন রেখে দেয়া যাবেনা।
৫। খাদ্যবস্তু যথাসম্ভব ঢেকে রান্না করা উচিত।
৬। খাদ্য দ্রব্য অধিক উত্তাপে প্রস্তূত করা ঠিক নয়।১০০° সে. উপরে তাপ দেয়া যাবে না।
৭। খাদ্যদ্রব্য পানি দিয়ে রান্না করলে পরিমিত পরিমানে পানি দিতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দিয়ে পানি ফেলে দেয়া যাবে না।
৮। চাল পরিমান মত পানি দিয়ে রান্না করতে হবে। যাতে ভাতের মাড় ফেলে দিতে না হয়।
৯। অধিক সময় ধরে রান্না করা যাবে না। বেশীক্ষন ধরে রান্না করলে খাবারের রং,গন্ধ ও পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়।
১০। রান্নার সময় বারবার নারাচাড়া করা ঠিকনা।
১১। খাদ্য প্রস্তুতে খুব বেশী মশলা ব্যবহার করা উচিত না।
১২। খাদ্য প্রস্তুতে খাবার সোডা লবন বা সবাদ লবন ব্যবহার করা উচিত না।
১৩। রান্নার পর খাবার ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে।
১৪। খাদ্য কেনার পরপরই যথাসম্ভব পদ্ধতিতে সংরক্ষন করতে হবে। মাছ, মাংস অতিসত্বর ধুয়ে কেটে পরিস্কার করে ভালভাবে পানি ঝাড়িয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে। মাছ-মাংসের কোষের ভিতরে পানি থাকলে রেফ্রিজারেটরের ঐ পানি বরফএ পরিনত হয়ে কোষের নাইট্রোজেন নষ্ট হয়ে যায়।
১৫। যতদুর সম্ভব শাক-সবজি ও ফল কাঁচা খাওয়া উচিত এবং টাটকা অবস্থায় রান্না করা উচিত।
১৬। লবনের কৌটা চুলা থেকে দূরে রাখতে হবে। তাপের কারনে লবনের আয়োডিন কাজ করে না। লবনের কাজ শেষ হওয়ার পড় কৌটার মুখ ভাল করে বন্ধ করে রাখতে হবে।
আজকের লেখাটি যারা অল্পসম্পদের অধিকারী তাঁরা তাদের খাদ্যসস্পদের দ্বারা কিভাবে পুষ্টি রক্ষা করে রান্না করলে এবং সেই অনুযায়ী জীবিকা নির্বাহ করলে অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে সেই সম্পর্কে। সঠিক উপায়ে রান্না করে খাবার খেলে অপুষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আমাদের গরীব জনগোষ্টির জন্য এই সচেতনতাটুকূ বৃদ্ধির বিষয়টি তূলে ধরতে চেষ্টা করেছি।
নিয়ম গুলো মানলে সকলের স্বাস্থের জন্য ভাল। বিভিন্ন রকম অসুখ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে। ভাতের মাড় কিছূতেই ফেলা উচিৎ না। যদিও বা কেউ মাড় ফেলে খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারেন তবে বাসার কনিষ্ট বাচ্চাটিকে সুপ এর মত করে খাইয়ে দিলে শরীরের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভাতের মাড়কে ভাতের দুধ বলা হয় যা মায়ের দুধের (সর্বউৎকৃষ্ট খাবার শিশুদের জন্য) সাথে তুলনা করা হয়।
গর্ভবতী মা যদি প্রথম থেকেই এই নিয়ম মেনে চলে আর আমাদের শিশুদের আমরা যদি ঠিক মতন প্রয়োজনীয় খাবার দেই তাহলে আমাদের নিজেদের যতটুকূ খাদ্য সম্পদ আছে তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অনেকটা অপুষ্টি রোধ সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:২৭